রমেন দাস: এ যেন আর এক সুধা চন্দ্রনের গল্প! এক পায়ে বিশ্বজয়ের সুধা এখানে শর্মিষ্ঠা! পক্ষাঘাতগ্রস্ত শরীরের ভাঁজে ভাঁজে বিবর্তিত তাঁর অদম্য জেদ। শুধুই নাচের হয়ে বেঁচে থাকার তাগিদ! ‘আমি নাচব কী করে!’-নিরন্তর নৃত্যঅন্ত প্রাণ এক চিকিৎসকই আঁতকে উঠেছিলেন সেদিন। প্রায় এক দশক আগে মুহূর্তের এক ঝড়ে স্বাভাবিক থেকে বিশেষভাবে সক্ষম হয়েছিলেন চিকিৎসক শর্মিষ্ঠা সিনহা (Dr. Sarmistha Sinha), সেই তিনিই ফিরেছেন ফের। প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে নাচে ফিরেছেন আর জি করের শারীরবিদ্যা বিভাগের ‘ডেমোন্সট্রেটর’।
বর্তমানে তাঁর কাজ ‘অভয়া’র আর জি কর হাসপাতালে (RG Kar Hopsital)। ফিজিওলজি বিভাগে কর্মরত এই চিকিৎসক। ২০০০ সাল থেকে সরকারি চাকরি করছেন তিনি। ছোটবেলা থেকে নাচের প্রতি ভালোবাসা এবং কত্থক শিল্পী হিসেবে প্রতিষ্ঠার মধ্যেই অন্ধকার নামে ২০০৫’র ১৯ সেপ্টেম্বর। এক কন্যা সন্তানের জননী আচমকা মুখোমুখি হন দুর্ঘটনার। সেখানেই যেন শেষ হয় সব! সুস্থ-স্বাভাবিক শরীরে বাসা বাঁধে না পাওয়ার বেদনা। কলকাতার বেসরকারি হাসপাতাল, তারপর রিহ্যাবের পর্ব শেষ করে খানিকটা সেরে ওঠেন শর্মিষ্ঠা। কিন্তু তাঁর একাকীত্বে সঙ্গী হয় হুইলচেয়ার। যেখানে বসেই আজও কাজের সঙ্গেই নাচ নিয়ে স্বপ্ন দেখেন তিনি। আর জি করের কর্মী আবাসনের ছোট্ট ঘরের বাইরে ছড়িয়ে দেন তৃপ্তির আভা।
চিকিৎসক শর্মিষ্ঠা সিনহা বলছেন, ”আমি পেশায় চিকিৎসক হলেও নাচ আমার জীবন। যখন দুর্ঘটনার মুখোমুখি হই, প্রথমেই মনে হয়েছিল আমি নাচব কীভাবে! তারপর অনেক কিছু পেরিয়েছি। আজও চলাচলে শুধুই ভরসা হুইলচেয়ার। কলেজ ক্যাম্পাসে অনুমতি নিয়েই আমার ছাত্রীদের সঙ্গে চলে নাচের চর্চা। অনুষ্ঠান করি। হাফিয়ে যায়, অসুস্থ লাগে। তবুও মানসিক জোর থেকেই এগোই বারবার। অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, তবুও চলে লড়াই। নাচ আমাকে বেঁচে থাকার রসদ দেয় বারবার।”
বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবসে কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে (Victoria Memorial) এক অনুষ্ঠানেও থাকবেন শর্মিষ্ঠা। তাঁর কথায়, ”সেই দুর্ঘটনার সময় মনে করলেই কান্না পায়। আমি চিকিৎসার সঙ্গেই নাচে বুঁদ হয়ে থাকতাম। কিন্তু শরীরের জন্য সব ছাড়তে হয়েছিল, একটু ভালো থাকার জন্য চেষ্টা করছি আবার। মেয়ে রয়েছে, তাঁর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে।” উত্তরবঙ্গ ছাড়িয়ে আর জি করে বদলি নিয়েছেন তিনি। ২০১০ থেকে সেখানেই কর্মরত ওই চিকিৎসক। পাইকপাড়ার বাসিন্দার কথায়, ”শরীর দিচ্ছিল না, নির্দিষ্ট দপ্তরে আবেদন করি, ২০১২ সাল থেকে এই হাসপাতালের স্টাফ কোয়ার্টারেই থাকছি।”
বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস (International Day of Persons with Disabilities) আবহে ফের ফিরছেন তিনি। সমস্ত অবসাদের গল্পে যেন বাঁচার মন্ত্র শোনাচ্ছেন শর্মিষ্ঠা। যা শুনে অনেকেই বলছেন, ”বাধা থাকুক, সঙ্গে থাকুক এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণাও!”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.