Advertisement
Advertisement

Breaking News

পাকা বাড়ি

ভোট আসে যায়, আদিবাসী এলাকায় পাকা বাড়ির স্বপ্নপূরণ অধরাই

বল্লভপুরের আদিবাসী গ্রামের বাসিন্দারা অপেক্ষার প্রহর গুনছেন৷

After several elections concrete house still a dream
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:April 30, 2019 2:12 pm
  • Updated:April 30, 2019 2:31 pm

দীপঙ্কর মণ্ডল, বোলপুর : ‘আমার পানে দেখলে কি না চেয়ে/ আমি জানি, আর জানে সেই মেয়ে’। বীরভূমে ভোটের দিন শ্রান্ত, ক্লান্ত শরীরে একপায়ে দাঁড়ানো
তালগাছের ছায়ায় দাঁড়িয়েছিলাম। বল্লভপুর সিবি বিদ্যালয় বুথে লম্বা লাইন। সংখ্যাগরিষ্ঠ আদিবাসী। এই দুপুরেই একটা তক্তপোশের উপর বসে কী যেন পড়ে যাচ্ছে মেয়েটি৷ ভোটের দিকে তার ভ্রূক্ষেপ নেই৷
কাছে যাই। বলি, “তোমার বুঝি ভোট দেওয়া হয়ে গিয়েছে?” হরিণ চোখের মেয়েটি হেসে ওঠে। বলে, “তুমি বুঝি ভোট করতে এসেছ? আমি তো সবে উচ্চমাধ্যমিক দিলাম। ভোট দেব সামনের বারে।” ভাঙাচোরা বাড়ির মাটির মেয়ের প্রতি কৌতূহল তৈরি হয়। অনুমতি নিয়ে বসে পড়ি তক্তপোশে। আদিবাসী সাঁওতাল পরিবারের এই মেয়ের নাম ফুলমণি সোরেন। বাবা শঙ্কর ও মা সুমি কখনও স্কুলে যাননি। বিনুরিয়া গার্লস হাইস্কুল থেকে এবার উচ্চমাধ্যমিক দিয়েছে ফুলমণি। উঠোনে মাছ কুটছিল বোন চাঁদমণি। তাকেও ডাকলাম। জানাল, সে একই স্কুলে এগারো ক্লাসে পড়ে। আরও এক বোন আছে, যে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ছোট ভাই পড়ে ক্লাস টু-তে। দু’চোখ ভরা স্বপ্ন দুই বোনের। পরিবারে অসীম দারিদ্র। পরিবারে ছ’জনের পেটে ভাত জোগাড়ে চাল বাড়ন্ত। একবেলা খেয়ে বা না খেয়ে উচ্চশিক্ষার স্বপ্নে বিভোর দুই বোন।

                                     [ আরও পড়ুন: বিয়ের বেশেই ভোটের লাইনে, দায়িত্ব পালনে অন্যদের উৎসাহ দিলেন দুই নববধূ]

বাবা-মা ভোটের লাইনে। এই আদিবাসী পাড়ায় কখনও কোনও নেতাকে দেখেনি ফুলমণি-চাঁদমণি। এলাকার মাটির দেওয়ালে শাসকদলের প্রচার ছিল। তার উপর সযত্নে মাটির প্রলেপ পড়েছে। বল্লভপুরের এই আদিবাসী গ্রামে ভোট নিয়ে উত্তেজনার লেশমাত্র নেই। তাহলে এত লম্বা লাইন কেন? এক স্থানীয় বাসিন্দা জানালেন,
“ভোট দিলে না কি পাকা বাড়ির টাকা আসে। সেই আশায় সবাই ভোট দেয়। ভোটের পর ভোট যায়। কিন্তু বাড়ি আর আসে না।” ফুলমণি-চাঁদমণি রাজনীতি বোঝে না। স্কুল থেকে সাইকেল পেয়েছে তারা। তা যে ‘সবুজসাথী’ প্রকল্পের, তাও জানে না দুই সহজিয়া কিশোরী। নিজেদের মধ্যে কী যেন বলে তারা।

Advertisement

                        [ আরও পড়ুন: মৃত্যুর জবাব ইভিএমে, পঞ্চায়েত ভোটে নিহত দিলদারের স্মৃতি নিয়েই ভোটদান পরিবারের]

বড় বোন বলে, “আপনি প্রথমবার এসেছেন। একটু চা খাবেন?” না বলার মতো স্পর্ধা দেখাতে পারলাম না। তখন জানতামই না, ঘরে কিছুই নেই।
দোকান থেকে চা,চিনি আনতে হবে। মেজবোন সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে যায়। কড়া রোদে পুড়ে ফিরে মাটির উনুনে চা বসে। গভীর আন্তরিকতায় গ্লাস ভর্তি কড়া লিকার আসে। তৃপ্তির সঙ্গে চুমুক দিই। কথা এগোয়। ফুলমণি বলে, “মাধ্যমিকে ভালমতো পাস করেছি। আর কয়েক দিন পরে উচ্চমাধ্যমিকের ফল। নিশ্চয়ই পাস করব। কলেজে পড়ব।” পাড়ার মেয়েদের ঝপাঝপ বিয়ে হয়ে যায়। বাবা দিনমজুর। মা একটি প্রতিষ্ঠানে ফাইফরমাশ খাটেন। যা সামান্য আয় হয়, তাতে
চলে না। ফুলমণিও ফাইফরমাশের কাজে লেগেছে। তবে দুই বোনের একটাই ভরসা, তাদের বাবা-মা বিয়ের কথা বলে না। কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়য় শেষে নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে চায় তারা। আদিবাসী পরিবারের প্রথম প্রজন্মের দুই পড়ুয়ার জেদ ও আত্মবিশ্বাস নগর সভ্যতার গায়ে যেন ঔদ্ধত্যের চাবুক চালায়।

Advertisement

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ