প্রসূন বিশ্বাস: ক্রীড়া পরিকাঠামো নিয়ে কথা বলতে গেলে ইদানিং ওড়িশার কথা বলে থাকেন অনেকেই। এবার সেই বলার দিন শেষ। বাংলার ক্রীড়া উন্নয়নের জন্য আমূল পরিবর্তন আনতে চলেছে রাজ্য ক্রীড়া দপ্তর। নিঃশব্দে তার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে বছর কয়েক আগেই।
রাজ্য সরকার আটটি ‘হাই পারফরম্যান্স স্পোর্টিং অ্যাকাডেমি’ চালু করতে চলেছে। এর মধ্যে রয়েছে ফুটবল, আর্চারি, সাঁতার, ব্যাডমিন্টন, রাইফেল শুটিং, টেবল টেনিস, টেনিস, মহিলা ফুটবল অ্যাকাডেমি। ফুটবল, আর্চারি, টিটি আর টেবল টেনিস আগেই শুরু করে দেওয়া হয়েছে। এবার পুরোদমে চালু হচ্ছে সাঁতার, ব্যাডমিন্টন, রাইফেল শুটিং ও মহিলা ফুটবল অ্যাকাডেমি। এর মধ্যে একমাত্র টেনিস অ্যাকাডেমিটিই বেঙ্গল টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে রাজ্য সরকারের যৌথ উদ্যোগে শুরু হওয়া।
এমনিতেই পরিকাঠামো উন্নয়নের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে অনেক আগে থেকেই। সল্টলেক স্টেডিয়াম সংলগ্ন একটি আন্তর্জাতিক হকি স্টেডিয়াম ও ডুমুরজলায় আরও হকির জন্য একটি অ্যাস্ট্রোটার্ফের মাঠ করা হয়েছে। সল্টলেকের হকি স্টেডিয়ামটি আবার আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করার ছাড়পত্র পেয়ে গিয়েছে। এবার উদ্বোধনের অপেক্ষায় সাঁতার অ্যাকাডেমি। এই প্রত্যেকটি অ্যাকাডেমিতে ভালো কোচ, ভিডিও অ্যানালিস্ট, একজন করে সিইও থাকছেন। রাজ্য সরকারের ফুটবল অ্যাকাডেমি তিন প্রধানের পাশাপাশি দারুণ পারফর্ম করছে বিভিন্ন বয়স ভিত্তিক প্রতিযোগিতায়। আর্চারি অ্যাকাডেমির শিক্ষার্থীরাও জাতীয় স্তরে ভালো পারফর্ম করছে। জাতীয় গেমসে সোনা পেয়েছে এখানকার তিরন্দাজ জুয়েল সরকার। ফুটবল অ্যাকাডেমিটি পরিচিত বেঙ্গল ফুটবল অ্যাকাডেমি নামে।
মেয়েদের ফুটবল নিয়েও শুরু হতে চলেছে ‘বেঙ্গল উইমেন্স ফুটবল অ্যাকাডেমি’। এই অ্যাকাডেমি পুরুলিয়ায় শুরু করার কথা থাকলেও সেখানে কিছু সমস্যা থাকায় কলকাতার সল্টলেকে বড় আকারে তৈরি করা হচ্ছে। আপাতত অনূর্ধ্ব ১৫ মেয়েদের নিয়ে একটি দল গঠন করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, বয়সভিত্তিক দুটি দল গড়া হবে। মেয়েদের এই ফুটবল অ্যাকাডেমিটি গড়ে উঠলে অনেকটাই লাভবান হবে বাংলার মহিলা ফুটবল। এমনিতেই এবার রিলায়েন্স ফাউন্ডেশন ইউথ ফুটবলে অনূর্ধ্ব-১৭ বিভাগে চ্যাম্পিয়ন ছেলেদের বেঙ্গল ফুটবল অ্যাকাডেমি। অনূর্ধ্ব-১৫ বিভাগে রানার্স বিএফএ। একই সঙ্গে বিসি রায় ট্রফির বাংলা দলের প্রথম একাদশে জায়গা পেয়েছে এই অ্যাকাডেমির ছয় ফুটবলার। সুভাষ সরোবরে সাঁতার অ্যাকাডেমিটিকেও ঢেলে সাজানো হচ্ছে। সেখানে থাকছে একটি ২৫ মিটারের ওয়ার্ম আপ পুল। আন্তর্জাতিক মানের ছয় লেনের ডাইভিং পুল, ভিডিও অ্যনালিস্ট রুম, আন্তর্জাতিক মানের ড্রেসিং রুম, মেডিক্যাল রুম। নিয়োগ হয়ে গিয়েছে কোচ ও ফিজিক্যাল ট্রেনার। সাইয়ের অভিজ্ঞ কোচ বিশ্বজিৎ দে চৌধুরিকে কোচের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। আপাতত ফুটবল, আর্চারি আবাসিক হলেও বাকি অ্যাকাডেমিতে আসা দূরের শিক্ষার্থীরা ইউথ হস্টেলে থাকার সুযোগ পাবে। আগামী দেড় বছরের মধ্যে সবকটি অ্যাকাডেমিকে আবাসিক করে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে।
দমদমে শুরু হতে যাচ্ছে রাইফেল শুটিং অ্যাকাডেমি। সেখানে থাকছে ইলেক্ট্রনিক্স শুটিং টার্গেট। ২৮ জন শিক্ষার্থীকে নেওয়া হবে এখানে। আসছে অত্যাধুনিক সরঞ্জাম। ব্যবস্থা থাকছে মনোবিদেরও। অ্যাকাডেমির নাম রাখা হয়েছে বেঙ্গল রাইফেল শুটিং অ্যাকাডেমি। দমদমে শুরু হতে চলেছে ব্যাডমিন্টন অ্যাকাডেমিও। নাম বেঙ্গল ব্যাডমিন্টন অ্যাকাডেমি। ছ’টা ম্যাট রাখা হবে এই অ্যাকাডেমিতে। এই প্রত্যেকটি অ্যাকাডেমির ট্রায়ালে যোগ দিতে পারবে জেলাস্তরে প্রতিনিধিত্ব করা ক্রীড়াবিদরাই। রাজ্য সরকারের এই অ্যাকাডেমিগুলোই স্বপ্ন দেখাচ্ছে বাংলার ক্রীড়া মহলকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.