Advertisement
Advertisement
India vs New Zealand

স্পিন যেন ‘নতুন রোগ’ ভারতের, নেপথ্যে কি আইপিএল, নাকি রোহিতদের দৃষ্টিভঙ্গি?

রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাদেজাদের পরবর্তী সময়ে টেস্ট ক্রিকেটে নিয়মিত খেলার মতো স্পিনার সেভাবে তৈরিই করতে পারেনি ভারত।

India vs New Zealand: Here is what causes spin weakness for India
Published by: Subhajit Mandal
  • Posted:October 26, 2024 4:34 pm
  • Updated:October 26, 2024 4:34 pm

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দক্ষিণ আফ্রিকার বাউন্স, অস্ট্রেলিয়ার পেস এবং বাউন্স, ইংল্যান্ডের সুইং, গত ১০ বছরে এ সব কিছুরই মুখোমুখি হতে হয়েছে টিম ইন্ডিয়াকে। কমবেশি সাফল্যও এসেছে। বস্তুত টিম ইন্ডিয়া পেস আর বাউন্সকে সেভাবে ভয় পায় না। বরং ভারতীয় দলের নয়া ত্রাস হয়ে দাঁড়াচ্ছে স্পিন। শুধু ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে সিরিজ হারা নয়, ভারতের স্পিন দুর্বলতা সম্প্রতি প্রকট হয়েছে একাধিক সিরিজে।

প্রথমে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজে হার। তার পর শ্রীলঙ্কার মাটিতে শ্রীলঙ্কার কাছে সিরিজ হার। এর পর ঘরের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথমবার টেস্ট সিরিজে হার। বিশেষ করে পুণেতে দ্বিতীয় টেস্টে যেভাবে মিচেল স্যান্টনারের সামনে আত্মসমর্পণ করলেন ভারতীয় ব্যাটাররা, তাতে স্পিনের বিরুদ্ধে দুর্বলতাই প্রকাশ পায়। প্রাক্তন কিউয়ি তারকা সাইমন ডুল যেমন স্পষ্টতই বলে দিলেন, ভারত স্পিন ভালো খেলে সেটা এখন মিথ। শচীন, সৌরভ, দ্রাবিড়দের সময়ে ভারত স্পিন ভালো খেলত। এখন খেলে না।

Advertisement

প্রশ্ন হল, স্পিনের বিরুদ্ধে ভারতের এই দুর্দশা কেন?

প্রথমত, এর জন্য অনেকটা দায়ী করতেই হয় আইপিএলকে। আইপিএলে পাটা উইকেটে খেলে অভ্যস্ত ভারতীয় ব্যাটাররা বল নড়লে যে সমস্যায় পড়বেন, সেটাই বোধ হয় প্রত্যাশিত। গত বছর আইপিএলে হায়দরাবাদ, মুম্বই, বেঙ্গালুরু, কলকাতা, প্রায় সব পিচেই ভুরি ভুরি রান হয়েছে। সেই পাটা উইকেটে খেলে অভ্যস্ত রোহিত, কোহলিরা তাই বল একটু নড়লেই খেই হারিয়ে ফেলছেন। সেটা স্পিন হোক, বা সুইং। বল নড়লেই আর পা নড়ছে না। ফলে যা হওয়ার, সেটাই হচ্ছে।

দ্বিতীয়ত, আইপিএলের ফলে আরও একটা সমস্যা যেটা হচ্ছে, সেটা হল টেস্ট খেলার মানসিকতার অভাব। কোনও ভারতীয় ব্যাটারই যেন ক্রিজে দীর্ঘক্ষণ পড়ে থাকার কথা ভাবছেন না। দ্রুত রান তুলে ম্যাচ জেতার চেষ্টার মধ্যে মন্দ কিছু নেই। কিন্তু একই সঙ্গে পরিস্থিতি বুঝে পিচে মাটি কামড়ে পড়ে থাকারও যে প্রয়োজনীয়তা আছে, সেটা বুঝতে হয়তো ম্যানেজমেন্টেরও ভুল হচ্ছে। তরুণ প্রজন্ম তো বটেই, রোহিত-কোহলিদের মতো বর্ষীয়ানরাও ক্রিজে পড়ে থেকে লম্বা ইনিংস খেলার কথা ভাবছেন না।

তৃতীয়ত, অবশ্যই টিমের মনোভাব এবং দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন। একটা সময় ভারত বিশ্বমানের স্পিনার তুলে আনার কথা ভাবত। দেশের মাটিতে প্রতিপক্ষকে স্পিনের ঘূর্ণিপাকে ফেলে অনায়াসে সিরিজ জেতার কথা ভাবত। গত কয়েক বছরে সেই দৃষ্টিভঙ্গিতে বদল এসেছে। এখন আর স্পিন নয়, পেস বোলার তৈরিতে মনোযোগ দিচ্ছে ভারতীয় বোর্ড। যার ফলে ঘরোয়া ক্রিকেটে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে পেসারদের। পিচও তৈরি হচ্ছে পেস সহায়ক। এরাপল্লি প্রসন্ন, বিষেণ সিং বেদী, চন্দ্রশেখর, অনিল কুম্বলেদের মাটিতেই এখন স্পিনাররা ব্রাত্য। রবিচন্দ্রন অশ্বিন, রবীন্দ্র জাদেজাদের পরবর্তী সময়ে টেস্ট ক্রিকেটে নিয়মিত খেলার মতো স্পিনার সেভাবে তৈরিই করতে পারেনি ভারত। এই প্রজন্মে কুলদীপ যাদব ছাড়া পাতে দেওয়ার মতো স্পিনার কোথায়? ওয়াশিংটন সুন্দর বা অক্ষর প্যাটেলরা দলে খেলেন অলরাউন্ডার হিসাবে। ভারতের স্পিন দুর্ভিক্ষ এমনই পর্যায়ে পৌঁছেছে যে আইপিএলেও ‘বুড়ো’ পীযুষ চাওলা, অমিত মিশ্ররা কদরের সঙ্গে খেলে চলেছেন।

চতুর্থত, ঘরোয়া ক্রিকেটে স্পিনারদের এই দৈন্য প্রভাব ফেলছে ব্যাটারদের টেকনিকেও। ভালো মানের স্পিন বোলারকে খেলার সুযোগ না পেয়ে স্পিনপঙ্গুত্বে ভুগতে হচ্ছে সরফরাজদের। মোট কথা, ভারতের এই স্পিন দুর্বলতা একদিনের ফসল নয়। দীর্ঘদিনের পদ্ধতিগত সমস্যার ফল।

পঞ্চমত, স্পিন হোক বা সুইং, ভালো বোলিংয়ের সামনে টেস্ট ক্রিকেটে ভারতের দুর্বলতার আরও একটা বড় কারণ হল ঘরোয়া ক্রিকেটে অনীহা। জাতীয় দলের নিয়মিত তারকারা আজকাল আর সেভাবে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলেন না। রনজির মতো টুর্নামেন্ট খেললে ধৈর্য তৈরি হয়। কিন্তু রোহিত-বিরাটদের জমানায় ঘরোয়া ক্রিকেট সেভাবে খেলেন না মহাতারকারা। সেটার জন্য অবশ্য শুধু ক্রিকেটারদের দায়ী করা যায় না। আসলে ইদানিং ভারতকে তিন ফরম্যাট মিলিয়ে এত বেশি ক্রিকেট খেলতে হচ্ছে যে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলা সম্ভব হচ্ছে না। সেটাও স্পিনের বিরুদ্ধে দুর্বলতার অন্যতম কারণ হতে পারে।

গত একযুগ ঘরের মাঠে দাপট দেখিয়েছে টিম ইন্ডিয়া। দেশের বাইরেও ভালো পারফর্ম করেছেন রোহিত-কোহলিরা। কিন্তু এক যুগ বাদে ভারতীয় দল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এই ট্র্যানজিশনের সময় সামনে থেকে যাঁদের দলের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা, সেই রোহিত-কোহলি-অশ্বিনরা কেউই নিজেদের সেরা ফর্মে নেই। ফলে যে নেতৃত্ব তাঁদের কাছে প্রত্যাশিত, সেটার অভাব বোধ করছে ভারতীয় দল।

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement