Advertisement
Advertisement
বিশ্বকাপ

ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে আজ ফুরফুরে কোহলিদের সামনে নেতানো ক্যারিবিয়ানরা

আন্দ্রে রাসেলের অভাব ভাবাচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।

Cricket World Cup: India to face West Indies at Manchester
Published by: Subhamay Mandal
  • Posted:June 27, 2019 11:02 am
  • Updated:June 27, 2019 11:14 am

গৌতম ভট্টাচার্য, ম্যাঞ্চেস্টার: সেই মাঠ! সেই মেঘলা করে থাকা শহর!
অথচ ১৬ জুনের সঙ্গে ২৬ জুনের ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের ততটাই মিল যা মাছ আর মাছরাঙায়! একটায় থরথর টেনশনে ভরা ছিল চারদিক। আর বুধবার ভারতীয় টিমের সরব উপস্থিতি অগ্রাহ্য করেও নেতিয়ে থাকা। এদের প্রতিদ্বন্দ্বী টুর্নামেন্টের প্রথম পর্বের টাটকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ নয়। যাদের পাকিস্তানকে গুঁড়িয়ে দেওয়া দেখে ভিভ রিচার্ডস উচ্ছ্বসিত ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, “মার্শালদের বংশধররা এসে গিয়েছে।” যাদের সম্পর্কে দ্রুত উচ্চকিত এবং রোম্যান্টিক হয়ে ক্যালিপসো শুনতে শুরু করেছিল ক্রিকেটবিশ্ব। এরা ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের ওয়েস্ট ইন্ডিজ পার্ট টু। পরপর দুটো ম্যাচ হেরে হতাশায় মুহ্যমান হয়ে রয়েছে। পয়েন্ট তালিকায় মাত্র ৩ নিয়ে আট নম্বরে থাকা টিম! তারা কোন হিম্মতে লড়বে ৫ ম্যাচে ৯ পয়েন্ট তোলা সুপার পাওয়ারের সঙ্গে? যাদের সামনে পড়ে কিনা আগের দুটো বিশ্বকাপেই হেরেছে।

বিরাট কোহলি এ দিন প্র্যাকটিসে এলেন না। বিশ্বকাপ ম্যাচের আগের দিন অধিনায়ক প্র্যাকটিসে অনুপস্থিত এটা ভ্রু খাড়া করে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। টিম থেকে যদিও বলা হল আজ প্র্যাকটিস ঐচ্ছিক ছিল। কাল তো বিরাট ইন্ডোরে অনেকক্ষণ প্র্যাকটিস করেছেন। এটার মতোই অভিনব ক্যারিবিয়ানদের দুটো সাংবাদিক সম্মেলন। প্রথমটায় ক্রিস গেইল এলেন। নিজেকে যিনি ইউনিভার্স বস বলে থাকেন। আইসিসি আপত্তি না তুললে ব্যাটের লোগাতেও সেটা লাগাতেন। এমন স্বআরোপিত শিরোনামে যাঁদের আপত্তি তাঁরাও স্বীকার করবেন, গেইল ঘরে ঢুকলে ভালবাসা, হাসি ও জীবন মিলে একাকার হয়ে যায়। আজকের ইনি বিশ্বকাপের পর অবসরের সিদ্ধান্ত পিছিয়ে দিচ্ছেন বলে যতই জানান, মুখভঙ্গিতে কোনও প্রাণ নেই। কোনও ফুর্তি নেই।

Advertisement

তাঁর সাংবাদিক সম্মেলন কভার করে মনে হচ্ছিল বিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের ভিডিও অ্যানালিস্ট দিয়ে কাটাছেঁড়ার আগে স্রেফ ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে গেইল ভিডিও দেখলেই তো ভারতীয় ড্রেসিংরুম উদ্দীপ্ত হয়ে পড়ত। বুঝত বিপক্ষ মাঠে নামার আগেই কত মনমরা। জেসন হোল্ডার তো আরওই মলিন। এই ক’দিন আগেও কত সপ্রশংস আলোচনা চলছিল যে হোল্ডার পদবিটা ভ্যানবার্ন হোল্ডার যথেষ্ট উজ্জ্বল করে যাননি। কিন্তু এই হোল্ডার যাবেন। এঁর হাত ধরেই নবজাগরণ ঘটবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের!

Advertisement

সেই তিনিও আন্দ্রে রাসেলের চলে যাওয়া এবং বাকি বিশ্বকাপ বৃত্তান্ত ময়নাতদন্তে বিষণ্ণ হয়ে পড়ছেন। “এত সুযোগ তৈরি করেও আসল সময়ে সেগুলো কাজে লাগাতে পারলাম না বলে ব্যর্থতাটা ঘটে গেল।” সামান্য খেয়াল করুন। বিশ্বকাপ সম্পর্কে অলরেডি পাস্ট টেন্সে কথা বলা শুরু করেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক। দু’পয়েন্ট কুড়িয়ে সেমিফাইনালের দিকে আর একধাপ এগনোর তাই আদর্শ চিত্রনাট্য। কলকাতা ময়দানে এমন সব টিমকে অতীতে ডাকা হত ‘হরিবোল’। যাদের ‘হরিবোল’ করে খই ছড়ানোর মানসিকতায় অবনমন ঘটেছে। কিন্তু এখানেই প্রশ্ন, বিপক্ষ টিম নিজেরা কেমন অবস্থায় আছে? পয়েন্ট তালিকা হল বাইরের হাঁকডাক। তার ভেতরেও একটা অ্যাটাচমেন্ট থাকে। লম্বা টুর্নামেন্টে সেই অ্যাটাচমেন্টটা আপলোড করাও খুব জরুরি হয়ে দেখা দেয়।

টিম ইন্ডিয়ার সেই অ্যাটাচমেন্ট কী দেখাচ্ছে? সেরা পাঁচ বোলার ও ব্যাটসম্যান। কোনও তালিকাতেই ভারত নেই। এটা ব্যাখ্যার ব্যাপারে ধরা যাক ভিভ রিচার্ডস আর এদিন ওল্ড ট্র্যাফোর্ড ঘুরে যাওয়া মাইকেল হোল্ডিং ফর্মুলা প্রয়োগ করা হল। সেই ফর্মুলা বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সোনার টিমের একটাও ব্যক্তিগত বিশ্বরেকর্ড নেই। কারণ লয়েডের সৈনিকেরা ব্যক্তিগত স্বার্থ ভুলে দলগত রেকর্ড তৈরিতে উৎসাহী ছিলেন। ধরা যাক এ বারের বিশ্বকাপে ভারত ঠিক তাই। তালিকায় সেই জন্য কারও নাম নেই। এটা তাই বাদ দিলাম। এমনিতে বিশ্বকাপে ভারতের সবচেয়ে নিঁখুত ম্যাচ এখন অবধি ওভালে অস্ট্রেলিয়া। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের পাকিস্তান বললাম না কেন? সে দিন নার্ভের যে পরিমাণ পরীক্ষা হয়েছে, টেকনিকাল স্কিলের হয়নি!

এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ যেমন প্রতিযোগিতার পার্ট ওয়ান নয়, পার্ট টু। ভারতও তাই। আইপিএলে যেমন সেমিফাইনালের কাছাকাছি এসে বিজনেস এন্ড পর্ব শুরু হয়, বিশ্বকাপও আপাতত সেই পর্যায়ে। এমন সময় যখন নতুন করে প্ল্যান ভাঁজতে হয়। ফিটনেস নিয়ে ব্যথা থাকলে টিমের কম্বিনেশন বদলাতে হয়। এই পর্যায়ে উইলো কাঠ দিয়ে তৈরি বস্তুটা নয়। বেশি দামি হয়ে দেখা দেয় মগজাস্ত্র। মোক্ষম প্রশ্নটা হল ভারত কি মগজাস্ত্রের প্রয়োগ করছে? ইংল্যান্ডের বিমানে ওঠার আগে থেকে জাতীয় প্রশ্ন উঠে গিয়েছে চার নম্বর কে? এখনও তার নিষ্পত্তি হল না যেহেতু বিজয় শঙ্করের ওই পজিশনে পাওয়ারহিটার হিসেবে নিরঙ্কুশ প্রমাণ করাটা মুলতবি।

মহেন্দ্র সিং ধোনির মন্থর ব্যাটিং নিয়ে সমালোচনার কাঁটাই বা কী হল? সেটা কি ন্যায্য ছিল না অন্যায্য? আফগান ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের এতগুলো ডট বল খেলা নিয়ে প্রশ্ন করায় বোলিং কোচ ভরত অরুণ যে ভাবে এগিয়ে এলেন তাতে বোঝা গেল, টিম ম্যানেজমেন্ট প্রবলভাবে এমএসডি-র সঙ্গে আছে। “ওই সময় একটা উইকেট চলে গেলে সমস্যায় পড়তাম। তাই ধোনি আর কেদারকে তখন পরিস্থিতি অনুযায়ী স্লো খেলতে হয়েছিল,” বললেন অরুণ। দ্রুত পালটা প্রশ্ন তাঁকে, ৫২ বলে ২৮ করা নিয়ে ধোনির সঙ্গে আপনারা কথা বলেননি? সরাসরি উত্তর না দিয়ে বোলিং কোচ বললেন, “ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে আমাদের কথা সব সময় চলতেই থাকে।” শচীন তেণ্ডুলকরের ধোনি-ব্যাটিং সংক্রান্ত সমালোচনা যে দেশজুড়ে ঝড় ফেলে দিয়েছে এবং শচীনকে পর্যন্ত ট্রোলড হতে হয়েছে, এটা ডিজিটাল মিডিয়ার যুগে কারও অজানা থাকতে পারে না। এ তো আগেকার সময় নয় যে কোচেরা হোটেলের ঘরে দেওয়া কাগজ সরিয়ে দেবেন। ধোনি নিজেও জানেন। কিন্তু এটা এই মুহূর্তের নিষিদ্ধ টপিক। বরাবরের মতো নিরুত্তাপ থেকে ধোনি তাই নেটে অফ ব্রেক বোলিং ও ব্যাটিং অনুশীলন করে গেলেন। তফাতের মধ্যে কতগুলো তুলে তুলে মারলেন। মনে হল ৫২ বলে ২৮ অন্তত ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে দেখব না।

নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ঋষভ পন্থ? ধুর টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে প্রতিদ্বন্দ্বীই নন। সত্যি কথা বলি, ঋষভকে দেখে মনে হচ্ছে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেড মাঠ আর ড্রেসিংরুম দেখতে যেমন রোজকার ট্যুরিস্টের ভিড় হয় তাঁকে বুঝি সেই ক্যাটেগরিতে ইন্ডিয়ান চেঞ্জরুম আর প্র্যাকটিস দেখার জন্য উড়িয়ে আনা হয়েছে। দৃশ্যত নেটে দীনেশ কার্তিক তাঁর চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছেন। টিমে ঢোকার ব্যাপারে লাইনেও হয়তো দিল্লিওয়ালা কিপার কার্তিকের পিছনে। কার্তিকেরটা আরএসি ওয়ান হলে। তাঁর টু তো বটেই। আরও নিচেও হতে পারে। টিম যেমন ভেবেছে করছে। কিন্তু রাহুল আর বিজয় শংকর পাওয়ারহিটিং করবেন তো? টুর্নামেন্ট ক্রমশ বাঁ হাতি পেস বোলারদের মৃগয়া হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ভারতে বাঁ হাতি পেসার নেই সেটা না হয় তত সমস্যা নয়। তর্ক হল বিজনেস এন্ডের জন্য টিম ঠিকমতো গুছিয়ে উঠছে কি না? নতুন করে গোলাগুলি মজুত করছে কি না?

১৯৯২ বিশ্বকাপের সঙ্গে ২০১৯-এর মিলের কথা বারবার তুলে ধরছে পাকিস্তান। অদ্ভুত সাদৃশ্য দুটো বিশ্বকাপে। ভারতের সঙ্গে একেবারেই নয়। তবু ইতিহাস তো। কোনও কোনও রেকর্ড মাঝে মাঝে মনে পড়ে যায়। মনে পড়ে সেই বিশ্বকাপে বেসিন রিজার্ভে লারাদের মুখোমুখি হওয়ার আগে এমনই অবিসংবাদী ফেভরিট ছিল ভারত। কিন্তু কপিল দেবের হাতে নতুন বল থেকে। শচীনের হাতে ব্যাট থেকেও। ম্যাচটা তারা শুধু হেরে শেষ করেনি। বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যাওয়ার বাঁক ছিল সেই ওয়েলিংটন ব্যর্থতা। কোহলির টিম ইন্ডিয়া অবশ্যই অতীতের আজহারের ভারতের মতো বিলাসী নয়। অনেক কঠিন পেশাদার। কিন্তু তারা কি মনে রাখছে বিষ্যুদবার দু’পয়েন্টই শুধু যথেষ্ট নয়, একটা বিবৃতিও নিজেদের ক্রিকেটে পেশ করতে হবে যে আমরা পার্ট টু-র সিলেবাসটাও ভাল করে পড়ে এসেছি! আমরা পয়েন্টে প্রথম হয়ে আমাদের এই লাকি ওল্ড ট্র্যাফোর্ডেই ৯ জুলাই সেমিফাইনালটা খেলতে চাই।

ক্রিকেট অনেকটা জীবনের মতো। হঠাৎ হঠাৎ শ্রেণিবিভাগ ঘুচিয়ে দেয়। খেলার মাঠে তো অহরহ ঘটে। যার হারাবার কিছু থাকে না সে-ই দেখা যায় উচ্চাকাঙ্খী এবং শৃঙ্খলিত পেশাদারকে ঝটকা দিয়ে চলে গেল। আসলে যার হারাবার কিছু নেই তার ওপর তো চাপও নেই। কেন জানি না মনে হচ্ছে ক্রিস গেইল, নিকোলাস পুরান আর শিমরন হেটমেয়ারদের সঙ্গে বুমরাহ-সামির যুদ্ধটাই ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে পার্ট টু পরীক্ষার মার্কশিট ঠিক করবে!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ