GIFT সিটি। অর্থাৎ গুজরাট ইন্টারন্যাশনাল ফিনান্স টেক সিটি। গান্ধীনগরের এই প্রতিষ্ঠান আদপে একটি স্পেশাল ইকোনমিক জোন তথা SEZ। তবে এটি বিশেষ শ্রেণির বিনিয়োগকারীর জন্য একটি আদর্শ গন্তব্যও বটে। এই নিয়ে বিস্তারিত জানালেন সার্টিফায়েড ফিনান্সিয়াল প্ল্যানার এবং কর্ণধার, ওয়েলম্যাক্স ক্যাপিটাল, সুজন দাস
GIFT সিটি (গুজরাট ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স টেক-সিটি) হল একটি স্মার্ট সিটি এবং একটি বৈশ্বিক আর্থিক কেন্দ্র, যা গুজরাটের গান্ধীনগরে অবস্থিত। এটি একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (SEZ) যা আন্তর্জাতিক এবং দেশীয় বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে তৈরি করা হয়েছে, বিশেষ করে আর্থিক পরিষেবা, ব্যাঙ্কিং, আইটি এবং সম্পর্কিত ক্ষেত্রগুলিতে। GIFT সিটিতে আছে উন্নত পরিকাঠামো। বিশেষত যাঁরা আন্তর্জাতিক আর্থিক পরিষেবা পরিচালনা করতে চান, তাঁদের জন্য উপযুক্ত।
এখানে GIFT সিটির বিনিয়োগ ব্যবস্থার বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হল :
১. GIFT সিটির মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ:
ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স সার্ভিসেস সেন্টার (IFSC) : GIFT সিটি ভারতীয় প্রথম IFSC (International Financial Services Centre)-এর হোস্ট, যা বৈশ্বিক মানদণ্ডে ব্যাঙ্কিং, বিমা, পুঁজি বাজার এবং পণ্য বাণিজ্য পরিষেবা প্রদান করতে সক্ষম।
আধুনিক পরিকাঠামো : GIFT সিটি উন্নত পরিকাঠামো-সহ তৈরি, যার মধ্যে স্মার্ট গ্রিড, জল পুনর্ব্যবহার ব্যবস্থা এবং উন্নত টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা রয়েছে।
মাল্টি-মোডাল কানেকটিভিটি: সিটি রোড, রেল এবং বিমান পথে ভালভাবে সংযুক্ত, যা আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয়।
টেকসই উন্নয়ন: GIFT সিটি পরিবেশবান্ধব নীতি অনুসরণ করে, যেমন নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার, জল সাশ্রয় এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা।
২. বিনিয়োগের সুযোগসমূহ :
ব্যাঙ্কিং ও আর্থিক পরিষেবা : GIFT সিটিতে আছে উন্নত পরিকাঠামো। বিশেষত যঁারা আন্তর্জাতিক আর্থিক পরিষেবা পরিচালনা করতে চান, তঁাদের জন্য উপযুক্ত। বিদেশি ব্যাঙ্ক, বিনিয়োগ ব্যাঙ্ক, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি, বিমা প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠানের শাখা খোলা যেতে পারে।
তথ্য প্রযুক্তি (IT) ও IT-সক্ষম সেবা : GIFT সিটিতে টেক কোম্পানি, বিশেষ করে ফিনটেক স্টার্টআপগুলির জন্য অপারেশন চালানোর সুযোগ রয়েছে।
রিয়েল এস্টেট : GIFT সিটিতে অফিস স্পেস, হোটেল, এবং আবাসিক প্রকল্প উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে।
বাণিজ্য ও এক্সচেঞ্জ: GIFT সিটিতে ভারতীয় প্রথম আন্তর্জাতিক শেয়ার বাজার, যেমন NSE IFSC ও BSE IFSC, যা বিদেশি মুদ্রা, পণ্য এবং অন্যান্য বৈশ্বিক আর্থিক যন্ত্রের লেনদেনের সুবিধা প্রদান করে।
৩. নিয়ন্ত্রক এবং কর সুবিধা:
কর সুবিধা : GIFT সিটিতে ব্যবসা পরিচালনাকারী কোম্পানিগুলি বিভিন্ন কর সুবিধা লাভ করতে পারে, যেমন:
ক। IFSC-এ লেনদেন পরিচালনা করলে মূলধন লাভে কর মকুব।
খ। কিছু ব্যবসার জন্য ১০ বছরের জন্য কর ছুটি।
গ। পরিষেবা এবং পণ্য ব্যবহারে GST মকুব।
ঘ। কোম্পানির জন্য করের হার কম।
আন্তর্জাতিক আইনি এবং নিয়ন্ত্রক কাঠামো: GIFT সিটি IFSC-এর আওতায় পরিচালিত হয়, যা আন্তর্জাতিক মান অনুসারে আইনি ও নিয়ন্ত্রক কাঠামো প্রবর্তন করে, এবং এটি International Financial Services Centres Authority (IFSCA) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল (SEZ) স্ট্যাটাস: GIFT সিটি SEZ হিসাবে সুবিধা প্রদান করে, যেমন রপ্তানিমুখী ব্যবসার জন্য আয়কর মকুব এবং কাস্টমস শুল্ক ছুটি।
৪. বিনিয়োগের ব্যবস্থা:
সরকারী-ব্যক্তিগত অংশীদারি (PPP): GIFT সিটি অবকাঠামো, প্রযুক্তি, এবং রিয়েল এস্টেট উন্নয়নে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অংশীদারিত্বকে উৎসাহিত করে।
আর্থিক এবং ব্যাঙ্কিং বিনিয়োগ: বৈদেশিক প্রতিষ্ঠান ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান GIFT সিটিতে বিনিয়োগ করতে পারে, কারণ এখানে নিয়ন্ত্রক পরিবেশ বেশ অনুকূল।
বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (FDI): GIFT সিটি বিভিন্ন খাতে ১০০% FDI অনুমোদন করে, যা আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় করে তোলে।
৫. বিশেষ আর্থিক পণ্য:
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য: বিনিয়োগকারীরা এমন আর্থিক পণ্যগুলিতে অংশগ্রহণ করতে পারেন, যা ভারতীয় অভ্যন্তরীণ বাজারে পাওয়া যায় না, যেমন বিদেশি মুদ্রা লেনদেন, ক্রস-বর্ডার সিকিউরিটিজ লেনদেন এবং বৈশ্বিক পণ্য বাণিজ্য।
রূপি-নির্ধারিত বন্ড: GIFT সিটি রূপি-নির্ধারিত বন্ড ইস্যু করার একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদান করে, যা আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের ভারতীয় মুদ্রায় বিনিয়োগের সুযোগ দেয়।
৬. মূল নিয়ন্ত্রক সংস্থা :
International Financial Services Centres Authority (IFSCA): IFSCA GIFT সিটির IFSC নিয়ন্ত্রণ করে এবং নিশ্চিত করে যে আর্থিক কার্যক্রম আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে হচ্ছে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI): আরবিআই GIFT সিটিতে ব্যাঙ্কিং এবং আর্থিক পরিষেবা চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি প্রদান করে। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া (SEBI): সেবি পুঁজি বাজার নিয়ন্ত্রণ করে এবং সিকিউরিটি আইন অনুসারে GIFT সিটিতে কার্যক্রম চালানো নিশ্চিত করে।
৭. GIFT সিটিতে বিনিয়োগ কীভাবে করবেন:
ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করা: যে কোম্পানিগুলি বিনিয়োগ করতে চায়, তারা গুজরাত ইন্টারন্যাশনাল ফিনান্স টেক-সিটি কোম্পানি লিমিটেড (GIFTCL) এর কাছে আবেদন করতে পারে।
রিয়েল এস্টেট: বিনিয়োগকারীরা অফিস স্পেস, আবাসিক ইউনিট বা জমি ক্রয় বা লিজ নিতে পারেন। বিনিয়োগকারীরা বৈশ্বিক আর্থিক বাজারে অংশগ্রহণ করতে পারেন এবং IFSC-এর মাধ্যমে কর সুবিধা উপভোগ করতে পারেন।
৮. ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা:
GIFT সিটি ভবিষ্যতে একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক কেন্দ্র হয়ে উঠবে, যা আরও আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ফিনটেক কোম্পানি এবং বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করবে।
উন্নত অবকাঠামো এবং সমর্থনকারী নিয়ন্ত্রক পরিবেশের উন্নতির মাধ্যমে এটি একটি আরও আকর্ষণীয় বিনিয়োগ-গন্তব্য হয়ে উঠবে।
সারসংক্ষেপ : GIFT সিটি উন্নত পরিকাঠামো, কর সুবিধা, এবং আন্তর্জাতিক মানের নিয়ন্ত্রক কাঠামো প্রদান করে, যা আর্থিক পরিষেবা এবং প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী-কোম্পানিগুলির জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। এটি ভারত এবং বৈশ্বিক আর্থিক বাজারে প্রবেশের জন্য একটি উপযুক্ত জায়গা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.