সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জন্মসূত্রে তিনি বাঙালি নন। বংলার সংস্কৃতিতে তবু তিনি মিশে আছেন তাঁর অনবদ্য স্বকীয়তায়। গত শতকে গায়ক-নায়কের যে ধারা চালু ছিল তাতে দেশ পেয়েছে একাধিক স্মরণীয় নাম। তবে দেশের প্রথম সুপারস্টার যদি কাউকে বলতে হয়, তবে তিনি অবধারিতভাবে কুন্দনলাল সায়গল। আজ জন্মদিনে শিল্পীকে স্মরণ গুগলের ডুডলে।
[ দেশের জন্য পদক এনেছে ছেলে, ছবি পোস্ট করলেন গর্বিত মাধবন ]
জন্ম জম্মুতে। ১১ এপ্রিল, ১৯০৪। স্বল্পায়ু জীবন। আশৈশব গান ও অভিনয়ের প্রতি ভালবাসা। তারপর নানা গেরোয় বাঁধা বিড়ম্বিত জীবন। অবশেষে তুমুল খ্যাতি। রেখে যাওয়া স্মরণীয় মাইলফলক। সায়গল যেন এক রূপকথা কিংবা মিথ। অথচ এককালে হেন কোনও কাজ নেই যা করেননি। রেলের টাইমকিপার থেকে সেলসম্যান-সব কাজেই ইতিউতি ঘোরাফেরা করেছেন। কিন্তু মন পড়ে থেকেছে গানে ও অভিনয়ে। সেই ছোটবেলা থেকেই। ‘রামলীলা’য় সীতার ভূমিকায় অভিনয় করতেন। গানও গাইতেন। তবে এসব বিষয়ে বাবার বিশেষ উৎসাহ ছিল না। মা ভরসা জোগাতেন। মায়ের কাছেই সরগম-এ হাতেখড়ি। তারপর তালিম নিয়েছেন সংগীতের বিভিন্ন ধারায়। রাইচাঁদ বড়ালের সঙ্গে দেখা না হলে কুন্দনলালের জীবনের মোড় ঘুরত কিনা, সে প্রশ্ন মুলতুবিই থাক। তবে এক অচেনা তরুণের গুণগুণ শুনেই তিনি মোহিত হয়েছিলেন। হ্যাঁ, রাগসংগীতে সেরকম তালিম নেই ঠিকই। কিন্তু এ তরুণ যে বাজিমাত করবে তা বুঝতে ভুল হয়নি জহুরি রাইচাঁদ বড়ালের। বাকিটা ইতিহাস। ক্রমে পরিচয় পঙ্কজকুমার মল্লিক, কৃষ্ণচন্দ্র দে প্রমুখর সঙ্গে। আর ফিরে তাকাতে হয়নি কুন্দনলালকে। ভারতীয় সিনেমা ও সংগীতের জগতও পেয়ে গেল তার আকাশের অত্যুজ্জ্বল নক্ষত্রটিকে।
[ ‘এ ছবি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক ভিত নাড়িয়ে দেবে’ ]
মোটে ৪৩ বছরের জীবন। দেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তির বছরেই প্রয়াণ কুন্দনলালের। কর্মজীবন মোটামুটি বছর পনেরোর। এর মধ্যেই তুমুল খ্যাতি পান কুন্দনলাল। সাতটি বাংলা ছবিতে কাজ করেছিলেন। গান গেয়েছিলেন তিরিশটির মতো। একটা সময় ছিল যখন সায়গলের গানে মোহিত ছিলেন আপামর বাঙালি। এমনকী অরুণকুমার চট্টোপাধ্যায় যখন অভিনয় করবেন মনস্থ করেছেন, তখন তিনি গানও শিখতে গিয়েছিলেন। কারণ চোখের সামনে আছেন সায়গল। গান না জানলে সেকালে নায়ক হওয়া মুশকিল। প্রিন্স বড়ুয়াও সেই নমুনা রেখে গিয়েছেন। বাংলা ছায়াছবির গান কিংবা রবীন্দ্রসংগীতে অকল্পনীয় জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন সায়গল। তখনকার বম্বেতে চলে গিয়েও নিজের মাটি খুঁজে নিতে সময় লাগেনি। হিন্দির পাশাপাশি কাজ করেছেন অন্য ভাষাতেও। মোটে দেড় দশকে কুন্দনলাল যে পরিমাণ কাজ করেছিলেন, আর যেরকম খ্যাতি পেয়েছিলেন তাই-ই তাঁকে দেশের প্রথম সুপরাস্টার করে তুলেছিল। আজ হয়তো সুপারস্টারের সংজ্ঞা ও ধরন বদলেছে। কিন্তু গত শতকে স্বাধীনতাপূর্ব ভারতে কুন্দনলাল ছিলেন এক জনপ্রিয়তার ঝড়। যিনি তাঁর ঠিকানা লিখে রেখেছিলেন তাঁর গানে-অভিনয়ে। আজও তাই সেখানে ফিরতে হয় সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষকে। চিনে নিতে হয় কুন্দনলালকে। শিল্পীর ১১৪ তম জন্মদিনে তাঁকে ডুডলে শ্রদ্ধা জানাল গুগলও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.