স্টাফ রিপোর্টার: সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত ধরে ভারতীয় ক্রিকেটে নতুন অধ্যায় শুরু হতে চলেছে আজ। ভারতীয় বোর্ডের ৩৯তম সভাপতি হিসাবে তাঁর আত্মপ্রকাশ ঘটবে।
এমন এক সন্ধিক্ষণে বোর্ডের সর্বোচ্চ আসনে সৌরভ বসছেন, যখন চূড়ান্ত ডামাডোলে ভারতীয় বোর্ড। এবং প্রায় ধ্বংসস্তূপ থেকে বোর্ডকে টেনে তোলাই হবে বেহালার মহারাজের প্রধান কাজ।ড্যামেজ কন্ট্রোলের জন্য বরাদ্দ সময় আগামী দশ মাস।
মঙ্গলবার সকালে সৌরভ কলকাতা থেকে মুম্বই যান। এয়ারপোর্টে আসতে দেরি হওয়ায় বিমান প্রায় মিস করতে বসেছিলেন তিনি। কোনওমতে বিমানে ধরে মুম্বই পৌঁছান। সেখানে বিমানবন্দরে পৌঁছতেই মিডিয়ার হুড়োহুড়ি। শুভানুধ্যায়ীরা এয়ারপোর্ট এসেছিলেন অভিনন্দন জানাতে।
দেরি হয়ে যাওয়ায় হোটেল ট্রাইডেন্ট না গিয়ে সরাসরি সৌরভ যান ক্রিকেট সেন্টারে। সেখানে তাঁকে ঘিরে আর এক প্রস্থ উন্মাদনা। চলে আসেন বিনোদ রাই, ডায়না এডুলজি, সাবা করিম, রাহুল জোহরিরা। জমকালো অভ্যর্থনার পর তাঁকে ভিতরে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর বিনোদ রাইয়ের সঙ্গে আলোচনা। কথা হয় সাবা করিম, রাহুল জোহরির সঙ্গেও। তবে বিনোদ রাইয়ের সঙ্গেই বেশি সময় সৌরভকে দেখা যায়। ছিলেন ডায়নাও।
বুধবারের গুরুত্বপূর্ণ সভার সভাপতিত্ব করবেন বিনোদ রাই। প্রথামাফিক বোর্ডের ব্যাটন তুলে দেবেন সৌরভের হাতে। অধিনায়ক থাকাকালীন যে ব্লেজার পরতেন, এদিন বৈঠকেও সেটি পরেই যোগ দেবেন সৌরভ। ১৯ বছর আগে ভারতীয় দলের অধিনায়কত্বের ব্যাটন তাঁর হাতে উঠেছিল অনেকটা এমন পরিস্থিতিতেই। জাতীয় দলের অধিনায়কের যে মুকুট তিনি মাথায় তুলেছিলেন তাতে ছিল অসংখ্য কাঁটা। গড়াপেটার ছায়ায় তখড় ঢাকা পড়েছে ভারতীয় ক্রিকেট। অন্যদিকে সন্দেহের তর্জনী তুলে প্রত্যেকে পরস্পরের দিকে ছুটছে। এক অদ্ভুত পরিস্থিতি। সৌরভ সেই সব আবর্জনা সরিয়ে ভারতীয় ক্রিকেটকে নিয়ে যান বিশ্ব আঙিনায়। শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসান। সেদিন তিনি মাঠে ঘটিয়েছিলেন। বুধবার থেকে নামবেন মাঠের বাইরে। পর্দার পিছনে। বাইশ গজে বিরাট কোহলি ক্যাপ্টেন হলেও মাঠের বাইরে সৌরভ হলেন অধিনায়ক। ক্রিকেটকে সামনে নিয়ে তাঁকে সব কিছু করতে হবে। সহজ নয়। তবে কোহলির থেকে অনেক কঠিন। কিন্তু সকলে বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন, এবারও সৌরভ সফল হবেন।
বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসাবে সর্বসম্মতভাবে সৌরভ মনোনয়ন পত্র দিয়েছেন। সচিব হিসাবে যোগ দিচ্ছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ছেলে জয়। সহ-সভাপতি মহিম ভার্মা। কোষাধ্যক্ষ অরুণ ধুমাল। কেরলের জয়েশ জর্জ যুগ্ন সচিব। বর্তমান বোর্ডের সংবিধান অনুযায়ী সৌরভকে আগামী জুলাইয়ের শেষে বোর্ড থেকে সরে যেতে হবে। মাত্র দশমাসের মেয়াদ হলেও তাঁকে নিয়ে দেশের ক্রিকেট মহলে কৌতূহলের শেষ নেই। ক্রিকেটার হিসাবে তাঁর অভিজ্ঞতার ঝুলি ছিল পরিপূর্ণ। প্রশাসক হিসাবেও পিছিয়ে নেই। সিএবি-তে প্রথমে সচিব, পরে সভাপতি হয়ে গুরু দায়িত্ব সামলেছেন। তাই প্রশাসনের দিকটাও তিনি জানেন। চেয়ারে বসে সৌরভকে ঘরোয়া ক্রিকেটের হাল সামলানোর পাশাপাশি আইসিসিতে ফিরিয়ে আনতে হবে ভারতের হারানো গৌরব। স্বার্থ সংঘাত নিয়ে সমস্যাও অনেকদিনের। সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত অফিসাররাও বিরক্ত। তাই পরিবর্তন জরুরী। জাতীয় নির্বাচক কমিটি, ক্রিকেট অ্যাডভাইসারি কমিটি গঠন–এসব তো থাকছেই। এন শ্রীনিবাসন, অনুরাগদের হাত ঘুরে আসা বোর্ড সৌরভ কেমন চালান, সেটাই এখন দেখার।
৩৩ মাস ধরে চলা বোর্ডের একটা অধ্যায়ের সমাপ্তিও ঘটছে বুধবার। সিওএ বিনোদ রাই সরে যাচ্ছেন। তিনি বলছিলেন, “এতদিন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে কাজ করেছি। তাই পদত্যাগ নয়, আদালতের নির্দেশে দায়িত্ব বুঝিয়ে সরে যাচ্ছি।” সৌরভ সভাপতির আসনে বসার আগেই তাঁকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন ডায়না এডুলজি। “ওর মতো যোগ্য ব্যক্তি এই মুহূর্তে কে আছে? সৌরভ কেমন ক্রিকেটার ছিল তা সকলেই জানেন। আমার বিশ্বাস, আগামী দিনে ওর হাত ধরে ভারতীয় ক্রিকেট উন্নতির শিখরে পৌঁছবে।” বলেন এডুলজি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.