ফাইল ছবি
দুলাল দে: শনিবারের ডার্বির আগে দু’দলের কোচের মানসিক অবস্থান বোঝানোর জন্য একদিন আগেপরে করা দু’দলের কোচ, যথাক্রমে ইস্টবেঙ্গল কোচ অস্কার ব্রুজো এবং মোহনবাগানের হোসে মোলিনার বক্তব্য তুলে ধরলেই বোঝা যাবে দু’দলের আসল চিত্রটা।
অস্কার ব্রুজো তাঁর বক্তব্যে বেশি ব্যস্ত রইলেন এগিয়ে থাকা মোহনবাগানকে কীভাবে আটকাবেন, তার ব্যাখ্যা দিতে। উলটোদিকে মোলিনা বলে গেলেন, তাঁর দল এগিয়ে থাকলেও ডার্বিতে কাউকে হেলা ফেলা করা ঠিক হবে না। মানে, ম্যাচটায় ইস্টবেঙ্গল যদি ড্র-ও করে সেটা খুব একটা খারাপ হবে না। মোহনবাগানের সেখানে ড্র-টাই হারের শামিল। আর ডার্বির আগে এরকম পরিস্থিতি তৈরি হলে খুব একটা কিছু বলারও নেই। কারণ, একজন কোচ বসে আছেন, আইএসএলের লিগ টেবিলের শীর্ষে। আরেকজন বসে আছেন, একাদশতম স্থানে। অথচ এই কিছুদিন আগে পর্যন্ত মনে হচ্ছিল, ডিসেম্বর মাসটা গেলেই হয়তো বোঝা যাবে, অবশেষে এই মরশুমের ইন্ডিয়ান সুপার লিগে ইস্টবেঙ্গলের প্রথম ছয়ে খেলা নিশ্চিত। কিন্তু লাল-হলুদের জন্য পরিস্থিতি সেই একই জায়গায়। অস্কার ব্রুজো দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম ছয়ে থাকার জন্য যে মারাত্মকভাবে আশা জেগে উঠেছিল, এই মুহূর্তে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না, ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের আদৌ সেই স্বপ্ন পূরণ হবে কি না। তবে তার সঙ্গে ডার্বির কোনও সম্পর্ক নেই। এই ম্যাচটা দু’দলের কোচের কাছেই ভিন্নভাবে সম্মানের লড়াই।
কলকাতা ডার্বিতে যে ম্যাচটায় ইস্টবেঙ্গল ২ গোলে হারল, সেদিন কলকাতায় এসেই কোচের বেঞ্চে বসেছিলেন অস্কার ব্রুজো। স্বাভাবিকভাবেই সেই ম্যাচে কিছুই করার ছিল না। তারপর বল যত গড়িয়েছে, তাঁর কোচিংয়ে ফর্মে ফিরেছে ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু শনিবারের ডার্বির আগে দলে চোট-আঘাতের পরিমাণ এতটাই বেশি যে ভ্রু কুঁচকে রয়েছেন অস্কার। মোলিনার অবশ্য সে সব কোনও সমস্যা নেই। ম্যাচের আগে সাংবাদিক সম্মেলনে যেরকম সোজাসুজি বলে দিয়েছেন, অনিরুধ থাপাকে পাওয়া যাবে না। কিন্তু হাতে এত বিকল্প ফুটবলার যে, তাতে অবশ্য খুব একটা কিছু সমস্যা হবে না।
অস্কার ব্রুজো অবশ্য বুঝতে পারছেন, শনিবারের ম্যাচটা তাঁর কোচিং কেরিয়ারের কতটা গুরুত্বপূর্ণ। যে কারণে বারবার বলছেন, “আমার জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ এসেছে। শনিবারের ম্যাচটা তার মধ্যে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। মোহনবাগান দারুণ ফর্মে রয়েছে। তবে ওদের দৌড় থামানোর জন্য যা করার ঠিকই করব।” পাশাপাশি লিগ টেবলের শীর্ষস্থানে থেকেও শনিবারের ডার্বির আগে নিজেদের হট ফেভারিট তকমা দিতে একদমই রাজি নন মোহনবাগান কোচ মোলিনা। বললেন, “মানছি আমরা শীর্ষে রয়েছি। কিন্তু ডার্বিটা সম্পূর্ণ আলাদা। ইস্টবেঙ্গল সম্পূর্ণ একটা আলাদা ম্যাচ। আগে দু’দলের কী হয়েছে ভুলে যান। শনিবার ৯০ মিনিট ঠিকঠাক খেলাটা খুবই জরুরি। ইস্টবেঙ্গল কী করল, তার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, আমরা আমাদের খেলাটা ঠিক করে খেলতে পারলাম কি না। যদি আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলতে পারি, তাহলে কোনও সমস্যা হবে না।”
কলকাতা লিগের ডার্বিতে ২ গোলে জিতলেও সেদিনের ম্যাচের সঙ্গে শনিবারের গুয়াহাটি ডার্বির কোনও তুলনাই টানতে চাইছেন না মোলিনা। নিজে স্বীকারও করলেন, সেদিন অস্কারের জন্য প্রথম ম্যাচ ছিল। তার পর দলটাকে নিয়ে প্রচুর উন্নতি করেছে। তাই শনিবারের ডার্বি নিঃসন্দেহে অন্যরকম। অনিরুধ থাপা ডার্বির বাইরে চলে গেলেও গ্রেগ আর দিমি অনেকটাই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তবুও এখনই দিমি আর গ্রেগের খেলার ব্যাপারে সব কিছু খুলে বলতে চাইলেন না। শুধু বললেন, “দিমি আর গ্রেগকে নব্বই মিনিট খেলাব কি না, শনিবার সকালে আরও একবার ওদের ফিটনেস টেস্ট না দেখার আগে কিছু বলা সম্ভব নয়।” উলটোদিকের দলে নেই তালাল, ক্রেসপোর মতো দুই নির্ভরযোগ্য বিদেশি। মোলিনা অবশ্য শুনতেই রাজি নন, ইস্টবেঙ্গল দলে কারা আছে, আর কারা নেই তা নিয়ে। তিনি ব্যস্ত শুধুই নিজের দল নিয়ে।
উলটোদিকে অস্কার ব্রুজো বলছেন, “ইস্টবেঙ্গলের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেখছি, চাপে পড়লে দলটা ভালো খেলে। তাই চাপে থাকাটা আমাদের জন্য ভালো। তবে মাঠের বাইরে আমাদের নিয়ে কে কী আলোচনা করছে, তা নিয়ে মাথা ঘামাতে চাই না। কারণ, ডার্বির মতো ম্যাচের আগে মাঠের বাইরে নানা কথাবার্তা চলবেই। মাঠের বাইরের বিষয়ে বেশি মাথা না ঘামিয়ে আমরা বরং ব্যস্ত নিজেদের ঘর ঠিক করতে। মোহনবাগান অবশ্যই ভালো দল। ওদের বিরুদ্ধে কীভাবে খেলতে হবে, তার জন্য কিছু পরিকল্পনা করছি আমরা। ডার্বির আবেগ ঝেড়ে ফেলে আমরা এখন শুধুই শনিবারের ম্যাচ নিয়ে ভাবছি। গত কয়েকটা ম্যাচে যেভাবে ছোট-খাট ভুল থেকে গোল খেয়েছি, সেই ভুলটা যাতে না করতে হয়, আমাদের নজর এখন শুধুই সেদিকে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.