নন্দন দত্ত, সিউড়ি: মহিলা স্ত্রী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না হলে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গ্রামের প্রসূতিরা যাবেন না। এমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দুবরাজপুরের সাহাপুর পঞ্চায়েতের ক্যুইঠা গ্রামের বাসিন্দারা। গ্রামের একজন প্রসূতিও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সন্তান প্রসবের জন্য যান না। পাশের গ্রাম সেলারপুরেও অর্ধেকের বেশি প্রসূতির প্রসব হয় বাড়িতে। তাই শুক্রবার নমাজের শেষে ক্যুইঠা মসজিদের লাগোয়া এলাকায় একটি স্বাস্থ্য সচেতনতা শিবির করে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর। সেখানে মসজিদের মৌলবি নজরুল হক গ্রামের প্রতিনিধি হিসাবে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিবর্তে কেন বাড়িতে প্রসব ভাল, তার স্বপক্ষে বক্তব্য রাখেন। এরপরই জেলা প্রশাসনের ভাবনা, গ্রামের দুই প্রশিক্ষিত দাই মাকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত করতে পারলে তারাই হয়তো গ্রামের প্রসূতিদের কেন্দ্রে নিয়ে যেতে উদ্যোগী হবেন।
[ভোটে দাঁড়িয়েছেন ঠিক, কিন্তু নিজের ফেলে আসা দায়িত্ব ভোলেননি কৃষিকর্তা]
মহম্মদবাজারের ভাঁড়কাটা অঞ্চলে বাড়িতে প্রসব বন্ধ করতে পেরেছে প্রশাসন। সেখানে প্রসবের আগেই প্রসূতিদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রাখার ব্যবস্থা করেছে। তাতে সফলতা মিলেছে। সেই আশায় শুক্রবার সংখ্যালঘু অধ্যুষিত গ্রাম ক্যুইঠাতে যান প্রশাসনের কর্তারা। ছিলেন সদর মহকুমা শাসক কৌশিক সিনহা, জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ি-সহ অনান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা। কারণ সরকারি হিসাবে গত এক বছরে ক্যুইঠা গ্রামে ৪৭টি শিশু প্রসব হয়েছে। যারা কেউ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হয়নি। পাশের গ্রাম সেলারপুরে ৮৫টি শিশুর জন্ম হয়েছে বাড়িতে। বাকি ৬৯টি শিশু স্বাস্থ্যকেন্দ্রে হয়েছে। মৌলবিদের নিয়ে গ্রামবাসীদের সচেতনতায় উদ্যোগী হলেও মৌলবি সাহেব জানিয়ে দেন, স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নতি না হলে কেউ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রসূতিদের পাঠাবেন না।
গ্রামবাসীদের সামনে প্রশাসকদের রেখেই নজরুল হক প্রশ্ন তোলেন, এই গ্রামের যাঁরা স্বাস্থ্যকর্মী তাঁরা কি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান? যান না। সেখানে গৃহবধূরা কীভাবে যাবেন? তাঁর দাবি, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিনা অনুমতিতে জোর করে জন্ম নিয়ন্ত্রণের জন্য কপার পরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মহিলা চিকিৎসক দরকার। প্রসূতিদের চড়-থাপ্পড় মারা হয়। জন্মের সময় মেয়েদের যৌনদ্বার অপ্রয়োজনে কেটে দেওয়া হয়। যা বাড়িতে বসে হয় না। চিকিৎসকরাও স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়ার জন্য নানা বাহানা করেন।
হিমাদ্রি আড়ি বলেন, ‘যা যা অসুবিধা তা দূর করার অবশ্যই চেষ্টা করা হবে। এই অসুবিধার কথা শুনতেই আপনাদের গ্রামে আসা।’ তিনি জানান, লেবার রুমে নার্স থেকে আরম্ভ করে সকলেই মহিলা থাকেন। প্রসূতি চিকিৎসক এমনিতেই কম। সেখানে মহিলা পাওয়া আরও মুশকিল। তবুও দাই মা-দের সরকারি কাজে যুক্ত করে বাড়িতে প্রসব বন্ধ করা যায় কিনা তা ভাবা হচ্ছে। এলাকার আশাকর্মী নাজমা বেগম বলেন, ‘আমরা সরকারি সুবিধার কথা প্রসূতিদের কতবার বলেছি। বিনা পয়সায় হাসপাতালে যাওয়া আসা, চিকিৎসা- সব পাওয়ার কথা বলেছি।’ স্বাস্থ্যকর্মী রাধাকান্ত সূত্রধর বলেন, ‘আমরা বাড়ি বাড়ি বোঝানোর চেষ্টা চালাচ্ছি।’ সদর মহকুমা শাসক কৌশিক সিনহা বলেন, ‘আপনারা প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের জন্য হাসপাতালে আসুন। সরকার আপনাদের সব অসুবিধা দূর করে দেবে।’
ছবি- বাসুদেব ঘোষ
[কিশোরীকে উত্যক্ত করার অভিযোগ, অনশন প্রত্যাহার করে পালালেন কোচবিহারের যুবক]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.