BREAKING NEWS

২১ জ্যৈষ্ঠ  ১৪৩০  সোমবার ৫ জুন ২০২৩ 

READ IN APP

Advertisement

দুর্গাপুজোয় কেন লাগে পতিতালয়ের মাটি?

Published by: Bishakha Pal |    Posted: September 28, 2018 8:28 pm|    Updated: September 29, 2018 8:36 am

Why the soil of the brothel is used for Durgapuja?

বিশাখা পাল: উমা আসছেন ঘরে। তাই সেজে উঠছে বাড়ি। দেওয়ালে নতুন রঙের প্রলেপ পড়েছে,  ঠাকুরদালান জুড়ে আঁকা হচ্ছে আলপনা। নানা রং দিয়ে নকশা কাটছেন বাড়ির বউ-মেয়েরা। ব্যস্ত বাড়ির জ্যাঠা-কাকারাও। আর ঠাকুরদালানের এক কোণে ধীরে ধীরে তৈরি হচ্ছে উমার মৃন্ময়ী মূর্তি। বৃদ্ধ শিল্পীর হাতে প্রাণ পাচ্ছেন মহিষাসুরমর্দিনী। তবে দেবীর এই মূন্ময়ী মূর্তির সব মাটিই যে বিশুদ্ধ, এমন নয়। সেখানে মেশানো আছে ‘অশুদ্ধ’ পতিতালয়ের মৃত্তিকা। শাস্ত্র মেনেই এই কাজ করছেন শিল্পী।

‘অশুদ্ধ’? সমাজের ‘বিদ্বজন’-দের মতে পতিতাপল্লি মানেই অশুদ্ধ জায়গা। সেখানে প্রতি রাতে চলে ‘বেলেল্লাপনা’। বাবুরা যায় তাদের এক রাতের রক্ষিতা খুঁজতে। তারপর কোনও একটা ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ। আর তারপর যা হয়, তা তো কহতব্য নয়। বাবুরা না হয় পুরুষমানুষ। তাদের সম্পূর্ণ ‘অধিকার’ আছে। কিন্তু সেখানকার মেয়েগুলো? লজ্জা নেই! কাপড় খুলে এক এক রাত এক এক জনের সঙ্গে কাটাতে তাদের মানে বাধে না! এমন মেয়েরা তো ‘অশুচি’।

পুজো তো এসেই গেল, কলা বউ সম্পর্কে এই তথ্যগুলি জানেন? ]

সমাজ যাদের এভাবে দূরে ঠেলে রেখেছে, আদিশক্তি কিন্তু তাদেরই কাছে টেনে নিয়েছে। তাঁর ত্রিনয়নে সবাই সমান। বলা ভাল, এই ‘অশুচি’ পতিতাপল্লির বেশ্যারা বরং তাঁর নজরে উঁচু স্থানে আছেন। তাই তো দেবীমূর্তি গড়তে অবশ্যম্ভাবী এখানকার মাটি। শাস্ত্রে তেমন বিধানই দেওয়া আছে। বলে আছে, অকালবোধনের সময় মহিষাসুরমর্দিনীকে গড়তে হবে পতিতাপল্লীর মৃত্তিকাতেই। সম্পূর্ণ না হলেও আংশিকভাবে এই মাটি লেপতেই হবে চিন্ময়ীর কাঠামোয়। কিন্তু কেন?

পুরুষ পতিতার বাড়ি গিয়ে যৌনখেলায় মাতে। আর ঠিক সেই কারণেই সে তার জীবনের সমস্ত সঞ্চিত পুণ্য সেখানে ফেলে আসে। বদলে পুরুষ সেখান থেকে মুঠো ভরতি করে নিয়ে আসে পাপ। বহু পুরুষের পুণ্যে সেখানকার মাটি পরিপূর্ণ। এক কথায় সমাজকে বিশুদ্ধ রাখতে সাহায্য রকরে এই ‘অশুদ্ধ’ বণিতারাই। তাই পুজোর মূর্তি তৈরিতে অনস্বীকার্য পতিতালয়ের মাটি।

তবে এর পিছনে একটি পৌরাণিক কাহিনিও আছে। পুরাণে বলা আছে, ঋষি বিশ্বামিত্র যখন ইন্দ্রত্ব লাভের জন্য কঠোর তপস্যা করছিলেন, তখন তাঁর ধ্যান ভাঙাতে উঠেপড়ে লাগেন দেবরাজ ইন্দ্র। স্বর্গের অপ্সরা মেনকাকে তিনি ঋষির ধ্যানভঙ্গের জন্য পাঠান। অপ্সরার নাচে বিশ্বামিত্রের ধ্যান ভেঙে যায়। রাজর্ষির মতো একজনের ধ্যান ভাঙানো খুব একটা সহজ কাজ নয়। দেবরাজ নিজে তা পারেননি। অথচ এক অপ্সরা অবলীলায় সেই কঠিন কাজ সম্পন্ন করেন। হোক না স্বর্গের, তবু মেনকা তো আর সতী রমণীর পর্যায়ে পড়েন না।

অকালে মহামায়া মোট ন’টি রূপে পূজিত হন। এই নবম কন্যাই হলেন পতিতালয়ের প্রতিনিধি। অষ্টকন্যার পর শেষ পুজোটি তাই পায় তারাই। সমাজ যাদের কোণঠাসা করে রাখে সারাবছর, দেবীবন্দনায় তারাই পূজিত হন মানুষের মনে।

তবে কারণ যাই হোক, ‘অশুদ্ধ’ নারীদের মাটি দিয়ে যে মূর্তি গড়া, তার সামনেই নতজানু হয় হাজার হাজার হাজার ‘বিশুদ্ধ’ পুরুষ। এ কি কম পাওয়া? প্রতিবছর এভাবেই প্রতিটি বাড়ির ঠাকুরদালানে বা পাড়ার মণ্ডপে হয়ে যায় এক নিঃশব্দ বিপ্লব। সকলকে হারিয়ে, মহিষাসুরমর্দিনীর আশীর্বাদ নিয়ে যুদ্ধজয়ের হাসি হাসেন শুভকাজে ব্রাত্য পতিতারাই। প্রতিবছর।

ভক্তেরা মাতোয়ারা গণপতি বাপ্পার আরাধনায়, জেনে নিন মাহাত্ম্য ]

Sangbad Pratidin News App: খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে লাইক করুন ফেসবুকে ও ফলো করুন টুইটারে