Advertisement
Advertisement

Breaking News

খাদান কালী

খাদান কালীর আরাধনায় অংশ নেন মুসলিমরাও, প্রাচীন পুজোর মাহাত্ম্য আপনাকে অবাক করবে

ভিনরাজ্যের মানুষেরাও এই পুজো দেখতে ভিড় জমান।

Durgapur's Khadan Kali Puja's have some interesting facts
Published by: Sayani Sen
  • Posted:October 26, 2019 6:44 pm
  • Updated:October 26, 2019 7:24 pm

সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: কয়লা খাদানের কাজ যথেষ্ট ঝুঁকির। পরিজনেরা আদৌ ফিরে আসবেন তো, সেই চিন্তাই ঘুরপাক খায় পরিবারের সকলের মনে। দুশ্চিন্তার মাঝে একমাত্র ভরসা খাদান কালী। তাই তো আজও প্রতি দীপাবলিতেই খাদান কালীর পুজো হয় নিয়ম মেনে। শুধু হিন্দুরাই নয়। ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মাতৃ আরাধনায় শামিল হন মুসলিমরাও।

ইতিহাস বলছে, ১৯৬৮ সালে কয়লা বোঝাই ট্রাক ডুবে যায় জলভরতি খাদানে। ইসিএলের কাজোরা এরিয়ার বাবুইশোল ইউনিটের ঘনশ্যাম কোলিয়ারির পরিত্যক্ত জল থেকে ট্রাক তোলার তোড়জোড় শুরু হয়। ডাকা হয় ডুবুরি। আনা হয় ক্রেন। কয়লা বোঝাই ট্রাক তুলতে ক্রেনের চেন ছিঁড়ে যায় বারবার। শেষে কোলিয়ারির ম্যানেজার ডুবে যাওয়া ট্রাকের লোডিংবাবু অমর ঘোষকে অনুরোধ করেন মা কালীর কাছে মানত করার জন্যে। মাতৃসাধক অমর ঘোষের মানতের পরই ওই ক্রেনের সাহায্যেই নির্বিঘ্নে উঠে যায় ট্রাক। তারপর থেকে স্থানীয় বাসিন্দা বিপদে আপদে মা কালীর কাছে প্রার্থনা করতেন।

Advertisement

একসময় মতিলাল চক্রবর্তী নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা কালী আরাধনা শুরু করেন। তা প্রায় ১০০ বছর আগে হবে। কোনও এক অজানা কারণে তিনি পরিবার নিয়ে অন্যত্র চলে যান। তারপর থেকে বিনা আরাধনায় মা পড়ে থাকেন জঙ্গলেই। ১৯৭১ সালে ঘনশ্যাম কোলিয়ারির লোডিংবাবু অমর ঘোষকে মা কালী স্বপ্নাদেশ দেন। স্বপ্নে মা তাঁর কাছ থেকে পুজো চান। খাদানের ছাদ খোলা মন্দির নির্মাণেরও আদেশ স্বপ্নাদেশ দেন দেবী। মাতৃ আদেশ পেয়েই অমরবাবু নিজের চেষ্টায় মন্দির নির্মাণ শুরু করেন। ঘন জঙ্গল, আগাছা পরিষ্কার করে মায়ের মূল বেদিকে কেন্দ্র করে দেওয়াল তৈরির কাজ শুরুও হয়। কিন্তু আর্থিক দুরবস্থার কারণে একসময় মন্দির নির্মাণ বন্ধ হয়ে যায়।

Advertisement

ফের মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে এবার একদল মুসলিম যুবক এগিয়ে আসেন মন্দির নির্মাণে। বেদির চারপাশে সারি দিয়ে ত্রিশুল লাগানো হয়। খাদান কালীর কোন মূর্তি হয় না। কৃষ্ণবর্ণা শ্যামাকালীর পট পুজো হয়। মায়ের স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী মন্দিরের মূল দরজা দক্ষিণ দিকে। মায়ের স্বপ্নাবিষ্ট ইসিএল কর্মী অমর ঘোষ জানান, “আগে শাল, মহুয়া, পলাশ বনের জঙ্গলে পরিপূর্ণ এই এলাকায় একটি ছোট্ট পাথরকেই কালীরূপে পুজো করা হতো। তারপর মায়ের আদেশ পেয়েই পটপুজো ও মন্দির নির্মাণ শুরু হয়। গভীর জঙ্গলে
ঘেরা অন্ডালের বক্তারনগরের পলাশবনের এই জায়গায় মানুষজন ভয়ে আসতেন না। কয়লা বোঝাই ট্রাক খাদান থেকে ওঠার পর থেকেই খাদান কালীর মহিমা দ্রুত ছড়াতে থাকে। কোলিয়ারির শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারের কাছে খাদান কালীর খ্যাতি ও মহিমা ছড়িয়ে পড়েছে। আজ ঝাড়খণ্ড, বিহারের খনি এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়েছে খাদানকালীর কথা।”

[আরও পড়ুন: ঐতিহ্য ও আভিজাত্যে আজও অমলিন পাথুরিয়াঘাটা সর্বজনীনের কালীপুজো]

খাদান কালীর বর্তমান সেবাইত জয়দেব গঙ্গোপাধ্যায় বলেন,“প্রতি মঙ্গলবারই মায়ের কাছে বহু দুর থেকে মানুষেরা মানতের উদ্দেশ্যে আসেন। কালীপুজোর দিন খাদান মায়ের কাছে উপচে পড়ে ভক্তদের ভিড়। রাতে প্রায় পঞ্চাশটি ছাগল বলি দেওয়া হয়। সব সম্প্রদায়ের মানুষই কালী পুজোর রাতে হাজির হন খাদান কালীর মন্দির
প্রাঙ্গনে।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ