Advertisement
Advertisement

সুপার ফোরে বিপক্ষ বাংলাদেশ, পাক বধের পর ‘বাঘ’ শিকারই লক্ষ্য রোহিতদের

তেতে থাকা মাশরাফিদের ওষুধ হতে পারেন কেদার।

Published by: Sulaya Singha
  • Posted:September 21, 2018 4:00 pm
  • Updated:September 21, 2018 4:11 pm

রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়, দুবাই: বুধবার বেশ গভীররাত পর্যন্ত কলকাতার এক বন্ধুস্থানীয়র সঙ্গে নাকি মেসেজে কথা বলেছিলেন রবি শাস্ত্রী। শোনা গেল, কলকাতা নিবাসী বন্ধুকে প্রফুল্ল ভারতীয় কোচ বলে দেন যে, ছেলেরা দারুণ খেলে দিল। পুরোপুরি ক্লিক করে গেল তাঁর টিম কম্বিনেশন।

মহাশত্রুকে রীতিমতো নির্যাতন করে বাইশ গজে বধ করলে যে কোনও ক্রিকেট কোচই প্রসন্নচিত্ত হয়ে পড়বেন। বিশেষ করে সেই শত্রুর নাম যদি পাকিস্তান হয়। গত রাত থেকে পাকিস্তান ক্রিকেটে তো এককথায় দাবানল চলছে। ওয়াসিম আক্রম টিভি চ্যানেলে পাকিস্তান ব্যাটিং-বোলিংকে মোটামুটি ধুয়ে ছেড়ে দিয়েছেন। ভারত-বিপর্যয়ের পর উত্তেজিত পাক কোচ মিকি আর্থার সর্বসমক্ষে তীব্র কষাঘাত করে বলে দেন, “এটা আমাদের ব্যাটিং হয়েছে? সরফরাজের কি বোলারের মাথার উপর দিয়ে মারাটা কাজ? নাকি তৃতীয় ওভারে ভুবনেশ্বর কুমারকে স্টেপ আউট করতে যাওয়াটা ইমাম-উল-হকের কাজ? আরে, তার জন্য তো অন্য লোক আছে। তারা করবে। সরফরাজরা কেন?”

Advertisement

[ইস্টবেঙ্গলে শুরু আলোজান্দ্রো জমানা, কার্যত বিদায় সুভাষের]

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিবেশীর সংসার এভাবে পুড়তে থাকলে কার না ভাল লাগবে? দুপুরে ভারতীয় টিম হোটেলে গিয়ে দেখা মহেন্দ্র সিং ধোনি, দীনেশ কার্তিকদের ফুরফুরে চেহারাগুলোই সুপার ফোর-এ প্রাক বাংলাদেশ যুদ্ধের শিরোনাম হওয়া উচিত ছিল। ভারতীয় টিমের সার্বিক আবহ ব্যাখ্যায় এ সবেরই জায়গা পাওয়া উচিত ছিল বেশি। কে জানত, শেষপর্যন্ত তা আর হবে না? উলটে গঙ্গা-পদ্মা লড়াইয়ের আগে লিখতে বসতে হবে নতুন এক শত্রুর আবির্ভাব নিয়ে। যার নাম চোট। যে শত্রুর আক্রমণে আপাতত আক্রান্ত শাস্ত্রীর টিম কম্বিনেশন। পাকিস্তান ম্যাচ খেলে ওঠার চব্বিশ ঘণ্টারও কম সময়ে তিন তিনজন ভারতীয় ক্রিকেটার গোটা এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে গেলেন! জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির ভূমিকা নিয়ে তীক্ষ্ণ প্রশ্ন তুলে দিয়ে। এবং চোটের নমুনা এ রকম:

Advertisement

হার্দিক পাণ্ডিয়া: পাকিস্তান ম্যাচে বল করতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিলেন। চোট এতটাই গুরুতর যে হাঁটাচলার জায়গায় ছিলেন না ভারতীয় অলরাউন্ডার। স্ট্রেচারে শুয়ে মাঠ ছাড়তে হয়। পিঠের নিচের দিকে পাওয়া গুরুতর চোটে টুর্নামেন্টের বাইরে চলে গেলেন হার্দিক। তাঁর পরিবর্ত সিএসকে-র দীপক চাহার।

অক্ষর প্যাটেল: পাকিস্তান ম্যাচে ফিল্ডিং করতে গিয়ে বাঁ হাতের আঙুলে চোট পান। পরে স্ক্যান-ট্যান করে দেখা যায়, টেন্ডন ছিঁড়েছে। অতএব, তিনিও আর নেই। পরিবর্ত রবীন্দ্র জাদেজা।

শার্দুল ঠাকুর: হংকংয়ের বিরুদ্ধে বল করতে গিয়ে ডান উরু এবং কুঁচকি দু’টোই গিয়েছে। বাকি এশিয়া কাপে তিনিও আর নেই। তাঁর পরিবর্ত সিদ্ধার্থ কাউল।

বলাবলি চলছে, দুবাইয়ে এত গরমে খেলতে হলে এরকম চোট পাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। কিন্তু জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির তুলোধোনা করে ছাড়ছেন কোনও কোনও বোর্ড কর্তা। এ দিন ‘সংবাদ প্রতিদিন’-কে এক বোর্ড কর্তা ফোনে বললেন যে, বারবার এনসিএ-র কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে প্লেয়ারদের চোটআঘাত নিয়ন্ত্রণে তারা কী করছে? কিন্তু কখনওই সদুত্তর আসেনি। শোনা গেল, টিমের সিনিয়র ক্রিকেটাররা দিন দিন এনসিএ নিয়ে আগ্রহ হারাচ্ছেন। ভাল রিপোর্ট তাঁদের থেকে আসছে না। এঁদের কাছে এনসিএ বর্তমানে শুধুমাত্র ফিটনেস টেস্ট দিতে যাওয়ার জায়গা! প্রমাণ, চোটের কারণে ভুবনেশ্বর কুমারের ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে গোটা টেস্ট সিরিজ খেলতে না পারা। প্রমাণ, এশিয়া কাপের দু’টো ম্যাচ যেতে না যেতেই তিন জন ক্রিকেটারের চোট।

ভারত বনাম পাকিস্তান যতটা হানাহানির আবহ সৃষ্টি করে, গত তিন-চার বছর ধরে ভারত বনাম বাংলাদেশও প্রায় তাই করে থাকে। ২০১৫ বিশ্বকাপে রোহিত শর্মার আউট নিয়ে পদ্মাপারের গোলাগুলি বর্ষণ শুরু হয়েছে এবং আজও তীব্রভাবে চলছে। বাংলাদেশ আজও মনে করে, রোহিত সে দিন আউট ছিলেন। ভারতের দাদাগিরিতে ন্যায্য আউট পায়নি বাংলাদেশ। শুক্রবার ম্যাচের আগে আবার বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি মোতার্জা সূচি নিয়ে ক্ষোভ দেখিয়ে যার উত্তাপ আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন।

এশিয়া কাপে কোহলির না থাকা নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল মাশরাফিকে। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের কেন একার সুবিধে হবে? সুবিধে হলে সবারই হবে। আমাদের তামিম (ইকবাল) না থাকাটাও ভারত-সহ বাকি টিমগুলোর সুবিধে!” সঙ্গে যোগ করেন, “ভারত-পাকিস্তানের মতো না হলেও ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচ নিয়ে যথেষ্ট উত্তেজনা থাকে। আর এটা ঠিক যে, ২০১৫ বিশ্বকাপের পর দু’দেশের মধ্যে তিক্ততা এসে পড়েছে। তারপর খুব বেশি ভারতের বিরুদ্ধে খেলিনি আমরা। একবার চাম্পিয়ন্স ট্রফি। আর দু’বার হোম সিরিজ। কিন্তু বেঙ্গালুরুতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতকে প্রায় হারিয়ে দিয়েছিলাম।”

গত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দু’দেশের শেষ সাক্ষাতে বাংলাদেশকে প্রায় ধ্বংসস্তুপে পরিণত করেছিল ভারত। এবারও দুই ম্যাচেই জয়ী তারা। জসপ্রীত বুমরা-ভুবনেশ্বর কুমারের সঙ্গে লড়া যাবে তো? আর স্পিন? বাংলাদেশ স্পিন আক্রমণ পাকিস্তানের চেয়ে ভাল। সাকিব আছেন। আছেন মেহদি হাসান মিরাজ। কিন্তু ভারতের ক্রিকেট আকাশে নতুন স্পিনার-তারকা কেদার রাতারাতি আর্বিভূত হয়েছেন। স্পিনার কেদারকে আবিষ্কার করা হল ওয়ানডে অধিনায়কত্ব ছাড়ার আগে ধোনির শেষ মাস্টারস্ট্রোক। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তাঁকে যুজবেন্দ্র চাহাল-কুলদীপ যাদবের তুলনায় ভয়ংকর লেগেছে। তাছাড়া আবুধাবিতে আফগানদের কাছে ১৩৬ রানে হারের পর গলা উঁচিয়ে কথা বলবে বাংলাদেশ? বোলিংয়ে ধাক্কার পর ব্যাটেও ম্লান। তাই ধারে-ভারে এগিয়েই এদিন শুরু করবে টিম ইন্ডিয়া।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ