সুমিত বিশ্বাস: বাস্তব থেকে সিনেমা অনুপ্রাণিত হয়৷ আবার সিনেমাও কখনও কখনও বাস্তবকে হার মানায়৷ ঠিক কথাটাই মনে করিয়ে দিল পুরুলিয়ার বেগুনকোদর৷ ফাঁস হল বেগুনকোদরের পাঁচ দশকের পুরনো ‘ভুতুড়ে স্টেশনে’র রহস্য৷ আর ঘটনাক্রম যা দাঁড়াল তা যেন মনে করিয়ে দিল তরুণ মজুমদারের ‘কুহেলি’ সিনেমাকে৷ অবশ্য বিজ্ঞান মঞ্চ ও পুলিশের এ রোমহর্ষক অভিযানের এ কাহিনি জানলে সিনেমার রহস্যও ফিকে মনে হতে পারে অনেকের৷ যার সাক্ষী থাকল সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল৷ গোটা ঘটনা হল ক্যামেরাবন্দি৷
প্রায় পাঁচ দশক ধরে উসকানো জল্পনা ‘ভুতুড়ে’ স্টেশনের অপবাদ ঘোচাতে প্রশাসনের সাহায্যে বেগুনকোদরে রোমহর্ষক অভিযানে নামে বিজ্ঞান মঞ্চের নয় সদস্যের একটি দল৷ সমস্ত ঘটনা ক্যামেরাবন্দি করে সাক্ষী থাকল সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল৷ বৃহস্পতিবার রাত প্রায় ৯.৩০ মিনিট নাগাদ পুরুলিয়া থেকে রওনা দিয়ে ১০টা নাগাদ বেগুনকোদর পৌঁছায় বিজ্ঞান মঞ্চের দলটি৷ তাঁদের সঙ্গে কোটশিলা থানার পুলিশ ও জিআরপির একটি দলও ছিল৷ অশরীরীর সন্ধান পেতে স্টেশন চত্বরে নাইটভিশন ক্যামেরা, বিভিন্ন রঙের সার্চলাইট বসায় বিজ্ঞান মঞ্চ৷ স্টেশন বাড়িটির কাছে ভুতুড়ে ছাতিম গাছ ও কুয়োর পাশে কম্পাস বসায় তাঁরা৷ যে কোনও অশরীরী ধরে ফেলতে সক্ষম ওই সরঞ্জামগুলি৷
[গঙ্গাসাগরে নজিরবিহীন নিরাপত্তা, ৫০০ ক্যামেরায় নজরদারি প্রশাসনের]
স্টেশন থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরে যে কোনও পরিস্থিতির জন্য তৈরি হয়ে থাকে পুলিশ দল৷ বেশি মানুষ থাকলে রহস্যের কিনারা করতে অসুবিধা হবে বলেই এই ব্যবস্থা করা হয়৷ ক্রমেই গভীর হয়ে উঠে রাত৷ ঝিঁঝিঁর ডাক ও নিকষ অন্ধকারে তৈরি হয় গা ছমছমে পরিবেশ৷ অশরীরীর আগমনে মুহূর্ত গুনতে থাকেন বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যরা৷ রাত প্রায় দু’টো নাগাদ রেললাইন ধরে আসতে দেখা যায় কাউকে৷ আঁতকে ওঠেন সকলে৷ অল্প সময়েই কেটে যায় তা৷ জানা যায় তাঁরা রেলের লাইনম্যান৷ তারপর কেটে যায় বেশ কিছুক্ষণ৷ চার্জ শেষ হয়ে যাওয়ায় রাত দু’টো কুড়ি নাগাদ বন্ধ হয়ে যায় সার্চলাইট৷ তখনও পর্যন্ত কোনও অশরীরীর দেখা মেলেনি যন্ত্রে৷ রাত প্রায় ৩টে বেজে ১৫ মিনিট নাগাদ হঠাৎ কিছু দূরে দু’জন মানুষের ছায়া দেখতে পান বিজ্ঞান মঞ্চের সদস্যরা৷ দুম করে জ্বলে ওঠা দু’জোড়া নীল চোখ দেখে প্রথমে হকচকিয়ে গেলেও ওই সন্দেহভাজনদের তাড়া করে তাঁরা৷ তাঁদের চিৎকারে ছুটে আসে পুলিশ বাহিনীও৷ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁরা দেখতে পান সেখানে ছড়িয়ে রয়েছে তাসের পাতা, মদের বোতল৷ ওই জায়গায় মেলে ব্যবহৃত কন্ডোমও৷
[জীবিতকে মৃত বলে ঘোষণা করে স্কুলে শোকপালন, ২ দিন ছুটি!]
সন্দেহভাজনদের তাড়া করতে গিয়ে পড়ে গিয়ে আঘাত পান বিজ্ঞান মঞ্চের পুরুলিয়া শাখার সম্পাদক নয়ন মুখোপাধ্যায়৷ তিনি জানান, এই অভিযানে কোনও অশরীরীর দেখা পাননি তাঁরা৷ তবে ঘটনাচক্র কিছু অসামাজিক তত্ত্বের দিকেই নির্দেশ করছে৷ আতঙ্ক ছড়িয়ে জায়গাটিতে অসামাজিক কাজ করা হয় বলেও দাবি করেন তিনি৷ তবে একদিনের অভিযানে সব কিছু স্পষ্ট হয় না৷ তাই পনের দিন পর ফের ওই স্টেশনে রাত জাগবে বিজ্ঞান মঞ্চের দলটি৷
উল্লেখ্য, দক্ষিণ-পূর্ব রেলওয়ের রাঁচি ডিভিশনের কোটশিলা-মুরি শাখায় পুরুলিয়ার বেগুনকোদর স্টেশন গত পাঁচ দশক ধরে ‘ভুতুড়ে স্টেশন’ বলে সবার কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছে। এমনকী, এই আতঙ্কের জেরে বহুদিন এই স্টেশনও বন্ধ ছিল। বছর দশেক আগে এই স্টেশনটি চালু হলেও ভূতের আতঙ্ক তাড়া করে ফেরে যাত্রীদের। সেই আতঙ্কেরই অবসান হল বিজ্ঞান মঞ্চ ও পুলিশের হাত ধরে৷ সাক্ষী থাকল সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল৷
ছবি- অমিত সিংহ দেও
[উলুবেড়িয়া এবং নোয়াপাড়ায় উপনির্বাচনের দিন ঘোষণা]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.