দেবাশিস কর্মকার: চলতি সপ্তাহে ভারতের অভ্যন্তরীণ মূলধন বাজারের গতিপথ অনেকটা নির্ভর করবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসাবে দ্বিতীয় মেয়াদের শপথ গ্রহণ এবং পরবর্তী নীতি ঘোষণার উপর। বাজার বিশেষজ্ঞরা এমনটাই মনে করছেন। সোমবার (২০ জানুয়ারি) আনুষ্ঠানিকভাবে আমেরিকার ৪৭তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে কার্যভার গ্রহণ করেছেন। গত সপ্তাহে বারবার হোঁচট খেলেও ‘সু-সম্ভাবনা’র প্রত্যাশায় সোমবারই দুই শেয়ার সূচক ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। বাজার বিশ্লেষকরা আশা করছেন যে ভারতীয় পণ্যের উপর পূর্বে উল্লিখিত পারস্পরিক কর-সহ তাঁর বাণিজ্য নীতির সিদ্ধান্তগুলি বিশ্ব বাণিজ্য গতিশীলতাকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এই ধরনের পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে, ভারতীয় শেয়ার বাজারে একটি সংশোধন শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
বস্তুত, ট্রাম্পের বাণিজ্য শুল্ক এবং বিশ্ব বাণিজ্যের উপর তার প্রভাবের দিকে বিশ্বব্যাপী নজর রয়েছে। এর প্রভাব পড়তে পারে ভারতের বাজারে। বলা হচ্ছে, ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন আরও শক্তি ক্ষেত্রে (Energy Sector) সহযোগিতা বাড়তে পারে। ট্রাম্পের অভ্যন্তরীণ তেল, গ্যাস এবং কয়লা উৎপাদনের উপর ট্রাম্প জোর দিলে, তার জেরে বিশ্বব্যাপী তেলের দাম স্থিতিশীল করতে সহায়ক হবে। বিশেষ করে ভারতের ক্রমবর্ধমান শক্তির প্রয়োজনীয়তার বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে এই ক্ষেত্রটিতে লাভ বাড়তে পারে। ভারত তেল ও গ্যাসের বড় আমদানিকারী। ফলে আমদানি খরচ কমলে ভারত লাভবানই হবে। কিন্তু গ্রিন এনার্জির জন্য খুব সুখবর নয়। ট্রাম্প পুনর্নবীকরণ শক্তির বিরোধী। কাজেই ভারত থেকে যে সব সংস্থা আমেরিকায় সোলার মডিউল রপ্তানি করে থাকে, তাদের সামনে এটি চ্যালেঞ্জের হবে। কিন্তু, অন্যদিকে আবার ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ বাণিজ্য নীতিতে ভারতের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। ডলার শক্তিশালী হলেও তার লাভ ভারতের বিনিয়োগকারীরা এই ক্ষেত্রে না-ও পেতে পারে। সেইসঙ্গে, ট্রাম্প প্রশাসন আমেরিকা ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কে কম উৎসাহী হতে পারে, যা প্রযুক্তি এবং প্রতিরক্ষার মতো ক্ষেত্রে সহযোগিতা এবং বিনিয়োগের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। তথ্যপ্রযুক্তি (IT) ক্ষেত্রের জন্য ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখা না হলেও ডলার বৃদ্ধি পেলে ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি তার সুবিধা পাবে।
গত সপ্তাহে, বিএসই সেনসেক্স ৭৫৯.৫৮ পয়েন্ট কমেছে, যেখানে এনএসই নিফটি ২২৮.৩ পয়েন্ট কমেছে, যা সতর্ক বিনিয়োগকারীদের মনোভাব প্রতিফলিত করে। এফপিআই এবং দেশীয় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের (ডিআইআই) বিরোধী অবস্থান নেওয়ায়, বাজারের অস্থিরতা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলির আশঙ্কা, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নীতি বাণিজ্যে পাঁচিল তুলে রপ্তানি-সহ ভারতের অর্থনীতির জন্য প্রতিকূলতা সৃষ্টি করতে করতে পারে। তাই তাদের মধ্যে শেয়ার বিক্রির হিড়িক পড়েছে। সূচকের পতনের অন্যতম কারণ এটি। তবে, শুধু ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনই নয়, বেশিরভাগ বড় সংস্থার তৃতীয় ত্রৈমাসিকের আয়ব্যয়ের হিসাব প্রকাশ, আসন্ন কেন্দ্রীয় বাজেট, আন্তর্জাতিক বাজারে অপিরিশোধিত তেলের দাম এবং ডলারের সাপেক্ষে টাকার দাম পড়া– ইত্যাদি বিষয়গুলিতেও বাজারের গতিপথ নির্ভর করবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.