Advertisement
Advertisement
North Bengal

উত্তরবঙ্গে বাড়ছে হড়পা বানের শঙ্কা! নদী দখলের করুণ পরিণতি?

উত্তরের একাধিক নদীর নাব্যতা হারিয়ে মৃতপ্রায় দশা।

Possibility of flash flood is increasing in North Bengal
Published by: Sayani Sen
  • Posted:June 19, 2025 2:05 pm
  • Updated:June 19, 2025 2:05 pm  

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: বেহিসাবি বালি উত্তোলন, নদী দখলের পরিণতিতে কি এবার হড়পা বানের শঙ্কা বাড়ছে উত্তরের প্রায় প্রতিটি শহরে। আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, এবার বৃষ্টিপাতের পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে বেশি হতে পারে। বর্ষা শুরু হলেও এখনও জাঁকিয়ে বসেনি। কিন্তু বিক্ষিপ্তভাবে অতি ভারী বর্ষণের জেরে উদ্ভূত পরিস্থিতি দেখে শঙ্কা উঁকি দিচ্ছে নদী গবেষক মহলে একটানা অতি ভারী বৃষ্টি হলে বিধ্বস্ত নদীগুলো কি পারবে জল ধারণ করতে। নাকি নিজেদের হারানো গতিপথ খুঁজে নিতে বিধ্বস্ত করবে একের পর এক জনপদ। জুনের শুরুতে বিক্ষিপ্তভাবে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির ধাক্কা সামাল দিতে হিমশিম দশা হয়েছে উত্তরের সমতলের বিভিন্ন জনপদের। জল দাঁড়িয়েছে রাস্তায়। তবে কয়েকঘন্টা বৃষ্টির বিরতির সুবাদে ভোগান্তি মিটছে। শুকনো মাটি জল শুষে নিয়েছে।

Advertisement

আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, এবার জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে গড় বৃষ্টিপাত হবে স্বাভাবিকের থেকে বেশি। পূর্বাভাস সত্যি হলে কি পরিস্থিতি দাঁড়াবে সেটা ভেবে ভূগোলের গবেষক ও আবহাওয়াবিদদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তাঁদের বক্তব্য, উত্তরের শহর এলাকায় বৃষ্টির জল নিকাশি নালার মাধ্যমে যে ছোট নদীগুলোতে পড়ে সেগুলো মানুষের জবরদখলে মৃতপ্রায় হয়েছে। তাই জল বের হওয়ার পথ এখন প্রায় রুদ্ধ। সামান্য বৃষ্টিতে শহর জলবন্দি হচ্ছে। গত বছর ২৪৮.০৫ মিলিমিটার বৃষ্টিতে গোটা শিলিগুড়ি শহর হাবুডুবু খেয়েছে। শহরের সন্তোষী নগর, পরেশ নগর, ভানুনগর, অশোক নগর, প্রকাশ নগর, চম্পাসারি, বাঘাযতীন কলোনিতে বাড়ির রান্নাঘর, শোওয়ার ঘরে জল ঢুকেছে। তল্পিতল্পা গুটিয়ে খাটের উপর বসে রাত কেটেছে মানুষের। ঘরদোর জলেভেসে আসা আবর্জনায় ভরেছে। বিধান মার্কেটে জল উথলে রেডিমেড গার্মেন্টসের দোকানের মেঝে ভেসেছে। শহরের বাঘাযতীন পার্কের কাছে রাস্তায় কোমর সমান জলের স্রোত বয়েছে।

তাই প্রশ্ন উঠেছে, এবার কি আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষায়? শিলিগুড়ি শহরের মতো কিছু শহরে নদীগুলো সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও আগের অবস্থায় ফেরানো দুষ্কর বলেই মনে করছেন নদী গবেষকরা। তাঁদের মতে, নদীগুলোর উৎস মুখে ভারী বর্ষণ হলে হড়পা বানের বিপদ গর্জাবে। শিলিগুড়ি শহরের বাসিন্দা তথা ময়নাগুড়ি কলেজের ভূগোলের অধ্যাপক মধুসূদন কর্মকার বলেন, “শিলিগুড়ির পঞ্চনই, মহিষমারি, ফুলেশ্বরী, জোরাপানি, সাহ দখলদারদের কবলে পড়ে নালায় পরিণত হয়ে সামান্য বৃষ্টির জল ধারণ ক্ষমতা হারিয়েছে। একই পরিস্থিতি মহানন্দার। উৎস মুখে ভারী বর্ষণের জেরে হড়পা বানের ধাক্কায় মহানন্দা নদী শহরের জনপদ ভাসিয়ে বইলেও আশ্চর্যের কিছু নেই।”

শুধু কি শিলিগুড়ি শহর? বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে জলপাইগুড়ি, ময়নাগুড়ি, ধূপগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার শহর। জলপাইগুড়ি শহরের করলা নদী নাব্যতা হারিয়ে মৃতপ্রায় হয়েছে। ধরধরা নদী জবরদখলে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। ময়নাগুড়ি শহর সংলগ্ন ধরলা নদী দখল করে তেজপাতার চাষ চললেও দেখার কেউ নেই। যথেচ্ছ বালি উত্তোলনের ফলে মৃতপ্রায় হয়েছে জরদা নদী। শিলিগুড়ির বালাসন, ধূপগুড়ি শহরের কুমলাই নদীর একই দশা হয়েছে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক তথা নদী গবেষক সুবীর সরকার মনে করেন, যেভাবে নদী দখল হচ্ছে তাতে বিপদ আগামীতে বাড়তেই পারে। কিন্তু সতর্কতা শুনছে কে!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement