Advertisement
Advertisement
চন্দ্রযান নিয়ে রাজনীতি

আন্তর্জাতিক রাজনীতির শিকার চন্দ্রযান ২! উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য

শতবার ব্যর্থতার পরও বিক্রমকে পাঠানো নিয়ে ইসরোর অন্দরেই অন্তর্কলহ।

Mission Chandrayaan 2 is under political pressure,controversy arises
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:September 7, 2019 3:32 pm
  • Updated:September 8, 2019 8:30 am

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শুধু অঙ্কে ভুল বা নিছকই দুর্ঘটনা নয়, ইসরোর মিশন চন্দ্রযান ২-এর ল্যান্ডার বিক্রমের শেষ মুহূর্তে হারিয়ে যাওয়া আসলে আন্তর্জাতিক রাজনীতির শিকার! বৈজ্ঞানিক গবেষণার সঙ্গে এভাবে রাজনীতিকে মিলিয়ে দেওয়ার কথা শুনে চমকে উঠতেই পারেন। খেপে যাওয়াও অস্বাভাবিক নয় মোটেও। কিন্তু বিক্রমের ব্যর্থতার কারণ খুঁজতে গিয়ে যে বেরিয়ে আসছে এমনই বিস্ফোরক তথ্য।

[আরও পড়ুন: পরীক্ষায় একাধিকবার ফেল ল্যান্ডার বিক্রম! গুঞ্জন ইসরোর আশেপাশে]

আসলে জগৎ সভায় শ্রেষ্ঠ আসন নেওয়া ভারত নানা সময়েই নানা আন্তর্জাতিক রাজনীতির শিকার হয়েছে। চন্দ্রযান-২ তাতে একটি সংযোজনমাত্র। ঠিক কী ধরনের রাজনীতি, তা বুঝতে হলে অন্যান্য দেশের মহাকাশ গবেষণার দিকে তাকাতে হবে। পৃথিবীর বাইরে মহাশূন্যের অনন্ত রহস্য ভেদ করতে সবচেয়ে তৎপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাসা। একাধিক মিশনে তার সাফল্য সবাইকে টেক্কা দিয়েছে। তবে এই মুহূর্তে নাসা বেসরকারিকরণের পথে। মার্কিন মোটর প্রস্তুতকারী সংস্থা টেসলার মালিক এলন মাস্কের তৈরি ‘স্পেস এক্স’, যা কিনা বাণিজ্যিকভাবে পৃথিবীবাসীকে মহাকাশে ভ্রমণ করানোর লক্ষ্য নিয়ে তৈরি হয়েছে, নাসার বহু প্রকল্প এখন এই সংগঠনের অধীনে।আমেরিকার সাম্প্রতিক মন্দা, তরুণ প্রজন্মের গবেষণায় উৎসাহে কিছুটা ভাঁটা-সহ একাধিক কারণে নাসার সেই গরিমা এখন অনেকটাই ফিকে। ফলে স্পেস এক্সই ভরসা। অন্তত আর্থিকভাবে তাদের সাহায্য নিতেই হচ্ছে নাসাকে।
আরেকদিকে রয়েছে আমেরিকার দুই বাঘা প্রতিদ্বন্দ্বী রাশিয়া এবং চিন। রাশিয়া মেধা এবং পরিকাঠামোয় মহাকাশ গবেষণায় আমেরিকার ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেললেও, এখন তার অবস্থাও শোচনীয়। স্পেস এক্সের মতো কোনও সংস্থা এসে হাত ধরলে বেঁচে যায় রুশ মহাকাশ গবেষণা। চিন আবার ভিন্ন পথে মহাকাশে পাড়ি জমাতে সদা সচেষ্ট। আর ভারত, এসব প্রথম বিশ্বের দেশের তুলনায় অনেক দিক থেকে পিছিয়ে থাকলেও, শুধুমাত্র মেধার জোরে এদের সঙ্গে সর্বদা প্রতিযোগিতায় থাকে। ফলে মহাকাশে আমেরিকা, রাশিয়া, চিনের শক্তিকে প্রতিহত করার একটা লড়াই চলে ইসরোর। চন্দ্রযান ২ ও তার ব্যতিক্রম নয়। ত্রিমুখী চাপের কাছে সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তি, কম খরচে তৈরি করা চাঁদে নামার এমন একটি যানকে হাতিয়ার করে ভারত ফের নিজের কৃতিত্ব প্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া ছিল। ইসরো চেয়ারম্যান কে শিবনও এটাই চেয়েছিলেন। এই লক্ষ্য যে মহান, তা নিয়ে সংশয়ের কোনও অবকাশ নেই। প্রথম বিশ্বের অর্থনৈতিক আগ্রাসনের কাছে মাথা নত না করে নিজেদের ক্ষুরধার মেধা আর অদম্য ইচ্ছাশক্তিকে হাতিয়ার করে চন্দ্রাভিযানে জয়ী হওয়ার লক্ষ্যে অবিচল থাকতে পারে একমাত্র ভারতই।

Advertisement

ইসরো সূত্রে খবর, ২০১৩ সাল থেকে অন্তত ১০০ বার ল্যান্ডার বিক্রমের অবতরণ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছিলেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু প্রতিবারই অবতরণের আগে সে ভেঙে পড়েছে। এত বড় একটা প্রকল্পের আগে এমন লাগাতার ব্যর্থতার কথা পুরোপুরি দেশবাসীর আড়ালেই রেখেছিল ইসরো। সংবাদমাধ্যমও ব্যর্থতার সেই অভেদ্য দুর্গে প্রবেশ করে সত্য জানতে পারেনি।তবে বিক্রমের চারটি পায়ে যে সমস্যা ছিল, সেকথা একবার স্বীকার করেছিল ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা।

Advertisement

রাজনীতির প্রভাব রয়েছে আরও। ৬ সেপ্টেম্বর ছিল দ্বিতীয় মোদি সরকারের শততম দিন। তাই এই দিনকে স্মরণীয় করে রাখতে চন্দ্রযান ২ গুরুত্বপূর্ণ ধাপটি সম্পূর্ণ করুক, তা চেয়েছিলেন কেন্দ্রের অনেক কর্তাব্যক্তিই। তাই কি ল্যান্ডার বিক্রমের মাত্র ২৪-২৭ শতাংশ সাফল্য সত্ত্বেও ঝুঁকি নিয়ে তাকে পাঠানো হয়েছিল চাঁদে? এই রাজনৈতিক চাপের কথা ঘনিষ্ঠ মহলে আকারে-ইঙ্গিতে ব্যক্ত করেছেন স্বয়ং শিবনই। এখানে আরও একটা প্রশ্ন তৈরি হচ্ছে। তাহলে কি বিজ্ঞানীদের সাফল্যকে ভারতের সাফল্য বলে দাবি করার একটা রাস্তা তৈরি করা হচ্ছিল?

[আরও পড়ুন: ৯৫% সফল মিশন চন্দ্রযান ২, আশার কথা শোনালেন বিজ্ঞানীরা]

ইসরোর অন্দরমহলে এনিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে দ্বন্দ্ব। বিজ্ঞানীদের একাংশ বারবার আক্ষেপ করে বলছে, বিক্রমকে না পাঠালে বোধহয় এই দিন দেখতে হত না। আরেকাংশের দাবি ঠিক উলটো। বিক্রম হারালেও অরবিটারের অক্ষত থাকাকেই ৯৫ শতাংশ সাফল্য বলে দাবি করছেন তাঁরা। হতেই পারে দিন দুই পর অরবিটার ফিরবে বিক্রমের অবতরণের সুখবর নিয়ে। তখন সাফল্য হবে ১০০ শতাংশ। কিন্তু তার আগে পর্যন্ত ভারতের বিজ্ঞানসাধনায় রাজনীতির এই যে ছায়া, তা প্রকট হয়ে গেল।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ