আকাশনীল ভট্টাচার্য: বাড়ির মধ্যে থেকে রহস্যজনকভাবে উদ্ধার হল এক দম্পতির মৃতদেহ। খুন নাকি আত্মহত্যা, সে নিয়েও তৈরি হযেছে ধোঁয়াশা। এমন ঘটনায় বৃহস্পতিবার চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে নিমতা থানার রামপ্রসাদ নগর স্কুল রোডের ফিফথ লেন এলাকায়।
মৃত দম্পতি আশিস মুখোপাধ্যায় (৪৯) এবং টুম্পা মুখোপাধ্যায়ের (৩০) বিয়ে হয়েছিল আট বছর আগে। তাঁরা নিঃসন্তান ছিলেন। দোতলার বাড়ির উপরের তলায় থাকতেন আশিসবাবুর ছোটভাই অমিত মুখোপাধ্যায় এবং তাঁর স্ত্রী রিক্তা মুখোপাধ্যায়। তাঁদের এক সন্তান রয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, বেশ কয়েক বছর ধরেই বেকার ছিলেন আশিসবাবু। ফলে লক্ষ লক্ষ টাকা দেনার দায়ে জর্জরিত হয়ে পড়েছিলেন। স্ত্রী এলআইসি-র এজেন্ট ছিলেন। তাতেই কষ্টে-শিষ্টে সংসার চলত। নিচের তলাতেই গৌতম মুখোপাধ্যায় বলে এক ব্যক্তি ভাড়া থাকতেন। এদিন তিনিই প্রথমে ঘরে ঢুকে দেখেন, সিলিং থেকে আশিসবাবুর মৃতদেহ ঝুলছে আর মেঝেতে চাপচাপ রক্ত। আর সেই ঘরের বাইরে ঝুলছে স্ত্রী টুম্পাদেবীর মৃতদেহ। এমন দৃশ্য দেখে আতঙ্কে চিৎকার করে ওঠেন গৌতমবাবু। তাঁর চিৎকারেই উপর থেকে নেমে আসেন ছোটভাইয়ের স্ত্রী। যদিও অমিত বাবু তখন বাড়িতে ছিলেন না। এলাকার বাসিন্দারাও ভিড় জমান। খবর দেওয়া হয় নিমতা থানায়। পুলিশ এসে দেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছে।
কিন্তু কেন আত্মহত্যা করলেন আশিসবাবু? পুলিশের প্রাথমিক ধারণা, দীর্ঘদিন ধরে ধার-দেনায় ডুবে গিয়েছিলেন তিনি। লাগাতার পাওনাদাররা দেনা শোধ করার তাগাদা দিচ্ছিলেন। আর সেই কারণেই আত্মহননের পথ বেছে নেন তিনি। মৃত্যুর আগে নিজের হাতের শিরা কেটে রক্ত দিয়ে পাওনাদারদের নামও ঘরের মেঝেতে লিখে রেখে গিয়েছেন। সেই সঙ্গে রেখে গিয়েছেন একটি সুইসাইড নোট। কিন্তু স্ত্রীও কি আত্মহত্যাই করেছেন? নাকি স্ত্রীকে খুন করার পর আত্মঘাতী হয়েছেন আশিস মুখোপাধ্যায়, তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ।
এর পাশাপাশি আত্মহত্যার নেপথ্যে আরও একটি কারণ পুলিশের সামনে এসেছে। জানা গিয়েছে, আশিস ও অমিত মুখোপাধ্যায়ের বাবা শুধাংশু মুখোপাধ্যায় আগেই প্রয়াত হয়েছেন। মা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের নামেই রয়েছে তাঁদের বাড়িটি। কিন্তু বছর দুয়েক আগে মাকে বাড়ি ছাড়া করেছিলেন দুই ছেলে। বেলঘরিয়ায় এক আত্মীয়ের বাড়িতে থাকতেন তিনি। সম্প্রতি দুই ছেলের বিরুদ্ধে সম্পত্তি নিয়ে একটি মামলা করেন সন্ধ্যাদেবী। যার ফলে মা ও ছেলেদের সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল। এ সত্য স্বীকার করে নিয়েছেন ছোটভাইয়ের স্ত্রীও। এর কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই নাকি হতাশায় ভুগছিলেন আশিসবাবু। আর সেখান থেকেই আত্মহত্যা। তবে আসল কারণ বের করতে গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখছে নিমতা থানার পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.