চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: মঙ্গলবারের পর বুধবার ফের দুই গোষ্ঠীর হিংসা ছড়াল আসানসোলে। আতঙ্কের জেরে বন্ধ হয়ে যায় শহর আসানসোলের দোকানপাট। বন্ধ হয়ে যায় বাস চলাচল। শুধুমাত্র সরকারি কিছু বাসকে রাস্তায় দেখা যায়। কার্যত বনধের চেহারা নেয় গোটা শহর। তবে দিনভর গুজবকে কেন্দ্র করে নতুন করে অশান্তি ছড়ায় আসানসোল স্টেশন সংলগ্ন এলাকায়। বেশ কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুরের পর আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। উত্তেজনা থামাতে গিয়েই ইটের আঘাতে আক্রান্ত হন বেশ কয়েকজন পুলিশকর্মী। ঘটনাস্থলে মোতায়েন রয়েছে বিশাল পুলিশবাহিনী। উপস্থিত রয়েছেন ৪ জন আইজি পদমর্যাদার অফিসার। এলাকায় রুটমার্চ করে পুলিশ। ‘গুজব ছড়াবেন না। গুজবে কান দেবেন না। এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা ও ভ্রাতৃত্ব বজায় রাখুন। দুষ্কৃতীদের প্ররোচনায় পা দেবেন না।’ শহরে মাইকিং করে বলতে হয় পুলিশকে।
বুধবার সকাল থেকে আসানসোলের রেলপাড় এলাকায় বিভিন্ন জায়গায় বিচ্ছিন্ন হিংসার ঘটনা ঘটতে থাকে। দুপুরের দিকে মহুয়াডাঙাল, ওকে রোড, শ্রীনগর, রামকৃষ্ণ ডাঙাল, আসানসোল স্টেশনের সাত নম্বর প্ল্যাটফর্ম সংলগ্ন এলাকায় ইটবৃষ্টি, ঝুপড়িতে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটে। শোনা যায় বোমা, গুলির শব্দও। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাঁদানে গ্যাসের সেল ছোড়ে পুলিশ। উত্তেজনা প্রবণ এলাকায় দুষ্কৃতীরা গুলি ছোড়েও বলে অভিযোগ। অন্য সমস্ত এলাকায় রাত পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও নিয়ন্ত্রণ হয়নি রামকৃষ্ণ ডাঙাল এলাকা। দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে ছোট বড় ১৫টি বেশি কাঁচা বাড়িতে আগুন লাগানো হয়। আসানসোল উত্তর থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয় মহিলারা। ভয়ে এলাকা থেকে পালাতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে মৃত্যু হয় এক মহিলার। আসানসোল উত্তর থানার রামকৃষ্ণ ডাঙাল এলাকার বাসিন্দা ওই মহিলা। মৃত মহিলার নাম প্রতিমা রাউত(৪৫)। পুলিশের কনভয় ঢোকার সময় হুড়োহুড়িতে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে প্রতিমাদেবীর। প্রতিমাদেবীর ছেলে সন্দীপ রাউতের অভিযোগ, পুলিশের কনভয় ঢোকার সময় তাঁর মা পালাতে পারেননি। তখন পুলিশের গাড়ি তাঁকে ধাক্কা দেয়। তখনই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। নিরাপত্তার দাবি জানাতে আসানসোল উত্তর থানায় যাওয়ার জন্য জড়ো হয়েছিলেন প্রতিমাদেবী। গুজব ছড়ায়, লাঠিচার্জ করতে পারে পুলিশ। শুরু হয় ছোটাছুটি। সেইসময় দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়ে গুরুতর আঘাত পান প্রতিমাদেবী। তড়িঘড়ি তাঁকে আসানসোল জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যু হয় তাঁর। প্রতিমাদেবীকে মৃত বলে ঘোষণা করার পর হাসপাতাল চত্বরেও উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশকর্মীদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় মৃতের পরিবারের লোকেরা। অন্যদিকে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়ে আসানসোলে শান্তি মিছিল করা হয় সিপিএমের পক্ষ থেকে।
মঙ্গলবার ওকে রোড এলাকায় রাম নবমীর আখড়ার ওপর হামলার চালিয়েছিল এক গোষ্ঠী। রানিগঞ্জের পর আসানসোলে তখন থেকেই দুই গোষ্ঠীর শুরু সংঘর্ষ হয়। সেই সময় যে সমস্ত রাস্তার ধারে দোকানপাট ছিল তা লুঠ হয়। লুট হয় রিলায়েন্স মার্টের নিচের তলার একটা অংশ। প্রচুর ঝুপড়ি দোকান আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। অস্থায়ী পার্টি অফিস পোড়ানো হয় তৃণমূলের। আখড়ার গাড়িতে আগুন ধরে। আগুন ধরে পুলিশের গাড়িতেও। ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে একজনকে বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। আহত ব্যক্তির অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানাগেছে। পুলিশ কমিশনার লক্ষ্মীনারায়ণ মীনা জানিয়েছেন, হিংসার ঘটনায় কোনও মৃত্যুর খবর নেই। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটেছিল তা এখন নিয়ন্ত্রণে। এক মহিলার দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে তবে তা পুলিশের গাড়িতে কিনা খতিয়ে দেখা হবে। মোট ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ছবি- মৈনাক মুখোপাধ্যায়
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.