অর্ণব আইচ : তার নজর ঘোরে দেওয়ালের দিকে। দেওয়ালে টিকটিকি ওৎ পাতে পোকা ধরতে। পাকা শিকারির মতো পাপ্পু ধীর পায়ে এগিয়ে যায়। টিকটিকি কিছু বুঝে ওঠার আগেই এক লাফে তাকে খপাত করে ধরে ফেলে পাপ্পু। মুখে পুরে দেয় আস্ত টিকটিকি। মুখের ভিতর টিকটিকি ছটফট করে। তাতেই আনন্দ পাপ্পুর। কারণ, টিকটিকির যে চামড়া অন্যের কাছে বিষ, তা তার কাছেই নেশার বস্তু। দিনে অন্তত একটি টিকটিকি না খেলে তার নেশা হয় না। হেরোইনের মতো মারাত্মক নেশাও তার কাছে হার মেনেছে।
[ না জানিয়েই মোবাইল ঘাঁটছে স্বামী, অভিযোগ জানাতে সোজা লালবাজারে স্ত্রী ]
ছিনতাইয়ে দক্ষ চেতলার এই নেশাগ্রস্ত পাপ্পুকে ধরা পুলিশের পক্ষে খুব সহজ ছিল না। যতবারই পুলিশ তাকে ধরতে গিয়েছে, ততবারই পুলিশকে কামড়াতে গিয়েছে সে। কারণ পাপ্পু এইচআইভি রোগী। এডস হয়েছে তার। পুলিশ ধরতে গেলেই বলত, “কামড়ে দেব। তোদেরও এডস হবে।” এলাকাসূত্রে জানা গিয়েছে, একটি কুকুর পাপ্পুকে কামড়েছিল। কিন্তু পাপ্পুর শরীরের বিষে কুকুরটিরও পঞ্চত্বপ্রাপ্তি হয়েছে। যদিও তার সত্যতা পুলিশ খতিয়ে দেখছে। এদিকে এডসের ভয়ে পুলিশকর্মীরা তাকে এড়িয়েই চলতেন। পুলিশকর্মীদের সাহস জোগালেন ডিসি (এসএসডি) সন্তোষ নিম্বলকর। নেতাজিনগর থানার অফিসার ও পুলিশকর্মীদের ডেকে তিনি বোঝান, কাউকে ধরলে এডস হয় না। এমনভাবে পাপ্পুকে ধরতে হবে, যাতে সে কামড়ানোর সুযোগও না পায়। পুলিশকর্মীদের নিয়ে স্ট্র্যাটেজি তৈরি করেন পুলিশকর্তা। শেষ পর্যন্ত চেতলায় এক পরিচিতকে দিয়ে ফাঁদ পাতেন নেতাজিনগর থানার পুলিশ আধিকারিকরা। সে কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকে পিছন দিক থেকে ধরে বেঁধে ফেলে পুলিশ। তার থেকে উদ্ধার হয় ছিনতাই হওয়া কিছু গয়না। যদিও এক পুলিশকর্তা জানান, অসুস্থ বলে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তার চিকিৎসার ব্যবস্থা হচ্ছে।
[ নতুন বিজ্ঞপ্তি জারিতে নারাজ কমিশন, বাড়বে না মনোনয়নের সময়সীমাও ]
পুলিশ জানিয়েছে, দক্ষিণ কলকাতায় বেশ কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনার পর পুলিশ নিশ্চিত হয় যে, এর পিছনে রয়েছে চেতলার রাখালদাস আঢ্যি রোডের বাসিন্দা পাপ্পু। যৌনপল্লিতে বড় হওয়া পাপ্পু গত কয়েক বছর ধরেই এইচআইভি-র রোগী। তাকে ধরতে এলেই কামড়াতে আসে সে। এডস সংক্রমণের ভয়ে তাকে ধরার সাহসও পেতেন না পুলিশকর্মীরা। তার উপর পাপ্পুর বিশেষ নেশাটি না হলে চলে না। নেতাজিনগর থানার আধিকারিকরা তাকে ধরে ফেলার পরও তার নজর থানার দেওয়ালে। এক পুলিশ আধিকারিক জানান, নেশা মেটাতে সে লক-আপের দেওয়াল থেকেও টিকটিকি ধরে মুখে পুরেছে। যদিও জেরায় সে সহযোগিতা করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.