ঝাড়গ্রাম বনবিভাগের প্রাক্তন বনাধিকারিক সমীর মজুমদার।
সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: পাহাড় থেকে সমতল। জঙ্গল থেকে রুখাশুখা কাঁকুড়ে প্রকৃতি। তাঁর বিচরণ ক্ষেত্রের বিস্তৃতি বলতে গেলে হয়তো শেষ করা যাবে না। জঙ্গল, বন্যপ্রাণ, তাদের বিচরণভূমি, সংরক্ষণ ছিল তাঁর চাকরি জীবনের মূল বিষয়। চাকরি জীবনে মানুষ এবং বন্যপ্রাণীদের নিয়ে কাজের সীমা নেই তাঁর। তিনি ঝাড়গ্রাম বনবিভাগের প্রাক্তন বনাধিকারিক সমীর মজুমদার। কিন্তু তাঁকে অনন্য করে তুলছে অবসর জীবনের কার্যকলাপ।
অবসর জীবনে কোনও সাম্মানিক ছাড়াই গত ছয় বছর ধরে টানা সপ্তাহে একদিন এক ঘন্টা করে এফএম রেডিওতে বন্য পশু, পাখি,জঙ্গল, পরিবেশ, প্রাণীদের সংরক্ষণ নিয়ে অনুষ্ঠান করে চলেছেন। চাকরি জীবনের প্রত্যক্ষ নানা অভিজ্ঞতা গল্পের ছলে, আলোচনার মধ্যমে বলে চলেছেন। উদ্দেশ্য একটাই সাধারণ মানুষকে বোঝানো বা তাঁদের মননে প্রবেশ করানো পরিবেশ এবং বন্যপ্রাণীকুলের গুরুত্ব।
সমীর মজুমদার। ঝাড়গ্রাম বনবিভাগের প্রাক্তন বনাধিকারিক। এডিএফও থাকাকালীন ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে অবসর নেন। অবসর কেবল নিখাদ অবসর নয় তাঁর কাছে। জঙ্গলমহল জুড়ে ক্রমাগত হাতি-মানুষের সংঘাত, মৃত্যু, জঙ্গল নিধন, বন্যপ্রাণের ক্রমাগত বাস্তুচ্যুত হওয়া বা তাদের বিচরণ ক্ষেত্র সঙ্কুচিত হওয়ার মতো ঘটনাগুলি তাঁকে উদ্বিগ্ন করে তুলছিল। আর সেই জায়গা থেকে সাধারণ মানুষকে বন্যপ্রাণ, অরণ্যের কথা শোনাতে ঝাড়গ্রামের 90.4 নামের একটি বেসরকারি এফএম রেডিওকে বেছে নেন। বিগত প্রায় ছয় বছর ধরে নিজের ৩৩ বছরের চাকরি জীবনের সত্য কাহিনী তুলে ধরেন। ইতিমধ্যে তিনশোর বেশি এপিসোড শেষ করেছেন। এই অনুষ্ঠানের পাঁচশো ঘণ্টা অতিক্রম করেছেন। সমীরবাবু ইতিমধ্যে জঙ্গল, বন্যপ্রাণ-সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ১০টি বই লিখেছেন। এছাড়াও নিয়মিত বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় লেখালেখি করেন।
রেডিও মিলনের সিইও মিলন চক্রবর্তী বলেন, “ওঁ বাস্তবিক বন্যপ্রাণ,পরিবেশ অরণ্য ভালোবাসেন। তাই কোনও সম্মানিক ছাড়া এতগুলো বছর ধরে আন্তরিকভাবে আমাদের এই অনুষ্ঠান করে চলেছেন, মানুষকে সচেতনতার বার্তা দিচ্ছেন। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে পাঁচশো ঘন্টা সময়সীমা স্পর্শ করেছেন। ক্লাব বন্যপ্রাণ নামে এই অনুষ্ঠান ওটিটি প্ল্যাটফর্ম-সহ বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে সারা বিশ্বের মানুষ শুনছেন। ওঁকে অনেক ধন্যবাদ।”
অন্যদিকে সমীর মজুমদার বলেন, “আজ পরিবেশ, বন্যপ্রাণ,অরণ্য ধংস সারা বিশ্বের সমস্যা। মানুষকে সচেতন হতেই হবে। তা না হলে আগামী দিনে সমস্যা আরও বাড়বে। প্রকৃতির নিয়মেই মানুষ, পশু,পাখি জীব,জন্তুর সহবস্থান প্রয়োজন। তাই প্রকৃতির এই নিয়ম যাতে বজায় থাকে সে দিকে নজর দিতে হবে। আর এই তাগিদ থেকেই এই কাজটি করে চলেছি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.