BREAKING NEWS

২৫ জ্যৈষ্ঠ  ১৪৩০  শুক্রবার ৯ জুন ২০২৩ 

READ IN APP

Advertisement

‘জ্যাভলিনের পরই নিশ্চিত হয়ে যাই, সোনা পাচ্ছে স্বপ্না’

Published by: Subhamay Mandal |    Posted: August 30, 2018 8:58 am|    Updated: August 30, 2018 8:59 am

Coach Subhash Sarkar cheered up Swapna Barman's success

ফাইল ছবি

সুভাষ সরকার: মুহূর্তের জন্য হলেও চিন্তায় পড়ে গেলাম। মনে হল, এবার বোধহয় হল না। চিনের কুইং লি অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে। পারবে তো স্বপ্না? নিজের মনে উঠে আসা প্রশ্নের মধ্যেও বিশ্বাস হারাইনি। অঙ্ক বলছে, ওকে টপকে যাওয়ার ইভেন্ট এখনও বাকি। স্বপ্না জ্যাভলিনে বরাবরই ভাল। আজ শুধু জ্যাভলিনে নিজের সেরাটা দিতে হবে। ভাগ্য দেবতা হয়তো আমার প্রার্থনা শুনেছিলেন। জীবনের সেরা থ্রো করল। আর সেটাই কুইং লি-কে ব্যাকফুটে ঠেলে দিল। জ্যাভলিনের পর অনেকটাই এগিয়ে স্বপ্না। শেষ ইভেন্ট ৮০০ মিটার। তার আগেই দেখে নিয়েছি ৮০০ মিটারে চিনের অ্যাথলিটের সেরা সময় ২.২১ সেকেন্ড। সেখানে স্বপ্নার সেরা সময় ২.১৬ সেকেন্ড। কিছুদিন আগে গুয়াহাটিতে আন্তঃ-রাজ্য মিটে করেছিল ২.১৯ সেকেন্ড। তখনই নিশ্চিত হয়ে যাই সোনা আসছে। তাই-ই হল। জ্যাভলিনের শেষে যে উত্থানের ধারাবাহিকতা দেখেছিলাম, তার পরিসমাপ্তি ঘটল জাকার্তার ৮০০ মিটারে। এশিয়া সেরার তকমা পেয়ে গিয়েছে স্বপ্না। কী কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে কয়েকটা বছর কেটেছে তা আজ বুঝিয়ে বলা সম্ভব নয়। হেপ্টাথেলন মানেই চোট-আঘাতে জর্জরিত হবে অ্যাথলিট। স্বপ্না বর্মনের ইনজুরি ছিলই। সঙ্গে ছিল চোট পাওয়ার প্রবণতা। কখনও গোড়ালি, কখনও হাঁটু, কখনও আবার লোয়ার অ্যাবডোমেন, কখনও ব্যাক ইনজুরিতে ট্র‌্যাকের বাইরে যেতে হয়েছে। এ সবের মধ্যেও আমি কিন্তু আশা ছাড়িনি। ২০১১ থেকে আমার সঙ্গে স্বপ্না। বাড়ির অবস্থা খুবই সঙ্গীন। তবু আর্থিক দৈন্যতার মধ্যে ওকে ভেঙে পড়তে দেখিনি। উলটে একটা প্রাণচঞ্চল্য, উচ্ছ্বলতা দেখতাম। তাই হয়তো চোট আঘাতের মধ্যেও স্বপ্নাকে কখনও ভেঙে পড়তে দেখিনি। ঈশ্বরের এই অসীম করুণা বোধহয় আজ ওকে পৌঁছে দিল এশিয়ার শীর্ষস্থানে।

[দাঁতের যন্ত্রণা চেপেই সোনার দৌড় স্বপ্নার, আনন্দে আত্মহারা জলপাইগুড়ি]

আমার কাছে এই সাফল্য চমক নয়। দু’মাস আগেই নিশ্চিত ছিলাম স্বপ্না এশিয়াড থেকে পদক আনবে। আমার দেখা স্বপ্নটা ওর মধ্যেও দেখেছি। আর তখনই অদ্ভুত পরিস্থিতির সামনে পড়ল স্বপ্না। চোটের জন্য ট্র‌্যাক থেকে ছিটকে গেল। আজ বলতে দ্বিধা নেই, তখন মনে হয়েছিল স্বপ্নপূরণ আর হয়তো হল না। তখন ট্রেনিং সিডিউলে ব্যাপক বদল আনলাম। জানতাম ওর মধ্যে সব কিছুই আছে। দরকার ফিটনেস বাড়ানো। তাই সঁাতারে ঠেলে দিলাম। চেষ্টা করলাম মানসিক দৃঢ়তা বাড়াতে। ইনস্টিংক্ট পাওয়ার বাড়াতে সব কিছু ফিরে পেতে শুরু করল। আগে সকাল-বিকেল মিলিয়ে প্রায় সাড়ে ছ’ঘণ্টা ওকে ট্র‌্যাকে নিয়ে পড়ে থাকতাম। পরে ট্র‌্যাকে সময় কমালেও সুইমিংয়ের বেশিক্ষণ রেখে দিলাম। আর তাতেই বাজিমাত। চোটের জন্য ট্র‌্যাক থেকে বিশ্রাম পাওয়াটা আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়াল। আজ শেষ ইভেন্টের পরে স্বপ্না যখন ছুটে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল, তখন মনে হচ্ছিল ওর জীবনের পরমপ্রাপ্তির দিনে আমিও বোধহয় একটা লক্ষ্যের কাছাকাছি পৌঁছতে পারলাম। যখন এই লেখা লিখছি, তখন জাকার্তায় রাত ১২টা বেজে গিয়েছে। স্টেডিয়াম জনশূন্য। রয়েছি আমি আর স্বপ্না। এরপর স্টেডিয়াম ছেড়ে ভিলেজে যাব। আমাদের পিছনে থাকবে লক্ষ্যপূরণের স্টেডিয়াম। কিন্তু এখানেই তো সব শেষ নয়। বরং এখান থেকেই শুরু স্বপ্নার নতুন করে পথচলা।

[সোনার দৌড় বাংলার স্বপ্নার, এশিয়াডে হেপ্টাথলনে ইতিহাস ভারতের]

(লেখক স্বপ্না বর্মনের কোচ)

Sangbad Pratidin News App: খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
নিয়মিত খবরে থাকতে লাইক করুন ফেসবুকে ও ফলো করুন টুইটারে