Advertisement
Advertisement
উয়াড়ী

পুড়ে ছাই উয়াড়ী ক্লাব, ‘ঐতিহ্য’ নষ্টের ঘটনা বিশ্বাস করতে পারছেন না প্রাক্তনরা

আইএফএ সচিব উৎপল গঙ্গোপাধ্যায় জানান, শর্ট সার্কিটের জন্যই আগুন লেগেছে।

Wari athletic club was set on fire, ex footballers ammused
Published by: Subhajit Mandal
  • Posted:April 1, 2019 4:12 pm
  • Updated:April 1, 2019 4:12 pm

স্টাফ রিপোর্টার: সকালে সাড়ে দশটা হবে। আগুনের লেলিহান শিখা তখন নেই। কিন্তু তার প্রভাবে প্রায় ধূলিস্যাৎ হয়ে যাওয়া উয়াড়ী ক্লাবের কাঠামোটা কোনওরকমে দাঁড়িয়ে আছে। ১২১ বছরের ক্লাব। ভোড়ের আগুনে যা ধূলিস্যাৎ হতে নিল মাত্র কয়েক ঘণ্টা।

উয়াড়ী মানে ময়দানের ঐতিহ্য। একটা সময় কলকাতা ময়দানে যার নামডাক ছিল ইস্টবেঙ্গলমোহনবাগানের থেকেও বেশি। শহুরে ময়দান তো বটেই, এই ক্লাব থেকে উঠে এসে দেশের হয়ে খেলেছেন, এমন ফুটবলারের উদাহরণ অসংখ্য। তাই শতাব্দী প্রাচীন ক্লাবের ধ্বংসের খবর প্রকাশ্যে আসতেই হা-হুঁতাশ শুরু হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

[আরও পড়ুন: কোয়েসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে ধীরে চলো নীতি লাল-হলুদ কর্তাদের]

ময়দানের প্রায় সব টেন্টেই যা হয়, উয়াড়ীতেও হত। ক্রিকেটার বা ফুটবলাররা এসে তাদের কিটস রেখে যেত। সোমবার প্র‌্যাকটিস। তাই সাত সকালে ক্লাবের সামনে আসতেই চক্ষু চড়কগাছ প্রত্যেকের। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, খেলোয়াড়দের কারও বুট, কিটস পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। বেশ কিছু ক্রিকেটারের প্যাড, কাশ্মীরি উইলোর ব্যাটও এখনও মেঝেতে পড়ে থাকা ছাইয়ের সঙ্গে মিশে গিয়েছে। ফারাক করা যাচ্ছে না কিছুর। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, বোঝাই যাচ্ছে না তো আলাদা করা যাবে কী করে।

Advertisement

উয়াড়ী মানে সবার প্রথমে বেশ কিছু নাম মাথায় চলে আসবে। যেমন সমরেশ চৌধুরি। কলকাতা ময়দানের পিন্টুদা। ইস্টবেঙ্গলের ঘরের ছেলে। কিন্তু তাঁর উত্থান তো এই উয়াড়ী ক্লাব থেকেই। বাঘা সোমের মতো কিংবদন্তি কোচ তাঁকে এখানে প্র‌্যাকটিস করাতেন। সমরেশ চৌধুরি তো খবর ভোরেই পেয়ে গিয়েছেন। তিনি এখন যে ব্যাংকে কাজ করেন, সেখান থেকেই একজন খবরটা তাঁকে দেন। সমরেশ বাবু বলছিলেন, “প্রথমে বিশ্বাস করিনি।

বলেছিলাম, সকালে মজা করিস কেন? ও তখন বলল, আরে না মজা নয় সত্যি। পুইড়া ছাই হইয়া গ্যাছে আপনার উয়াড়ী ক্লাব। খুব কষ্ট হইতাছিল।”
না এখানেই শেষ নয়। সমরেশবাবু এবার যেন অতীতের মহাসাগরে ডুব দিলেন। বলছিলেন, “আমার প্রথম ক্লাব। খুব মনে আছে, বাঘা সোম আমাকে প্র‌্যাকটিস করাত। সবাইকে প্র‌্যাকটিস করানোর পর আমাকে আলাদা করে প্র‌্যাকটিস করাত। শুধু আমি! এই ক্লাব থেকে অসংখ্য ফুটবলার উঠে এসেছে। জীবনের প্রথম যে ক্লাবে খেলে উঠে এসেছি সেই ক্লাব পুড়ে ছাই হয়েছে শুনে বুঝতে পারছিলাম না কী করব। কিন্তু খুব কষ্ট হচ্ছে।”
আপনি কি যাবেন? উত্তর এল, “এই বয়সে নড়াচড়া করাই কঠিন। তবে চেষ্টা একবার করব। দেখা যাক এরপর কী হয়। ভাবতে পারছি না ক্লাবের পুড়ে যাওয়ার ব্যাপারটা। এতদিনের ঐতিহ্য একবারে ধুলোয় মিশে গেল। ক্লাব হয়তো ঠিক হবে, কিন্তু সেই গরিমা আর থাকবে না।”

পরিমল দে’কে ফোনে পাওয়া যায়নি। গৌতম সরকারকে ফোনে ধরলে জানা গেল তিনি বাইরে আছেন। কিন্তু ঐতিহ্য ধ্বংসের খবর শুনে রীতিমতো চমকে গেলেন। তিনি বলছিলেন, “খিদিরপুর, ভ্রাতৃ সংঘ, বালি প্রতিভা, উয়াড়ীর মতো ফুটবল ক্লাবগুলোর এখন এমনই অবস্থা। কেউ তো আর দেখে না। অথচ কলকাতা ময়দানে এরাই প্রচুর ফুটবলার উপহার দিয়েছে। একাধিক ফুটবলার দেশের হয়েও খেলেছে। একশো বছরের বেশি বয়সের একটা ক্লাব এভাবে ধ্বংস হয়ে গেল, অথচ আমরা কেউ কিছু করতে পারলাম না। এই ব্যর্থতা আমাদের। খবরটা শুনে চমকে গিয়েছিলাম। খুব খারাপ লাগছে।”

[আরও পড়ুন: টাকা নেই, জার্সি বেচে নির্বাচনী লড়াইয়ে ‘পাহাড়ি বিছে’ বাইচুং]

গৌতম সরকার এটাও জানিয়েছেন, শুধু প্রাক্তন ফুটবলার নয় যারা বাংলা ফুটবলকে ভালবাসেন তাদের জন্যেও এটা খারাপ খবর। এরপর তাঁর পালটা প্রশ্ন, “হয়তো সবকিছু আবার ঠিক হয়ে যাবে, কিন্তু এতদিনের সেই তাঁবু, সেই পরিবেশ কি আর ফিরবে? এত সহজ নয়।”
সুভাষ ভৌমিককে জিজ্ঞাসা করা হল বিষয়টি নিয়ে। তিনি জানিয়েছেন, “মনে হচ্ছে ইলেকট্রিক্যাল শর্ট সার্কিট। এখন যা দিনকাল পড়েছে তাতে বড় বড় হসপিটাল, অফিসে আগুন লেগে যাচ্ছে কিন্তু কিছু করা যাচ্ছে না। আশা করি পশ্চিমবঙ্গের ক্রীড়া দপ্তর ব্যাপারটি গুরুত্ব দিয়ে দেখবে। এবং আমি নিশ্চিত ব্যাপারটা ঠিকভাবে সামলেও ওঠা যাবে।” ইস্টবেঙ্গলের এই প্রাক্তন কিংবদন্তি অবশ্য এটা মেনে নিয়েছেন, ব্যাপারটা শকিং।

কী কারণে আগুন? এখনও সেটা পরিষ্কার নয়। তবে আইএফএ সচিব উৎপল গঙ্গোপাধ্যায়কে ফোনে ধরা হলে, তিনি জানান, শর্ট সার্কিটের জন্যই আগুন লেগেছে। পরিস্থিতি দেখে ব্যবস্থা নেবেন। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল? উত্তর এল, আমরা ময়দানের সব তাঁবুতেই এই সমস্ত ব্যবস্থার সঠিক খেয়াল রেখে এসেছি। তাই যদি হয় তাহলে উয়াড়ী পুড়ল কেন? উত্তরের জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই যে।

ছবি: শংকর নাগ দাস

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ