সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চা, নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ধূমায়িত কাপ। বাড়ি হলে বোন চায়না। আর পথের ধারের চোয়ের দোকানের মাটির ভাড়। যেখানেই থাকুক না কেন, আবেদন কিন্তু একই। কোন আধারে এই স্বাদু তরল বন্দি হল, তা বড় কথা নয়। বড় কথা হল আপ্যায়নের অন্তরঙ্গতা। যা ভারতীয় চা’কে বিদেশেও আদরণীয় করে তুলেছে। এই চা বিক্রি করেই কোটিপতি হয়েছেন এক আমেরিকান মহিলা। শুনে খুব অবাক লাগছে ভাবছেন, নিশ্চই কেতাদূরস্ত কফিশপগুলির মতো চায়ের আউটলেট খুলে ব্যবসা শুরু করেছেন মহিলা। অভিজাত চা-প্রিয় মানুষ তাঁকে কোটিপতি করে দিয়েছে। একদম নয়, বারাণসীর গলি মহল্লায় মহিষের দুধের ধোঁয়া ওঠা চা। যার উপরে দুধের সর পুরো স্বপ্নের মতো ভেসে থাকে। সেই চা। একেবারে বারমেরের মারোয়ারির পট্টির গরম চায়ে, মালাই মারকে। জিভে জল এল তো? এই স্বাদেই হ্যাট কোটবাবুদের হৃদয় জিতে নিয়েছেন ব্রুক এডি।
ভারতীয় চায়ে মজে নিজের দেশেও পেতে চেয়েছিলেন অবিকল স্বাদ। পাননি, তাই নিজেই খুলে ফেললেন চায়ের দোকান। চাকরি ছেড়ে দিয়ে চায়ের দোকান দেওয়ার মতো আর্থিক সামর্থ্য তাঁর ছিল না। তাই নিজের গাড়িটাকেই চলমান চায়ের দোকান করলেন। সময় বুঝে শহরের ব্যস্ততম জায়গায় দাঁড় করিয়ে দিতেন গাড়ি। শুরু হয়ে যেত চা বিক্রি। খুব অল্প দিনেই জনপ্রিয়তা কেড়ে নিয়েছিলেন শ্রীমতি এডি। ভারতে অতিথিকে নারায়ণ হিসেবে মান্যতা দেওয়া হয়। বেড়াতে এসে তা ভালমতো উপলব্ধি করেছিলেন এডি। তাই ২০০৭-এ নিজে যখন চায়ের দোকান চালু করেন, তখন নাম দিলেন ‘ভক্তি চা’। সেই চা’ই তাঁকে শুধু প্রতিপত্তিই দিল না, এনে দিল খ্যাতিও। ২০১৪-তে সেরা পাঁচ মার্কিন উদ্যোগপতির তালিকায় উঠে এলেন ব্রুক এডি।
নিজেই জানালেন, চা ও ভারতপ্রীতির কথা। ২০০২ সালে ভারতে বেড়াতে এসেছিলেন শ্রীমতি এডি। এসেই বিচিত্র ভাষাভাষির রঙিন জীবনকে ভালবেসে ফেলেছিলেন তিনি। ২০০৬ নাগাদ দেশে ফিরে কলোরাডোর বাসিন্দা ব্রুক এমনই চায়ের স্বাদ পেতে উতলা হয়ে ওঠেন। পরিচিত এক কাফেতেও হানা দেন। চা পান করেন। কিন্তু সেই স্বাদ পাননি। এরপর নিজের গাড়িতেই খুলে বসলেন চায়ের দোকান ভক্তি চা। ছেড়ে দিলেন দশটা পাঁচটার চাকরি। দুই বাচ্চাকে সামলে দিব্বি চালিয়ে গেলেন দোকান।
এই প্রসঙ্গেই ব্রুক এডি বলেন, ‘হিপ্পি পরিবারে জন্মেছি। আমি একজন সাদা চামড়ার মানুষ। জন্মস্থান কলোরাডো। তাই স্বাভাবিকভাবেই মিশিগানের প্রতি আমার ভাললাগা গড়ে ওঠা উচিত। কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। ভালবাসতে শুরু করলাম ভারতকে। যেন প্রাণের টান। কিন্তু ভারতের সঙ্গে তো আমার কোনও নাড়ির যোগ নেই? তবুও ভারতকেই ভালবেসেছি। বৈচিত্রের মধ্যে যে ঐক্য, তা আমাকে টানে। যখনই আমি এদেশে আসি, তখনই নতুন কিছুর সঙ্গে পরিচিত হই। এটা একেবারই সত্যি।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.