শ্রেয়স-নাইট ‘শৈত্য’ ইডেনে, প্রাক্তন অধিনায়কের বিরুদ্ধে ফর্মে ফিরতে মরিয়া রাসেল-ভেঙ্কিরা

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আচ্ছা, শ্রেয়স আইয়ার কোথায়? পাঞ্জাব কিংস কোচ রিকি পন্টিংকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। প্রিয়াংশ আর্য-প্রভসিমরন সিং-গ্লেন ম্যাক্সওয়েল-মার্কো জানসেন, সবাই রয়েছেন, বৃহস্পতিবার ইডেনে সবাইকে দেখা যাচ্ছে। একটু দেরি করে যুজবেন্দ্র চাহালও নেমে পড়লেন। কিন্তু শ্রেয়স আইয়ার, তিনি কোথায়?

আরও বেশ কিছুক্ষণ পর নামলেন তিনি। দু’খানা ব্যাট ঘোরাতে-ঘোরাতে। শরীরীভাষায় ছিল যা, ইংরেজিতে তার একটা নাম আছে- ‘সোয়্যাগ’। ইডেন লন দিয়ে হেলে-দুলে মাঠে যাচ্ছেন যখন তিনি, ক্লাবহাউস আপার টিয়ার থেকে জনা কয়েক কিশোর-কিশোরী চেঁচিয়ে উঠলেন, ‘শ্রেয়স ভাইয়া… শ্রেয়স ভাইয়া…’ বলে। শুনে ঘুরলেন একবার। হাতের ব্যাট তুলে অভিবাদন জানালেন। এবং তার পর সোজা টিম হাডল ও অবিরাম নকিং। তা, শ্রেয়স আইয়ারকে এ হেন খোঁজাখুঁজি করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। গত বার কেকেআরকে তৃতীয় আইপিএল ট্রফি জিতিয়েছিলেন মুম্বইকর, অধিনায়ক হিসেবে। কিন্তু তার পরেও কেকেআর তাঁকে গত নিলামের আগে ধরে রাখার চেষ্টা করেনি। শোনা যায়, কেকেআরের কাছে থেকে যেতে যে অঙ্কটা চেয়েছিলেন শ্রেয়স, সেটা তাঁকে দিতে রাজি ছিল না নাইট টিম ম্যানেজমেন্ট। পরে অষ্টাদশ আইপিএল শুরুর আগে শ্রেয়স বলেও দেন, গতবার ট্রফি জেতার পর অধিনায়ক হিসেবে যতটা সম্মান, যতটা মর্যাদা তাঁর প্রাপ্য ছিল, মোটেও তিনি পাননি। শ্রেয়স আইয়ার কেকেআর ছেড়ে বর্তমানে পাঞ্জাব কিংসের সম্পদ। তাদের অধিনায়ক। আর এ অবস্থায় তিনি যদি কেকেআরের বিরুদ্ধে অবতীর্ণ হন, সেটাও তাঁর পুরনো ঘরের মাঠ ইডেন গার্ডেন্সে, যে কোনও ক্রিকেট সাংবাদিকের অনুসন্ধিৎসু চোখ শ্রেয়স-কেকেআর সখ্য কিংবা শৈত্যের ছবি প্রাণপণে খুঁজবে।

বৃহস্পতিবারের মতো দ্বিতীয়টা ধরা পড়ল। অর্থাৎ, শৈত্য। এ দিন প্রায় ঘণ্টা দু’য়েক ইডেনে ছাউনি ফেলে ট্রেনিং চালিয়ে গেল দুই টিম। পাঞ্জাব ও কেকেআর। কিন্তু সে দু’ঘণ্টায় পুরনো নাইট অধিনায়কের সঙ্গে দেখা করতে এলেন মাত্র দু’জন। পেসার হর্ষিত রানা আর রহমানুল্লা গুরবাজ। প্র্যাকটিসের প্রায় শেষের দিকে কেকেআর পেসারকে দেখা যায়, নিজ উদ্যোগে এগিয়ে শ্রেয়সের সঙ্গে কথা বলতে। মাঠে এ দিন কেকেআরের সবাই ছিলেন মোটামুটি। প্লেয়ার। কোচ। টিম ম্যানেজমেন্টের লোকজন। সিইও ভেঙ্কি মাইসোর। কিন্তু তাঁদের আইপিএল জয়ী অধিনায়কের সঙ্গে গুরবাজ-হর্ষিত বাদে কোনও পরিচিত নাম দেখাসাক্ষাৎ করেননি। অবশ্য একদিক থেকে দেখতে গেলে, টিমের যা দশা, তাতে পুরনো অধিনায়কের সঙ্গে খোশগল্প করার মতো মানসিক অবস্থা সোনালি-বেগুনির প্লেয়ার বা সাপোর্ট স্টাফদের নেই। টিম ৮ ম্যাচে ৬ পয়েন্ট নিয়ে গোঙাচ্ছে। টিমের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভরসা আন্দ্রে রাসেল দুঃসহ ফর্মের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। ওপেনিং জুটি পরের পর ম্যাচে ব্যর্থ হচ্ছে। শেষ দু’টো মাচ কুৎসিত ভাবে হারতে হয়েছে। এ দিন ইডেনে ঢোকামাত্র দেখা গেল, সিএবি ইন্ডোর থেকে বেরোচ্ছেন ক্যারিবিয়ান অলরাউন্ডার আন্দ্রে রাসেল। টিম তখন সবেমাত্র মাঠে পুরোদমে ট্রেনিংয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বোঝা গেল, অফ ফর্মের অতলে ক্রমশ তলিয়ে যাওয়া রাসেল, নিজের রুদ্রমূর্তি ফিরে পেতে চেষ্টা চালাচ্ছেন অক্লান্ত। সে কারণেই ইন্ডোরে আলাদা সেশন।

কিন্তু শনিবারের ম্যাচে পাঞ্জাবের বিরুদ্ধে তাঁকে খেলানো হবে তো? কুইন্টন ডি’ককও ফিরে আসছেন নাকি? প্রথম সাতটা ম্যাচে কিছু না করতে পারায় অষ্টম ম্যাচে, অর্থাৎ ইডেনে গত গুজরাট টাইটান্স ম্যাচে নিজেদের ওপেনিং জুটি পরিবর্তন করে কেকেআর। সুনীল নারিনের সঙ্গে ওপেন করতে পাঠানো হয় রহমানুল্লা গুরবাজকে। কিন্তু গুরবাজ কিছু করতে পারেননি। বরং ১ রান করে আউট হয়ে যান। শেষ পর্যন্ত কী হবে, জানা নেই। কিন্তু এ দিন শুরুর দিকে দীর্ঘ সময় নেটে ব্যাটিং করতে দেখা গেল কুইন্টনকে। যা গুজরাট ম্যাচের আগে তিনি। সে ভাবে করেননি। অর্থৎ, প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যেমন একেবারে শ্রেয়স-যুদ্ধে রভমান পাওয়েলের খেলার সম্ভাবনা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রাক্তন টি-টোয়েন্টি অধিনায়ককে এ দিন দু’দফায় ব্যাটিং করিয়ে রাখা হল। ভেঙ্কটেশ আইয়ারকে আবার দেখা গেল, স্পিনারের বিরুদ্ধে লম্বা সময় পরিশ্রম করতে। স্পিন বরাবরই ভালো খেলেন ভেঙ্কটেশ। কিন্তু গুজরাটর বিরুদ্ধে সাই কিশোরের সামনে যে ভাবে তাঁকে দিশেহারা দেখিয়েছে, তারপর আলাদা ট্রেনিং না করে আর উপায় কী?

সানরাইজার্স ম্যাচের পিচেই পাঞ্জাব কিংসের বিরুদ্ধে খেলতে হবে কেকেআরকে। এ দিন কেকেআরের জনা পাঁচেক গেলেন পিচ-দর্শন করতে। ডোয়েন ব্র্যাভো। চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত। অভিষেক নায়ার। অজিঙ্ক রাহানে। মইন আলি। যা শোনা গেল, তাতে গুজরাট ম্যাচের চেয়ে খুব তফাত হচ্ছে না এবারের পিচ। সেই মন্থর প্রকৃতির হবে। টার্ন থাকবে। বল থমকে আসবে। না, কেকেআর এবার আর কোনও ফরমায়েশ পেশ করেনি পিচ নিয়ে। গুজরাট ম্যাচের পিচ এ ম্যাচেও দেওয়া হচ্ছে একটাই কারণে- এ পিচ থেকে মাঠের সর্বত্র প্রায় সমান মাপের।