Advertisement
Advertisement
Lalam Puia

ছেড়েছেন মদ্যপান, অতীত নিয়ে একরাশ আক্ষেপ, কেমন আছেন মোহনবাগানের প্রাক্তনী পুইয়া?

একরাশ প্রতিভা নিয়ে অকালেই শেষ হয়েছিল তাঁর ফুটবল।

How is former Mohun Bagan footballer Lalam Puia feeling amidst regrets about the past?

বাগুইআটির ফ্ল্যাটে হাবিবুরের সঙ্গে লালম।

Published by: Prasenjit Dutta
  • Posted:April 26, 2025 3:49 pm
  • Updated:April 26, 2025 3:49 pm  

দুলাল দে: লালম পুইঁয়াকে মনে আছে? মোহনবাগানের প্রাক্তন ফুটবলার? একটা সময় যাঁর প্রতিভা নিয়ে কুর্নিশ জানাতেন ফুটবল বিশেষজ্ঞরা। যাঁর মধ্যে ভবিষ্যতের তারকাকে খুঁজে পেয়েছিলেন সেই সময় সবাই। কিন্তু অসংযমী জীবন, অতিরিক্ত মদ্যপান শেষ করে দিয়েছিল লালম পুঁইয়াকে। লালম যখন আই লিগে মোহনবাগানে খেলছেন, সেই সময় বাইচুং-ব্যারেটোরা সবুজ-মেরুন জার্সিতে চূড়ান্ত ফর্মে। তারপরেও মিজোরামের এই স্ট্রাইকারকে মাঠের বাইরে রাখার সাহস দেখাননি কোনও মোহনবাগান কোচ। কিন্তু আগেই যে বললাম, মদ্যপানে এতটাই আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন, যার প্রভাব ধীরে ধীরে পড়তে শুরু করেছিল পারফরম্যান্সে। একটা সময় মদ্যপানে এতটাই আসক্ত হয়ে পড়লেন, দলের সতীর্থদের সঙ্গে সমস্যা তৈরি করলেন। ভাঙচুর শুরু হল। 

ফুটবলারটির প্রতিভার কথা ভেবে মোহনবাগান কর্তারা হাত সরিয়ে নেননি। বরং সঠিক পথে নিয়ে আসার জন্য লালম পুঁইয়াকে ভর্তি করা হয়েছিল রিহ্যাব সেন্টারে। বেশ কিছুদিন রিহ্যাব সেন্টারে কাটানোর পর কিছুটা ঠিক হয়েছিলেন। কিন্তু যে কে সেই। একরাশ প্রতিভা নিয়ে অকালেই শেষ হয়েছিল লালম পুঁইয়ার ফুটবল। এখনও মোহনবাগানের সেই সময়কার ফুটবলার, কর্মকর্তা, সমর্থকদের সামনে লালম পুঁইয়ার প্রসঙ্গ উঠলেই সকলে বলে ওঠে, ‘কী ফুটবলার ছিল। অসংযমী জীবন-যাপনে কীভাবে শেষ হয়ে গেল।’

Advertisement

সেই লালম এখন সত্যিই ভালো নেই। মিজোরামে নিজের ঘর ছেড়ে এসে এখন রয়েছেন বাগুইআটিতে আরেক প্রাক্তন ফুটবলার হাবিবুর রহমানের বাড়িতে। বলা ভালো, হাবিবুর রহমানের আশ্রয়ে।

মোহনবাগানে খেলার সময়েই চাকরির প্রস্তাব পেয়েছিলেন। কিন্তু সেই সময় ঠিক করেছিলেন, চাকরি করবেন না। মোহনবাগান থেকে মিজোরামে ফিরে ঠিক করেছিলেন, কোচিং করবেন। নিয়েছিলেন ‘ডি’ লাইসেন্স। কিন্তু মিজোরামের যে অঞ্চলে লালম পুঁইয়া থাকেন, সেখানে খেলাধুলোর চল কম। মিজোরামের আরেক তারকা ফুটবলার, জেজে থাকেন লালম পুঁইয়ার বাড়ি থেকে চার ঘণ্টা দূরত্বে। তিনি অবশ্য এখন মিজোরামের বিধায়ক। আরেক তারকা ফুটবলার, টুলুঙ্গার বাড়িও লালম পুঁইয়ার বাড়ি থেকে অনেকটাই দূরে। বাড়ির সামনে বাচ্চাদের খেলাধুলোর কোনও চল না থাকায়, সেভাবে কাউকে কোচিংও করাতে পারেন না। মোহনবাগানে খেলে যে টাকা-পয়সা পেয়েছিলেন, তাতেই চলছিল জীবন। বিয়ে করেন। সন্তান হয়। কিন্তু একটা সময় তাঁরাও ছেড়ে চলে গিয়েছে লালন পুইঁয়াকে। পরিবার, অর্থ সব হারিয়ে এখন রীতিমতো খারাপ অবস্থার মধ্যে রয়েছেন মোহনবাগানে খেলা একদা জনপ্রিয় ফুটবলার।

সবথেকে বড় কথা, এই মুহূর্তে ‘মদ্যপান’ থেকে অনেকটাই দূরে তিনি। কিন্তু যতদিনে মদ্যপান ছাড়লেন, ততদিনে লালম পুঁইয়াকে ছেড়ে সব কিছু চলে গিয়েছে। মিজোরাম থেকে হাবিবুরের কাছে কাতর আবেদন লালমের, তাঁর জন্য কিছু একটা করে দিতে।

বাগুইআটিতে পাঁচ তলা বাড়িতে ১৮টি ঘর হাবিবুর রহমানের। সেখানে একটা ঘরে মিজো ফুটবলারের থাকতে কোনও অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। লালম পুঁইয়াকে মিজোরাম থেকে বাগুইআটিতে নিজের বাড়িতে এনে রেখেছেন হাবিবুর। বাগুইআটিতে একটা ফুটবল ক্যাম্প ছাড়াও বারাসতে একটা অ্যাকাডেমি চালান হাবিবুর। বারাসতের অ্যাকাডেমিটা লালমের উপরে দায়িত্ব দেবেন বলে ঠিক করেছেন তিনি। সঙ্গে লালমের আয়ের জন্য একটা পথও ভেবেছেন হাবিবুর।

আলভিটো, নবি, মেহতাবদের উদ্যোগে এখন প্রতি মাসে প্রায় ৯-১০টা প্রদর্শনী ম্যাচ খেলেন প্রাক্তন ফুটবলাররা। সেখানে হাবিবুরও খেলেন। ঠিক করেছেন, আলভিটো, মেহতাবদের বলবেন, এখন থেকে ম্যাচগুলিতে লালম পুঁইয়াকেও দলে রাখতে। যাতে প্রতি মাসে একটা ভালো টাকা পেতে পারেন তিনি। বাগুইআটিতে হাবিবুরের বাড়িতে বসে লালম বলছিলেন, ‘সত্যিই দাদা, একদম ভালো নেই। তখন যদি একটু সিরিয়াস হতাম..।’ লালমের কথা উঠলে সবাই এখনও সেই কথাই বলেন, ‘লালম পুঁইয়া তখন যদি একটু সিরিয়াস হতেন…।’ সময় চলে গেলে আর ধরা যায় না। লালম পুঁইয়াকে দেখে যদি পরবর্তী প্রজন্মের ফুটবলাররা কিছু শিখতে পারে…।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement