Advertisement
Advertisement

Breaking News

ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় বেলগাছের তলায় দেবীকে বরণ করে শুরু শ্রীমানিদের পুজো

একসময় নীলকণ্ঠ পাখি উড়িয়ে দশমীতে প্রতিমা নিরঞ্জনে জেতেন শ্রীমানিরা।

This Kolkata Durga Puja is a must visit

ছবিতে শ্রীমানি বাড়ির দুর্গাপুজো।

Published by: Shammi Ara Huda
  • Posted:October 8, 2018 5:30 pm
  • Updated:October 8, 2018 5:30 pm

সেই কবেকার কথা। আজও একইরকম ঐতিহ্য বহন করে চলেছে বনেদি বাড়ির পুজো। কত না-জানা ইতিহাস কথা বলে পুজোর দালানে। কলকাতা, শহরতলি ও জেলায় ছড়িয়ে রয়েছে এমন বহু পুজো। উমার ঘরে ফেরার খবর জানাতে শ্রীমানিদের বাড়ি থেকে উড়ে যেত নীলকণ্ঠ পাখি। এখন তা না থাকলেও ঐতিহ্য বহমান।

শুভঙ্কর বসু: ঐতিহ্য আর বনেদিয়ানার মিশেলে আজও উমার বন্দনায় মাতেন সুকিয়া স্ট্রিটের শ্রীমানি পরিবার। যথাসম্ভব আভিজাত্যে আজও ঘরের মেয়ে দুর্গাকে বরণ করে নেন শ্রীমানিরা। সন্ধিপুজোয় বন্দুক ফাটানো কিম্বা উমার ঘরে ফেরার খবর জানাতে নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানো। সবই হত একসময়। নিয়মের গেরোয় এখন আর সে সব না হলেও পুজোর জৌলুসে এতটুকু ভাটা পড়েনি।

Advertisement

বনেদিয়ানা আর যথাসম্ভব আভিজাত্যে আজও ঘরের মেয়ে দুর্গাকে বরণ করে নেন শ্রীমানিরা। শ্রীমানিদের পুজো হয় বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতে। রথের দিন কাঠামো নির্মাণ। কাঠামো পুজো থেকেই ঢাকে কাঠি পড়ে। প্রতিমা হয় ডাকের সাজে। মহালয়ার পর থেকেই শুরু হয়ে যায় বোধনের উপাচার। দেবীর ঘট স্থাপন করা হয়৷ ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় বেলগাছের তলায় দেবীকে বরণ, আমন্ত্রণ, অধিবাস হয়৷ তারপর প্রতিমার সামনে ঘট স্থাপন ও তাতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করা হয়৷ এরপর হয় কলাবউ-এর উপাচার। বিভিন্ন মিষ্টান্ন সহযোগে দেবীকে নৈবেদ্য দান করা হয়। শ্রীমানি বাড়ির কুমারী পুজো আর সন্ধিপুজো দেখবার মতো। তবে কালের নিয়মে অনেক প্রথাই বাদ দিতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রেমাঙ্কুর। তিনি বলেন,  “এক সময় সন্ধিপুজোর সময় বন্দুক ফাটানোর চল ছিল। এখন তা তুলে দেওয়া হয়েছে।”  সাবর্ণ রায়চৌধুরি কিংবা শোভাবাজার রাজবাড়ির মতো বিসর্জনের আগে নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানোর চল ছিল শ্রীমানি বাড়িতেও। মহেন্দ্র শ্রীমানি মারা যাওয়ার পরও এই প্রথা চালু রেখেছিলেন তাঁর উত্তর পুরুষরা। কিন্তু নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানো নিষিদ্ধ হওয়ার পর থেকে সে প্রথা বাদ গিয়েছে।

Advertisement

[অভাবের সংসারে স্বপ্নাদেশ, তিন দশক পর মাতৃ আরাধনা শুরু পাল পরিবারে]

উল্লেখ্য, শ্রীমানি বাড়ির পুজোর অন্যতম আকর্ষণ কুমারী পুজো। কুমারী হল দেবী দুর্গার পার্থিব প্রতিনিধি। সাধারণত অষ্টমীর দিন হয় কুমারী পুজো। সব নারীর মধ্যেই আছে দেবী দুর্গার শক্তি। তাই নারী পূজনীয়, এই দৃষ্টিকোণ থেকে কোনও কুমারীকে দেবীর আসনে বসিয়ে কুমারী পুজো করা হয়। এ যেন কুমারীরূপে বিশ্বের নারীশক্তি,  বিশ্বমাতৃশক্তির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন। আবার বলা যায় কুমারী কথার সাধারণ অর্থ কন্যা। দেবীপুরাণ মতে,  কুমারী দেবীরই প্রতীক। কুমারী পুজোর উৎস সন্ধান করতে গিয়ে বৃহদ্ধর্মপুরাণে উল্লেখ পাওয়া যায়। দেবতাদের স্তবে প্রসন্ন হয়ে দেবী চণ্ডিকা কুমারী কন্যারূপে দেবতাদের সামনে দেখা দিয়েছিলেন। দেবীপুরাণে বিস্তারিত এ বিষয়ে উল্লেখ আছে। তবে অনেকে মনে করেন যে, দুর্গাপুজোয় কুমারীপুজো সংযুক্ত হয়েছে তান্ত্রিক সাধনামতে। তবে বেলুড় মঠের রীতি অনুসরণ করেই কুমারী পুজো হয় শ্রীমানি বাড়িতে।

প্রেমাঙ্কুর শ্রীমানি জানাচ্ছিলেন,  প্রকৃত অর্থে এই পুজোর বয়স ২৩৭ বছর। শ্রীমানিদের আদি বাড়ি ছিল রামচন্দ্র বোস লেনের কাছে। সেখানে বহু আগে থেকেই দুর্গাপুজো হত। এরপর ব্যবসায় প্রতিপত্তি বাড়তেই মহেন্দ্র চলে আসেন সুকিয়া স্ট্রিটে। ১৯১১ সালে নতুন বাড়ি তৈরি করে পুজোর সূচনা করেন তিনি। সেই শুরু। মহেন্দ্রর চালু করা পুজোর পরম্পরা আজও ধরে রেখেছেন এ প্রজন্মের শ্রীমানিরা। এবার ১০৮তম বর্ষে পড়ল শ্রীমানিদের বাড়ির পুজো। প্রেমাঙ্কুর বলেন,  “এক সময় প্রতিমা কাঁধে চাপিয়ে আত্মীয়দের বা়ড়ি নিয়ে যাওয়া হত।”  লোকের কাঁধে চেপে আজও প্রতিমা নিরঞ্জনের জন্য বের হয়। কিন্তু এখন আর প্রতিমাকে আত্মীয়দের বাড়িতে ঘোরানো হয় না। এমন বহু রীতি ছড়িয়ে রয়েছে মায়ের আরাধনা। পারিবারিক কত না-জানা গল্প এক প্রজন্ম থেকে আর এক প্রজন্মে ছড়িয়ে থাকে। ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মেলবন্ধনে সেই গল্পই বলে শ্রীমানি পরিবারের দুর্গাপুজো।

[শের শাহের দান করা জমিতেই ঘোষাল বাড়িতে শুরু মায়ের পুজো]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ