দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: অভিষেক বচ্চন-রানি মুখোপাধ্যায় অভিনীত বলিউডের হিট সিনেমা ‘বান্টি অউর বাবলিকে’ও হার মানাল দীপ-সায়নী জুটি। কারণ বান্টি-বাবলি কখনওই পুলিশ সেজে কাউকে ঠকায়নি। কিন্তু এই প্রেমিকযুগল পুলিশ সেজে অফিসার ও গোয়েন্দাকর্তা পরিচয় দিয়ে দিনের দিনের পর দিন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা তুলেছে। আর সেই টাকায় নিজেদের বিলাসবহুল জীবনযাপন করে শুধু থামেনি, আশপাশের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ‘খুশি’ করেছে। নিজেদের গাড়িতেও ‘পুলিশ’ লিখে নিয়ে এলাকায় দাপিয়েও বেড়িয়েছে। তবে শেষ রক্ষা হয়নি, মহিলা পুলিশ অফিসার পরিচয় দিয়ে দোকান থেকে টাকা তুলতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েছে এই জুটি। ঘটনা বারুইপুর থানার মদারাটের দক্ষিণতলায়।
তদন্তে নেমে পুলিশ জেনেছে, সায়নী বিবাহিত। স্বামীর সঙ্গে ডির্ভোসের মামলা চলছে। দু’জনে আলাদা থাকে। সায়নীর মেয়ে বারুইপুরের একটি নামী ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ে। সম্প্রতি স্থানীয় যুবক দীপের প্রেমে পড়ে সায়নী। মাঝে-মধ্যেই দু’জনকে একসঙ্গে এলাকায় ঘুরতে দেখা যেত। নিজেদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্কও ছিল বলে পুলিশি জেরায় স্বীকার করেছে। দু’জনেরই রীতিমতো বিলাসবহুল জীবন কাটাচ্ছিল। বেশ কয়েকবার দু’জনে বাইরে প্রমোদভ্রমণেও গিয়েছে। তদন্তে পুলিশ জেনেছে এলাকারই এক প্রভাবশালী যুবনেতার দক্ষিণ হস্ত ছিল এই দীপ। ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে তোলাবাজির টাকা ওই নেতার মাধ্যমে কোনও ব্যবসায় খাটাত কি না, তা-ও তদন্ত করে দেখছে বারুইপুর জেলা পুলিশ।
বারুইপুর তো বটেই আশপাশের নামী হোটেল, রেস্তোঁরায় দু’জনকে দেখা যেত। নিজেদের পরিচয় দিত লালবাজারের পদস্থ পুলিশকর্তা বলে। দীপ কখনও বলত, সে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করে। এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য বিশেষ দায়িত্ব নিয়ে বারুইপুরে এসেছে। প্রথমে কারওই সন্দেহ হয়নি। পুলিশ তদন্ত করে আরও জেনেছে, কিছুদিন আগে প্রায় এক লাখ কুড়ি হাজার টাকা ধার করে একটি বাইক কেনে দীপ। সায়নীর একটি স্কুটি রয়েছে। তাতে ‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো। স্টিকার নিজের কেরামতিতেই বানিয়ে এনেছিল সে। পুলিশের পোশাক ভাড়া নিয়েছিল বারুইপুরের একটি দোকান থেকে। দু’জনেই সেই পুলিশের পোশাক আর টুপি পরে স্কুটি নিয়ে ছোট ছোট দোকানে হানা দিত। পান, গুটখার দোকান টার্গেট করত তারা। পুলিশ পরিচয় দিয়ে বারুইপুরের বেশ কিছু দোকান থেকে তোলা আদায় করত।
ব্যবসায়ীদের বলত, গুটখা, পানমশলা বিক্রি করা বেআইনি। তাই ব্যবসা করতে গেলে তোলা দিতে হবে। না হলে কড়া ব্যবস্থা নেবে। একরকম বাধ্য হয়ে কয়েকজন বাধ্য হয়ে তোলা দিয়েছিল। ব্যবসায়ীরা প্রশ্ন করলে বলত, বারুইপুর মহিলা থানায় কাজ করে সে। কিন্তু সোমবারের ঘটনা চমকে দেয় সায়নীকেই। এক দোকানে তোলা আদায় করতে যায় সে। কিন্তু ব্যবসায়ী তাদের সঙ্গে কথার মধ্যেই বারুইপুর মহিলা থানায় ফোন করে সব জানায়। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে চলে আসে পুলিশ। হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয় তাদের। সায়নীর ব্যাগ থেকে দু’টি সোনার আংটি মিলেছে। কিছুদিন আগে স্থানীয় এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে এই দু’টি জিনিস সে চুরি করে বলে অভিযোগ। তদন্ত শুরু হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.