Advertisement
Advertisement
রোনাল্ডো

গনগনে যৌনজীবন থেকে মেসির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, ৩৫-এর রোনাল্ডো এক বর্ণময় চরিত্র

ফুটবলের স্বর্গীয় পৃথিবীতে পারিজাত একটাই জন্মায়! সেটা সিআর সেভেনই

Football Star Cristiano Ronaldo celebrates 35th birthday
Published by: Subhamay Mandal
  • Posted:February 5, 2020 12:02 pm
  • Updated:February 5, 2020 10:17 pm

জন্মদিন আজ ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর। তাঁর দাম্ভিক কথাবার্তা। গনগনে যৌনজীবন। মেসির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা। সবাই জানে। কিন্তু সেটাই আসল রোনাল্ডো? লিখছেন রাজর্ষি গঙ্গোপাধ‌্যায়

ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো কেমন, আজ বলতে পারত নুহুজেট গুইলেন। যে এখন পরম নিশ্চিন্তের ঘুমে, বেঁচে থাকলে আজ যে কুড়ি বছরের যুবক হত। নুহুজেট বলতে পারত, কীভাবে তার জন্য চার-চারটে বছর লড়ে গিয়েছিলেন কোনও এক সিআর। রক্তের সম্পর্ক না থেকে। শুধু আত্মিক সম্পর্কের রক্তবীজ থেকে। দুরারোগ্য কর্কটরোগ ছিল খুদে রিয়াল মাদ্রিদ ভক্তের। বাঁচত না নুহুজেট। বাঁচেওনি। কিন্তু বেঁচে থাকলে আজ সে সব বলতে পারত।

Advertisement

ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো কেমন, আজও অনায়াসে বলে দেবেন নেরেদিয়া গালার্দো। বহু বছর আগের কথা, তবু মনে থাকা উচিত। সিআর রিয়াল মাদ্রিদ যাওয়ার আগে স্প্যানিশ মডেলের সঙ্গে একটু ‘আলাপ-পরিচয়’ হয়েছিল আর কী, তারপর খানিক ‘সুখদুঃখের’ গল্প! তা, একটু উষ্ণতার জন্য দু’জন যখন আসতেন কাছাকাছি, রোনাল্ডো নাকি সব সময় টকটকে লাল অন্তর্বাস পরে উদয় হতেন। তাতে আবার হাতির শুঁড় আঁকা!

Advertisement

[আরও পড়ুন: কাজে এল না শ্রেয়সের সেঞ্চুরি, টেলরের চওড়া ব্যাটে প্রথম ওয়ানডে-তে জয়ী]

ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো কেমন, বলে দেবে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার নিপীড়িত মানুষগুলোও। যাদের জন্য নিজের ব্যালন ডি’ওর পুরস্কার নিলামে তুলে দিয়েছিলেন সিআর সেভেন! ঠিক পড়লেন, এটা সেই ব্যালন ডি’ওর ট্রফি যা ফুটবলারের শ্রেষ্ঠত্বের রাজমুকুট। এটা সেই ব্যালন ডি’ওর, যা লিওনেল মেসি পাবেন শুনে ফ্রান্সে এবার যাননি রোনাল্ডো। অথচ সেই একই পুরস্কার, ২০১৩-এ পাওয়া সেই বিশ্বশাসনের স্বীকৃতি কিনা হেলায় বিক্রি করে দিয়েছেন পর্তুগিজ ফুটবলদস্যু! বিশ্বাস না হলে, গাজায় যান। যুদ্ধবিধ্বস্তদের জিজ্ঞাসা করুন। ওরা আজও বলে দেবে। নিলাম থেকে ওঠা টাকাটা তো ওরাই পেয়েছিল!

ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো কেমন, আজও জানেন ব্যালন ডি’ওর অনুষ্ঠানের জনৈক সঞ্চালক। সেবার ফ্রান্সে ছিল ব্যালন ডি’ওর, পেয়েছিলেন রোনাল্ডো। আর সঞ্চালক মহাশয় ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে, বিস্ময়ের বৃষ্টিতে ভিজে পুরস্কার প্রাপককে চিবিয়ে-চিবিয়ে বলতে শুনেছিলেন, “পুরস্কারটা দিলে, ভাল করেছ। কারণ আমিই এটা পাওয়ার যোগ্য। এই ফুটবল পৃথিবীতে আমিই এক, দুই, তিন! তারপর বাকিরা।” স্ফীত নাসা, গর্বিত গ্রীবা, আকাশছোঁয়া লাফ শেষে দু’পা ফাঁক করে দাঁড়ানো আপাত অহঙ্কারী মানুষটার আজ পঁয়ত্রিশ হল। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো আজ পঁয়ত্রিশে পা দিলেন। কিন্তু তাঁকে নিয়ে লিখতে বসে যেন সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। কী লিখব? লিওনেল মেসি? আর্জেন্তিনীয় ফুটবল মহাপুরুষের সঙ্গে ক্রিশ্চিয়ানোর চিরন্তন রোমহর্ষক যুদ্ধ? মাঠে, মাঠের বাইরে? ধুর, ধুর। মাঠে ১-১। মাঠের বাইরে ৭-১! লিওনেল মেসির অবস্থা সেখানে জার্মানি বিশ্বকাপে ধুলিসাৎ ব্রাজিলের মতো।

ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর পঁয়ত্রিশ বছরের জীবনকোষ্ঠীতে চোখ বুলোলে সময় সময় মনে হবে, এ মানুষটার কোনও প্রতিদ্বন্দ্বী থাকতে পারে না। প্রতিদ্বন্দ্বীকে তো আগে জন্ম নিতে হবে! পুরোটাই তো ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো বনাম ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। দুই বিপরীতধর্মী সত্বার অবিরাম ঠোকাঠুকি। লিওনেল মেসি নামের সাত্বিক ফুটবল পুরোহিতের সেখানে কোনও জায়গাই নেই! বর্ণময় প্রেমময় জীবন একটা দিক। লিওনেল মেসি আজ পর্যন্ত হাতির শুঁড় আঁকা অন্তর্বাস পরে প্রেমিকার সামনে হাজির হয়েছেন বলে খবর নেই! প্যারিস হিলটন থেকে ইরিনা শায়েক, জর্জিনা রডরিগেজ থেকে কিম কারদাশিয়ান- নামীদামি সুপার মডেলদের সঙ্গে নিভৃতে নিশিযাপন করেছেন বলেও কেউ জানে না। মেসির প্রেম মেরেকেটে দেড়খানা। পুরনো এক বান্ধবী, তারপর সোজা আন্তোনেল্লা। আর আন্তোনেল্লাও প্রেমে গদগদ হয়ে ‘উফ, কী শরীর, কী দেখতে, প্রথম দেখাতেই শেষ হয়ে গেছিলাম’ মার্কা কথাবার্তা ইহজীবনে বলেননি। যেটা জর্জিনা, ক্রিশ্চিয়ানোর বর্তমান প্রেমিকা দিনকয়েক আগে বলেছেন পর্তুগিজ বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে।

লিওনেল মেসিকে ‘সেক্স টয়’ হিসেবে ব্যবহার করে ‘সেক্সি টাইম’ কাটাতে কারও ইচ্ছে হয়েছে বলে শোনা যায়নি। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর ক্ষেত্রে যা গিয়েছে। গুগল সার্চ দিলে জেসমিন লেনার্ডের সরস কাহিনি পাবেন। আর ফুটবল সমাজের রীতিনীতি, তাদের পূজনীয় বিগ্রহের গালে থাপ্পড় মেরে কথাবার্তা, চরিত্রের এই দিকটারই বংশধর। মাঠে একবার সমর্থকদের ধিক্কার ধ্বনির প্রত্যুত্তরে দলা পাকানো তাচ্ছিল্য ছুড়ে সিআর বলেছিলেন, “আমাকে দেখতে সুন্দর। আমি কিংবদন্তি। আমার টাকা আছে। তাই ওরা আমাকে হিংসে করে!” তাঁর মায়াবী, নির্ভুল ফ্রিকিক রহস্য নিয়ে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। রোনাল্ডো চোখ টিপে উত্তর দিয়েছিলেন, “ফ্রিকিক রহস্য? আমি শুধু নেটের দিকে তাকিয়ে নিজেকে বলি, ফ্রিকিকটা নাও, ক্রিশ্চিয়ানো!”

আবার, আশ্চর্যের হল, এর একটা উলটো পৃথিবীও আছে। যেখানে বসবাস আর এক ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর। সেখানে থাকে তাঁরই অল্টার ইগো। নারীবেষ্টিত লাস্যময় জীবন যেখানে নেই, নেই অহেতুক বাগাড়ম্বর। বরং সেখানে নীরবে থাকে এক শিশুমন যে অক্লেশে বিলিয়ে দিতে পারে প্রিয় সব কিছু। চ্যারিটি অনেক তারকাই করেন। লিওনেল মেসিরও প্রচুর আছে। কিন্তু গোল্ডেন বুট বা ব্যালন ডি’অর নিলামে তুলে দেওয়া? শুধু অচেনা, অজানা কিছু প্রাণের আর্তনাদ শুনে? কিংবা প্রাণাধিক প্রিয় ক্লাবের প্র্যাকটিস দেখতে বহু দূর থেকে ছুটে আসা জনৈক সমর্থককে গাড়িতে লিফট দিতে চাওয়া, বৃষ্টির মধ্যে সে কীভাবে ফিরবে ভেবে? কোথায়, লিও মেসি এসব কখনও করেছেন বলে তো শোনা যায়নি।

নুহুজেটের কথা লিখেছিলাম শুরুতে। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো তখন সবেমাত্র রিয়াল মাদ্রিদে এসেছেন। তিনি খবর পান, রিয়ালের সাদা জার্সির বাইরে বর্ণান্ধ ন’বছরের এক খুদে সমর্থক আক্রান্ত ক্যানসারে। ড্রাইভার পাঠিয়ে টিম হোটেলে নিয়ে এসেছিলেন খুদে ‘প্রেমিক’-কে। লিফটে করে সটান নেমে তাকে চমকে দিয়ে বলেছিলেন, “কী রে, কিছু বলবি না আমাকে?” পরে নুহুজেটের বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, আশা কম। একমাত্র আমেরিকায় চিকিৎসা সম্ভব। কিন্তু খরচ প্রচুর। রোনাল্ডো বলে দেন, টাকা তিনি দেবেন। তাঁর মায়েরও ক্যানসার ছিল যে! শেষ একটা বছর দূর্মূল্য প্রাইভেট নার্সিং হোমে রেখে খুদে সমর্থককে বাঁচাতে চেয়েছিলেন সিআর, পুরো খরচ একা টেনে। চেয়েছিলেন ম্যাচের নব্বই মিনিটে, এগারো জনের ‘ওয়াল’ এক গোলায় উড়িয়ে, জীবনের ফ্রিকিকটা মারতে। পারবেন মেসি এসব?

পারেননি রোনাল্ডোও। ‘টেক দ্য কিক, ক্রিশ্চিয়ানো’ বললেও নেট সেদিন কথা শোনেনি। কিন্তু কোথাও গিয়ে রোনাল্ডো পেরেছেনও। ভীষণ অসম্ভবের সামনে তিনি আজ বিশ্বজুড়ে চেষ্টার সংজ্ঞা। আর তাই, এহেন রোনাল্ডোর পঁয়ত্রিশতম জন্মদিনে থাক না চর্বিতচর্বণে প্রায় ছিবড়ে হয়ে যাওয়া তাঁর ফুটবল অ্যান্টি-হিরো সত্বা নিয়ে টানাহেঁচড়া। থাক না তাঁর বন্য নৈশজীবন, অগণিত গার্লফ্রেন্ড, দাম্ভিক কথাবার্তা নিয়ে অবিরাম চর্চা।

বিদ্রোহের গালে বিপ্লবী চুম্বন আঁকতে সব সময় ভালবেসেছে পৃথিবী। আঁকুক। থাকুক সে সব। কিন্তু ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো মানে তো শুধু বিদ্রোহের বুনো ঝোপ নয়। ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো মানে সেই ঝোপে ফুটে থাকা ভোরের ফুলও। যার সামনে থাকতে ইচ্ছে করে নতজানু হয়ে। অস্ফুটে যাকে বলতে ইচ্ছে করে ‘খোদার কসম জান, আমি ভালবেসেছি তোমায়।’ লিওনেল মেসি নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। তাঁর ভয় নেই। গনগনে পৌরুষের সঙ্গে নিষ্পাপ শৈশবের এমন অনির্বচনীয় প্যাকেজ আর আসবে না। ফুটবলার আসে, ফুটবলার যায়। ফুটবল কিংবদন্তি আসে, ফুটবল কিংবদন্তি যায়। কিন্তু আজও, ফুটবলের স্বর্গীয় পৃথিবীতে পারিজাত একটাই জন্মায়!

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ