Advertisement
Advertisement

Breaking News

পঞ্চকোট রাজপরিবারে আজও পালকিতে কূলদেবতার নগর পরিক্রমার পর হয় বিজয়া

পালকি কাঁধে নেন রাজপরিবারের সদস্যরাও।

Purulia: Royal family still maintain the old rituals on Dashami
Published by: Sulaya Singha
  • Posted:October 8, 2019 8:11 pm
  • Updated:October 8, 2019 8:58 pm

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: শ্যাম রঘুবরজিউ পালকিতে নগর পরিক্রমা করে বিজয় উৎসবে মাতার পরই বিজয়া হল গোটা পঞ্চকোটে। দশমীতে মঙ্গলবার পুরুলিয়ার কাশীপুরের পঞ্চকোট রাজপরিবারের কূলদেবতা শ্যাম রঘুবরজিউ আজও প্রথা মেনে দশমীতে পালকি করে, সাদা দুটি ছাতা নিয়ে নগর ভ্রমণে বের হন। তবে এই ভ্রমণে আগের মতো হাতি, ঘোড়া, উঠ, রাজা, সৈন্য–সামন্ত থাকে না। তবে এখনও তিনি পালকিতে চড়েন। আর সেই পালকি কাঁধে নেন রাজপরিবারের সদস্যরাও। তারা ঠাকুর বাড়ির তোরণ পর্যন্ত নিয়ে গিয়ে কাহারদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এরপর কূলদেবতা মন্দিরে ফিরে সিংহাসনে আসিন হওয়ার পরই তাঁর পুরোহিত ‘শিরোপা বন্ধন’ করেন রাজপরিবারে। কূলদেবতাকে গুড়ের মিষ্টি দেওয়ার পর বিজয়া দশমীতে মেতে ওঠেন সকলে। এবারও তার ব্যতিক্রম হল না। প্রথা মেনেই সবটা পালিত হল পঞ্চকোট রাজপরিবারে।

[আরও পড়ুন: দশমীতে সিঁদুরখেলায় অংশ নেন বিধবা-বৃহন্নলারাও, ব্যতিক্রমী উদ্যোগ রায়গঞ্জে]

মঙ্গলবার মা’কে কৈলাসে বিদায় দেওয়ার আগে তাঁকে চ্যাং মাছ পোড়া খাওয়ানো হয়। ভোগ হিসেবে নিবেদন করা হয় দই চিড়েও। জলাশয়ে ঘট ভাসিয়ে দেওয়ার পরই ওই মাছ পোড়া, দই-চিড়ের সঙ্গে এক চামচ সিদ্ধির শরবত গ্রহণ করেন রাজপরিবারের সদস্যরা। এরপরই তাঁদের কূলদেবী অর্থাৎ রাজরাজেশ্বরী বা শিখরবাসিনীর দুর্গা দালান থেকে পাশের ঠাকুরবাড়িতে পদার্পণ করে রাজপরিবার।

Advertisement

সেই বোধন থেকে মহানবমী পর্যন্ত আমিষ ভোগ খাওয়ার পর এদিন কূলদেবতার আলয়ে এসে নিরামিষ ভোগ গ্রহণ করেন পরিবারের সদস্যরা। খিচুড়ি, আলুর দম, চাটনি, পায়েসে মঙ্গলবার মহাদশমীতে পাত পেড়ে খেলেন প্রায় একশো জন। এদিন বৃষ্টির মধ্যেও প্রথা মেনে বিকালে পালকিতে ওঠেন শ্যাম রঘুবরজিউ। প্রায় এক কিমি দূরে ছাতামাড়ায় গিয়ে সেখানেই সন্ধে আরতি হয় কূলদেবতার। অতীতে এই কূলদেবতার নগর পরিক্রমায় শামিল হতেন স্বয়ং রাজা। এখন সেই রাজা, রাজতন্ত্র না থাকলেও এই প্রথা চলছেই। আগে ছাতামাড়ায় তেঁতুল পাতা দিয়ে প্রতীকী রাবণ তৈরি করে তাকে তীর বিদ্ধ করে বধ করা হত। রাজা লক্ষ্যভেদ না করতে পারলে হাত লাগাতেন রাজপরিবারের সদস্যরা। যিনি এই লক্ষ্যভেদ করতেন তাঁকে শ্যাম রঘুবরজীউর তরফে পুরস্কার তুলে দিতেন রাজা। এই রীতিকে বলা হত ‘বেজাবিধাঁ’।

Advertisement

[আরও পড়ুন: বিদায় বেলায় ‘গান স্যালুট’, রীতি মেনে বিসর্জন আসানসোলের রায় পরিবারে]

বর্তমানে পঞ্চকোট রাজ দেবোত্তরের সেবাইত জগদানন্দ প্রসাদ সিং দেও, রাজপরিবারের সদস্য বি পি সিং দেও বলেন, “আগে এই পালকি ছিল রূপোয় মোড়া। এই বিজয় উৎসব দেখার জন্য প্রায় কুড়ি-পঁচিশ হাজার মানুষ ছাতামাড়ায় জড়ো হতেন।” ছাতামাড়ায় আরতি সেরে রাজপরিবারের সদস্যরা আবার কূলদেবতার আলয়-সহ রাজরাজেশ্বরীর ঠাকুর দালানে যান। এই রাজপরিবারের সদস্য সৌমেশ্বরলাল সিং দেও বলেন, “অতীতের প্রথা মেনে আজও আমরা সকলে ঠাকুর বাড়ি এবং এই দেবী বাড়িতে প্রণাম করে শ্যাম রঘুবরজিউ এবং কূলদেবী মাতার আশীর্বাদ গ্রহণ করি। দুই দেবালয়েই পুরোহিতরা সদস্যদের হাতে পান তুলে দিয়ে মাথায় শিরোপা বন্ধন করেন।” বছর-বছর ধরে এভাবেই পাট ঝালদা, গড়পঞ্চকোট, পাড়া, কেশরগড় ও শেষ রাজধানী কাশীপুরে মা উমার বিদায়ের পর বিজয়া হয়ে আসছে।

ছবি এবং ভিডিও: সুনিতা সিং

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ