কলহার মুখোপাধ্যায়: দু’টো বিস্কুট দেবে? একটু জল?
ফ্ল্যাটের জানালায় মুখ রাখা অশীতিপর বৃদ্ধার কাতর আবেদন শুনে শুক্রবার সকালে ভিড় জমে গিয়েছিল কালিন্দী হাউসিংয়ে। তাঁকে বিস্কুট পৌঁছে দিতে গিয়েই টনক নড়ে পড়শিদের। ফ্ল্যাটের দরজায় যে তালা!
খোঁজ খোঁজ খোঁজ। যা জানা গেল, তা শুনে সকলে তাজ্জব! দিনের পর দিন বৃদ্ধাকে ফ্ল্যাটে তালা দিয়ে রেখে দিয়েছেন তাঁরই দুই মেয়ে! দু’জনেই বিয়ের পর অন্যত্র থাকেন। মায়ের জন্য বরাদ্দ একবেলার খাবার। সন্ধেবেলা কাজের লোককে দিয়ে তা পাঠিয়ে দেন এক মেয়ে। বেশিরভাগ দিন সকাল দুপুর অভুক্তই থাকেন। বাস্তবিকই ‘ভাগের মা’ হয়ে এভাবে আধপেটা খেয়ে দিন কাটছিল মণিকা দত্তের। স্বামী মারা গিয়েছেন বেশ কয়েক বছর হল। সম্প্রতি পা ভেঙেছে বৃদ্ধার। লাঠি হাতে কোনও ক্রমে এঘর ওঘর করতে পারেন।
বৃত্তান্ত জেনে হাউসিংয়ের বাসিন্দারা খবর দেন স্থানীয় কাউন্সিলর মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যকে। তিনি আসেন। খবর দেন পুলিশে। লেকটাউন থানা যোগাযোগ করে মণিকাদেবীর মেয়েদের সঙ্গে। ছোটমেয়ের বাড়ি নাগেরবাজারে। অপরজনের বাড়ি সিঁথিতে। পুলিশের ফোন পেয়েও তাঁরা কেউ আসতে চাননি। অনেক অনুরোধের পর কাজের লোকের হাত দিয়ে ফ্ল্যাটের চাবি পাঠিয়ে দেন। তালা খুলে বৃদ্ধাকে খাবারদাবার দেওয়া হয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃদ্ধা হাসপাতালে ভর্তি হতে চাননি। মেয়েদের নামে অভিযোগও জানাতে চাননি। কারণ তিনি মা তো!
পুরপিতা মৃগাঙ্কবাবু জানিয়েছেন, “এরকম অমানবিক ঘটনা যে ঘটতে পারে তা ভাবতেও লজ্জা লাগছে। শুনেছি মণিকাদেবীর এক মেয়ে শিক্ষাজগতের সঙ্গে যুক্ত। তিনি কী ভাবে এত অমানবিক কাজ করতে পারেন?” দীর্ঘদিন ধরে ফ্ল্যাটে একাই থাকছেন মণিকাদেবী। আগে শরীর শক্তসমর্থ ছিল। তখন কারও মুখাপেক্ষী ছিলেন না। নিজেই রান্না করে খেতেন। পা ভাঙার পর শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। তখন মেয়েরা পালা করে খাবার দিতেন। ক্রমে অবহেলার মাত্রা বাড়ে। এখন রাতে একবার মাত্র খাবার আসে। তাও অনিয়মিত। এদিন দুপুরে খিদে সহ্য করতে না পেরে জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে চিৎকার করেছিলেন। মণিকাদেবীর অভিযোগ, স্বামীর পেনশনের ১২ হাজার টাকা মেয়েরা নিয়ে নেয়। চিকিৎসার খরচটুকুও তাঁর হাতে নেই।
মাকে এভাবে ফেলে রেখেছেন কেন? জানতে চেয়ে মেয়েদের ফোন করা হয়েছিল। কোনও জবাব মেলেনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.