Advertisement
Advertisement

Breaking News

Derby

ব্রহ্মপুত্র তীরে আজ বাঙালি বনাম বাঙালি, ১৫ বছর আগের স্মৃতিতে ডুব বাইচুং-ব্যারেটোর

১৫ বছর আগে গুয়াহাটিতে 'ফেভারিট' মোহনবাগানকে হারিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল।

Bhaichung Bhutia and Jose Barreto recall derby memory in Guwahati
Published by: Anwesha Adhikary
  • Posted:January 11, 2025 9:59 am
  • Updated:January 11, 2025 10:14 am  

দুলাল দে: একা চিডির হ্যাটট্রিকেই শেষ হয়ে গিয়েছিল সুভাষ ভৌমিকের ইস্টবেঙ্গল। পাঁচ গোল হওয়ার পর আর দ্রুত সুভাষকে সরিয়ে কর্তারা কোচ করে নিয়ে আসেন ফিলিপ ডি’রাইডারকে। ফেডারেশন কাপ সেমিফাইনালে ফের মুখোমুখি করিমের মোহনবাগানের। ২০০৯- এর ৩১ ডিসেম্বর। আর সেই গুয়াহাটি। তবে এবার ফের গুয়াহাটিতে যে স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হতে চলেছে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান, ১৫ বছর আগে সেই ইন্দিরা গান্ধী অ্যাথলেটিক স্টেডিয়ামে কিন্তু ম্যাচটা হয়নি। হয়েছিল, গুয়াহাটির অন্য মাঠে।

কিন্তু গুয়াহাটিতে তো বটেই। একদিকে লাল-হলুদ জার্সিতে বাইচুং-ইয়াকুবু। আরেকদিকে মোহনবাগান জার্সিতে ব্যারেটো-চিডি। এবারের মতো ১৫ বছর আগেও ডার্বির দিনটায় ফেভারিট ছিল মোহনবাগান। কিন্তু মাঠে ফলাফলটাই বদলে দেন বাইচুংরা। ব্যারেটোর পেনাল্টি নষ্ট। ইয়াকুবুর গোলে ইস্টবেঙ্গলের এদিয়ে যাওয়া। শেষ মুহূর্তে বাইচুংয়ের থ্রু ধরে গোল মেহতাব হোসেনের। ২ গোলের ধাক্কা সামলাতে পারেনি মোহনবাগান। ডার্বি জিতে বছরের প্রথম দিনে পুরো দলটা নিয়ে গুয়াহাটির মল্টিপ্লেক্সে ‘থ্রি ইডিয়টস’ দেখতে ছুটেছিলেন বাইচুংরা।

Advertisement

১৫ বছর পর ফের গুয়াহাটিতে মুখোমুখি ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান। লাল হলুদ, সবুজ-মেরুনের দুই তারকাও এখন অতীত। ব্যারেটোকে যখন ফোনে ধরা হল, তিনি তখন ভারতে ফেরার জন্য সাও পাওলো হয়ে প্যারিসে। সেখান থেকে বিমান ধরবেন মুম্বইয়ের। আরেকজন বাইচুং ভুটিয়া, যখন ফোনে ধরা গেল, তখন তিনি দিল্লিতে। কাকতালীয়ভাবে দু’জনেই কলকাতায় আসছেন ১১ জানুয়ারি রাতে। তার আগে ১৫ বছর আগের স্মৃতিতে ডুবলেন দু’জনেই।

বাইচুং: আমার পুরনো ঘটনা খুব একটা মনে থাকে না। তবে এটুকু মনে আছে, ম্যাচের আগে আমি ফিট ছিলাম না। খেলতে পারব কি না, সেটা নিয়েই নিশ্চিত ছিলাম না। রাইডার খেলার জন্য খুব জোরাজুরি করছিলেন। আমিও চাইছিলাম ম্যাচটায় মাঠে নামতে। কারণ, ফেডারেশন কাপে আমার খুব একটা সাফল্য নেই। এর আগে মোহনবাগানের হয়ে একটা ফেডারেশন কাপ জিতেছি। ইস্টবেঙ্গলের হয়ে তখনও একটাও জেতা হয়নি। বোধহয় দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নেমেছিলাম। একেবারে শেষ দিকে নিজেদের ডিফেন্ডারদের থেকে বল নিয়ে মোহনবাগানের চারজনকে ড্রিবল করে একটা ডাউন দ্য মিডল দৌড় দিয়েছিলাম। তারপর বক্সের মাথায় মেহতাবকে থ্রু। সেখান থেকে গোল।

ব্যারেটো: সেবার মাচের আগে সবাই ধরেই নিয়েছিল, ডার্বি আমাদের পকেটে। আর তার পরেই আমার পেনাল্টি মিস। শেষ পর্যন্ত বাইচুংরা ম্যাচটা জিতে নিল। দিনটাও ভাবুন। ৩১ ডিসেম্বর। সেই সময় এমনিতেই একটা উৎসবের আবহ। আমাদের জন্য মাচের পর ড্রেসিংরুমে নেমে এসেছিল শ্মশানের স্তব্ধতা। আমরা কেউ সেদিন ডিনার করিনি। ম্যাচটার পর থেকে একটা ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি, দল, ধারাবাহিক পারফরমান্স যাই থাকুক না কেন, ডার্বিতে কেউ ফেভারিট নয়।

বাইচুং: আমার এক্ষেত্রে একটি আলাদা মত আছে। বারেটোর সঙ্গে আমিও একমত, ডার্বিতে দলের প্রতি ফুটবলারদের কমিটমেন্টের একটা ব্যাপার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দেখতে হবে, কমিটমেন্ট করছেন কোন ফুটবলররা। একটা ভালো দলে প্রতিটি বিভাগে একজন করে লিডার থাকে। যে বা যারা অ্যাটাকিং লাইন, মিডফিল্ড কিংবা ডিফেন্সে নেতৃত্ব দেয়। এবার দলট থেকে এই তিন নেতাকে চোট বা অন্যকিছু কারণে সরিয়ে নেওয়া হল। তাহলে কি একই রকমভাবে পারফরম্যান্স করা সম্ভব? সম্ভব নয়। কিন্তু এটাও ঠিক। দলগত ভাবে খুব একটা পার্থক্য না থাকলে ডার্বিতে কিছু বলা মুশকিল।

ব্যারেটো: মোহনবাগানের টিম ম্যানেজমেন্টকে প্রচুর নম্বর দেব। ধারাবাহিকভাবে একটা দলের মান ধরে রেখেছে। অন্তত ভারতীয় ফুটবলে সবাই এটা মেনে নেবে, মোহনবাগান এই মুহূর্তে এক নম্বর দল। কোনও একটা ম্যাচে বাজে ফল হয়ে গেলেও তাতে সামগ্রিক চিত্রটি বদলাবে না।

বাইচুং: এখন ফুটবলটা অনেক বেশি বিজ্ঞান। একই দল। অথচ অস্কার ব্রুজো কোচ হয়ে এসে দলটার খেলায় ডিসিপ্লিনটাই বদলে দিয়েছেন। জানি মোহনবাগান ভালো দল। কিন্তু ঠিকভাবে প্ল্যান করে খেললে, আটকে দেওয়া যায়। আর যে কথাটা বলছিলাম, ডার্বিতে দলের প্রতি, জার্সির প্রতি কমিটমেন্ট। এটা ড্রেসিংরুমে না থাকলে বোঝা যাবে না। তবে অস্কারের যে সিদ্ধান্তটা আমার ভালো লেগেছে, সেটা হল, বেশ কয়েকটা ম্যাচে দেখলাম, আনোয়ারকে ডিফেন্স লাইন থেকে সরিয়ে ডিফেন্ডারদের মাথায় রেখেছে। এতে ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্সিভ শেপটা আরও ভালো হয়েছে। তাই ম্যাচটা কী হবে বলার সত্যিই মুশকিল। চোটের জন্য অনেক ফুটবলারকে পাওয়া যাবে না। তবু অস্কারের উপর আমার ভরসা আছে। ১৫ বছর আগে এরকমই অবস্থায় আমরা কিন্তু গুয়াহাটিতে হারিয়েছিলাম মোহনবাগানকে। শনিবারও একই দৃশ্য দেখা যেতে পারে।

ব্যারেটো: বাইচুংয়ের কথা মানছি। অঘটন ঘটতেই পারে। তারপর অস্কার কোচ হওয়ার পর ইস্টবেঙ্গলকে আর একেবারে ফেলে দেওয়া যায় না। কিন্তু মোলিনার হাতে এত বেশি অপশন যে, কোচের কাজটা অনেকটা সুবিধা হয়ে যায়। অনেকে বলেন, এত ভালো ভালো ফুটবলারকে নিয়ে মোলিনার প্রথম একাদশ করতে সমস্যা হয়। আমার তো মনে হয় এতে কোচের সুবিধা হয়। অস্কারের হাতে বিকল্প ফুটবলার নেই। ফলে ও চাপে। এই যে দেখুন, চোটের জন্য অনিরুদ্ধ থাপা নেই। মনে হয় এই খবরে মোলিনার রাতের ঘুম উড়ে যাবে? একটা দলে একসঙ্গে তিনজন বিশ্বকাপার মাঠে নামছে। মাচ ঘোরানোর জন্য এর থেকে আর ভালো কী হতে পারে?

বাইচুং: শুনলাম ভেনেজুয়েলা থেকে এসে রিচার্ড সেলিস সরাসরি মাঠে নামতে পারে। এটা অনেকটা জুয়া খেলার মতো। ভালোও হতে পারে। খারাপও। সেবার চিডির হ্যাটট্রিকের ম্যাচে উগা ওপারা সবে কলকাতায় এসেছিল বলে বেঞ্চে ছিল। এবার পাঁচ গোল খেয়ে যাওয়ায় সুভাষ ভৌমিক ভিলেন হয়ে গেলেন। আবার উগাকে নামিয়েও যদি এরকম বাজে কিছু হত, তখন সবাই বলত, একজন নতুন ফুটবলারকে না দেখে খেলিয়ে দিল! রিচার্ড সেলিসকে দলের সঙ্গে প্রাকটিস না করিয়ে খেলানেটা জুয়া খেলার মতো।

ব্যারেটো: মোহনবাগানের যেটা প্লাস পয়েন্ট সেটা হল, লিস্টন কোলাসো-সহ ভারতীয় ফুটবলাররাও দারুণ ফর্মে। এই যে আশিক কুরুনিয়নের মতো ভারতীয় ফুটবলার খেলতে পারছে না। মনে হয় না মোলিনার কোনও সমস্যা হচ্ছে। কিন্তু ভয় একটাই। ১৫ বছর আগে এই গুয়াহাটিতেই ম্যাচের আগে কেউ ভাবতেই পরেননি আমরা হারতে পারি। সেই রাতটা আর ফেরত চাই না। এবারও সবাই মোহনবাগানকে এগিয়ে রাখছি। যদি পরামর্শ বলেন, তাহলে বলি, প্লিজ এই মাচটর আগে কী হয়েছে সব ভুলে মাথায় রাখতে হবে, মরশুমের প্রথম ম্যাচ খেলতে নামছি।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement