দেবব্রত দাস, খাতড়া: কালী মূর্তির পুজো নয় শক্তির আরাধনায় রাইপুরে পূজিতা হন রাজপরিবারের কুললক্ষ্মী বুড়িমা। বাঁকুড়ার জঙ্গলমহল রাইপুর ব্লকের শ্যামসুন্দরপুর গ্রামে কয়েকশো বছর ধরে এমনই রীতিতে চলে আসছে শাক্তির আরাধনা। কালীর মূর্তি পুজো না হলেও শ্যামসুন্দরপুর রাজপরিবারের কুললক্ষ্মী ‘বুড়িমা’ বা ‘ষড়চক্রবাসিনী’র পুজো হয়। রাজপরিবারের বুড়িমার পুজোয় মাতেন এলাকার বাসিন্দারা।
জঙ্গলমহলের শ্যামসুন্দরপুর গ্রামে দেও রাজপরিবারের বাস। বর্তমানে রাজত্ব না থাকলেও রাজবাড়ি রয়েছে। দেও রাজপরিবারের বর্তমান বংশধররা আজও আছেন। তাই আগের প্রাচীন রীতিনীতি রয়ে গিয়েছে। এলাকার বাসিন্দারা জানান, দেও রাজপরিবারের প্রাচীন রীতি মেনেই কুললক্ষ্মী ‘বুড়িমা’ বা ‘ষড়চক্রবাসিনী’র অম্যাবসায় পুজো করা হয়। গ্রামে আর কোনও কালীর মূর্তি পুজো হয় না।
কিন্তু কেন কালীর মূর্তি পুজো নিষিদ্ধ?
কথিত রয়েছে, শ্যামসুন্দরপুর রাজপরিবারের তদানীন্তন রাজা ছত্রনারায়ণ দেওকে রাজবাড়ির কুললক্ষ্মী ষড়চক্রবাসিনী স্বপ্নাদেশ দিয়েছিলেন। সেই স্বপ্নাদেশে দেবী বলেছিলেন, তিনিই কালী। প্রতিমা মূর্তি গড়ে তাঁর পুজো করা চলবে না। সেই সময় থেকেই এলাকায় আর কোনও কালী মূর্তি তৈরি করে পুজো করা হয় না। প্রতি বছর কার্তিকের অমাবস্যায় কুললক্ষ্মী ষড়চক্রবাসিনীকে দক্ষিণাকালী রূপে পুজো করা হয়। শ্যামসুন্দরপুর রাজপরিবারের কুলপুরোহিত অনুপম গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “প্রবীন মানুষজনের কাছ থেকে শুনেছি, বহুদিন পূর্বে রাজা ছত্রনারায়ণ দেও স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন। তাঁকে কালীর প্রতিমা মূর্তি তৈরি করে পুজো করতে নিষেধ করেছিলেন দেবী। তারপর থেকেই রাজপরিবারের কুললক্ষ্মী ষড়চক্রবাসিনী বা বুড়িমাকেই কালী রূপে এলাকায় পুজো করা হয়। এলাকায় কালীর মূর্তিপুজো হয় না। পুজোর রাতে রাজপরিবারের কুললক্ষ্মীকে নির্দিষ্ট মন্দিরে আনা হয়। বর্তমান রাজা পশুপতি নারায়ণ দেও-র নামে সংকল্প করে পুজো করা হয়। পুজো শেষে দেবী ষড়চক্রবাসিনীকে ফের রাজবাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। কয়েক শতক ধরে এমনই রীতির পুজো হয়ে আসছে।”
শ্যামসুন্দরপুর রাজপরিবারের বর্তমান রাজা পশুপতি নারায়ণ দেও বলেন, “আমাদের পূর্ব পুরুষ স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই পুজোর সূচনা করেছিলেন। দেবীর নির্দেশ মেনে এলাকায় ঘট পুজো করলেও কালীর মূর্তি তৈরি করে কেউই পুজো করেন না। আমাদের কুললক্ষ্মী ষড়চক্রবাসিনী দেবী দক্ষিণাকালী হিসাবে পূজিতা হন। এটাই এলাকার প্রাচীন রীতি। দীর্ঘদিন ধরে এই রীতি মেনে আসছেন এলাকার বাসিন্দারা।” গ্রামবাসী সুকান্ত পণ্ডা, সাগ্নিক রাউত বলেন, “গ্রামে কালীর মূর্তি পুজো হয় না। রাজপরিবারের কুললক্ষ্মী ষড়চক্রবাসিনী বা বুড়িমাকেই কালীরূপে পুজো করা হয়। এই পুজোকে ঘিরেই আনন্দে মাতোয়ারা হয় আমরা।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.