বাবুল হক, মালদহ: কুমোরটুলিতে কাজ শেষ। এখন বাঁধরোডের ধারে অস্থায়ী স্টল বাঁধছেন। দেশি বিরিয়ানি তৈরি করবেন। উৎসবের দিনগুলিতে বিক্রি করবেন ফাস্টফুড। কাজ নেই, চাকরি নেই। পুজোয় যা রোজগার হয়, তা দিয়েই অনন্ত বাড়িতে মা-বাবা, ভাইবোনদের মুখে কিছুটা হাসি ফোটাতে পারবেন। লক্ষ্মীলাভের আশায় চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে জনা পাঁচেক তরুণের। কেউ গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ পাঠরত, তাঁদের কেউ কলেজ পড়ুয়া।
উচ্চশিক্ষার গণ্ডি টপকাতে গিয়ে অর্থাভাবে কেউ আবার কপালে ‘বেকার’ তকমা সেঁটে সারাবছর বাড়িতেই বসে থাকেন। প্রস্তুতি নিয়েও ভাগ্যে চাকরি জোটে না। হঠাৎ করে একজন তো বলেই ফেললেন, “ছবি তুলবেন না প্লিজ! বন্ধুবান্ধব দেখে নেবে। পুজোর ভিড়ে ছদ্মবেশে বিরিয়ানিটা বিক্রি করব। দু’পয়সার আশায়।” এঁরা কারা?
মালদহ শহরের কৃষ্ণপল্লি, শরৎপল্লি এলাকায় বাড়ি। পাঁচ বন্ধু। যেখানে সেখানে আড্ডা দিয়েই বছর কাটে। লটারি বিক্রির ভাবনা পছন্দ হয়নি। কলেজ পাশ করে ঠেলাগাড়ি? অসম্ভব। কোথাও দোকান ঘর ভাড়া নিলে ২৫-৩০ লক্ষ টাকা সেলামি দিতে হয়। সেটিও সম্ভব নয়। তবে এবার পুজোর মুখে লক্ষ্মী লাভের একটা লাইন পেয়ে গিয়েছেন তাঁরা। শহরের এক মৃৎশিল্পীর কারখানায় গিয়ে প্রত্যহ ৫০০ টাকা মজুরির বিনিময়ে কাজ শুরু করেছিলেন। সেখানে কখনও জল দিয়ে শক্ত মাটি নরম করেন। কখনও দেবীর কাঠামোয় মাটির প্রলেপ দিয়ে শিল্পীকে সাহায্য করেন। এভাবে কাজ করেই উৎসবের আনন্দ উপভোগ করেন তাঁরা। পুজোর মুখে টানা প্রায় তিন মাস কুমোরটুলিতেই ব্যস্ত ছিলেন। তাঁদের হাতের ছোঁয়ায় মৃম্ময়ী অক্লেশে চিম্ময়ী হয়ে উঠেছেন। ইংলিশবাজার শহরের বিগ বাজেটের পুজোর প্রতিমাতে রয়েছে তাঁদের হাতের ছোঁয়া, আর সেই হাতেই উৎসবমুখর মানুষের জন্য এই কদিন তৈরি করবেন এগ-চিকেন বিরিয়ানি।
কৃষ্ণপল্লির এক তরুণ বলছিলেন, “এই বছরই প্রথম এক সহৃদয় ব্যক্তির সাহায্য নিয়ে মৃৎশিল্পীদের কারখানায় পৌঁছে যাই। মাটির কাজ করি। মায়ের মূর্তি গড়ার কাজে শিল্পীকে সাহায্য করি। এতেই পুজোর কিছু বাড়তি উপার্জন হয়ে গিয়েছে। আমরাও উৎসবের আনন্দ উপভোগ করতে পারছি। এবার পুজোর মেলার ভিড়ে সুস্বাদু খাবার আর বিরিয়ানি তৈরি করে বিক্রি করব।” শুধু এই পাঁচ বন্ধুই নন, গোটা শহরজুড়েই সারি সারি দোকানে নতুন নতুন মুখের দেখা মিলবে। বেলুন, বাঁশি থেকে শিশুদের খেলনার অস্থায়ী পসরা সাজিয়ে শহরের রথবাড়ি মোড়, সুকান্ত মোড়, স্টেশন রোড এলাকায় বসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বহু বেকার যুবক। দেশবন্ধুপাড়ার এক কলেজ পড়ুয়া সৌমেন রায় বলেন, “পুজো দেখাও হবে, বাড়তি কিছু উপার্জন হবে। যে মালগুলি শেষে বিক্রি হবে না, পড়ে থাকবে সেগুলি পাইকারি ব্যবসায়ী ফেরত নিয়ে নেবেন। ফলে ঝুঁকি থাকছে না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.