নন্দন দত্ত, সিউড়ি: এক শতক পেরিয়ে গেলেও এখনও অটুট দাতাবাবা-তাঁতিপাড়ার দে পরিবারের সখ্যতা। আজও বন্ধুত্বের টানে কথা রাখতে মিষ্টির পসরা নিয়ে পাথরচাপড়ি মেলায় হাজির হয় তাঁতিপাড়ার দে পরিবার। প্রতিবছর কিছুটা ধারাবাহিকতা, কিছুটা ইতিহাস ধরে রাখার জন্যই অমৃতলাল, সনৎ দে-সহ ছ’ভাই মেলায় আসেন। আগে দাতাবাবার আস্তানার সামনে বটতলায় তালপাতার ছাউনির মধ্যে মিষ্টির ভিয়েন বসত। ভিয়েন থেকে দ্বারিকনাথ নিজের হাতে জিলিপি তৈরি করে দাতাবাবাকে খাওয়াতেন বলে দে পরিবারের দাবি। এখন কালের নিয়মে সে ছাউনি মেলার মাঝে চলে গিয়েছে। তবু তিনপুরুষের বন্ধুত্ব ধরে রাখতে তাঁতিপাড়া থেকে দ্বারিকানাথ দে পরিবার তাঁদের বিখ্যাত জিলিপি নিয়ে দাতাবাবার মেলায় হাজির হন। মুর্শিদাবাদ-সহ জেলার সম্ভ্রান্ত পরিবারের ভক্তরা এখনও এসে দ্বারিকের দোকানের সিন্নি কেনে। জিলিপি কিনে বাড়ি নিয়ে যায়। সিউড়ি থানার নগরী এলাকায় পাথরচাপড়িতে দাতাবাবার উরুষ ১২৬তম বর্ষ উদযাপন করল।
গত পনেরো বছর এই মেলা জেলা থেকে ভিন জেলা, রাজ্য থেকে আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছে গিয়েছে। কিন্তু মেলার পরম্পরা ধরে রেখেছেন তাঁতিপাড়ার দে পরিবার। দে পরিবারের বর্তমানের বয়োজ্যেষ্ঠ অমৃতলাল দে জানালেন, তাঁতি পাড়া থেকে খাঁকি বাবার মাধ্যমেই পাথরচাপড়ির জন্য মিষ্টির দোকান ডেকে এনেছিলেন স্বয়ং দাতাবাবা। বক্রেশ্বরের সাধক খাঁকিবাবার সঙ্গে দাতাবাবার বন্ধুত্ব নিয়ে এলাকায় নানা ইতিহাস আছে। অমৃতলালবাবু বলেন, দ্বারিকনাথ জানিয়েছিলেন, জিলিপি খেয়ে দাতাবাবার খুব ভাল লেগেছিল। সেই তার আমন্ত্রণে মেলায় যাওয়া। প্রথম জিলিপি দাতাবাবাকে তুলে দিয়ে তারপরে মেলায় বেচাকেনা করতেন। বর্তমানে সেই রীতি চলছে। আগে দাতাবাবার মাজারে জিলিপি উৎসর্গ করা হয় তারপরে দোকান শুরু। মেলায় আসার জন্য আগে থেকে প্রস্তুতি চলে। একমাস আগে থেকে তাতেই বিউলির ডাল, আতপ চালের গুঁড়ো তৈরি করতে হয়। সনৎ দে বলেন, “সময়ের সঙ্গে আমরা পালটেছি। আগে শুধু জিলিপি হত। এখন ২২ রকম মিষ্টি পদ হয়। সঙ্গে যোগ হয়েছে একটা রেষ্টুরেন্ট।”
মেলা কমিটির সম্পাদক ফৈয়জ আহমেদ বলেন আগের থেকে মেলার প্রসার অনেক বেড়েছে। আগে দুদিন হত।এখন মেলা সরকারিভাবেই সাতদিন চলে। দাতাবাবাকে ঘিরে এখনও নানা জীবন্ত ইতিহাস এই এলাকায় বহমান। সেই টানেই লোকে আসে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.