Advertisement
Advertisement

Breaking News

ইচ্ছাশক্তির জোরে প্রতিবন্ধকতাকে জয়, মায়ের কোলে চেপেই পরীক্ষাকেন্দ্রে পড়ুয়া

আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে মায়ের কোলই যাতায়াতের ভরসা।

Nadia: Sewing dreams on mother’s lap, HS candidate appears for exam
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:March 28, 2018 9:43 am
  • Updated:July 20, 2019 1:28 pm

স্টাফ রিপোর্টার: কথাতেই আছে, ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়। সেটাই করে দেখাল রোহিত রায়। জন্মের পর থেকেই রোহিতের শরীরের নিম্নাংশ অসাড়। হাঁটা-চলা তো দূরের কথা, ঠিকমতো বসতে পারার ক্ষমতাটুকুও নেই রোহিতের।  তাই নিজের পায়ে হেঁটে নয়, মায়ের কোলে চেপে রোহিত পৌঁছেছে উচ্চ মাধ্যমিকের পরীক্ষাকেন্দ্রে। পরীক্ষা দিয়ে আবার মায়ের কোলে চেপে বাড়ি ফেরার পথে ঠোঁটের কোণে ফুটেছে হাসি। জানিয়েছে, পরীক্ষা ভালই হয়েছে তার। তবে বাড়ি থেকে পরীক্ষাকেন্দ্রের দূরত্ব নেহাত কম নয়। প্রায় দু কিলোমিটার। এতটা পথ অতবড় ছেলেকে কোলে চাপিয়ে নিয়ে যাওয়ার কষ্টের পরও মা রেবা রায়ের চোখে খুশির ঝিলিক।  তবে এমনটা তো নতুন নয় মায়ের কাছে। সেই একরত্তি ছেলে আজ উচ্চমাধ্যমিকের পরীক্ষার্থী। ছোট থেকেই মায়ের কোলই একমাত্র আশ্রয় রোহিতের।

[  বিয়ের ৫ দিনে আগে পাত্রীর অ্যাকাউন্টে টাকা, পদক্ষেপ রাজ্য সরকারের ]

Advertisement

নদিয়ার নবদ্বীপ পুরসভার ১৫ নং ওয়ার্ডের রাধাবাজারের তুরপাড়া এলাকায় বাড়ি রোহিতের। রোহিতরা এক ভাই ও এক বোন। জন্মের পর থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী রোহিত। নিজের পায়ে চলার ক্ষমতা নেই। যদিও পাশের বাড়ির ছেলেকে স্কুলে যেতে দেখে ছোট্ট রোহিত মায়ের কাছে বায়না ধরেছিল স্কুলে যাওয়ার। ছোট ছেলের বায়না ভেবে দু-একটা পড়ার বই কিনে এনে মা বলেছিলেন, ঠিক আছে বাড়িতে বসে পড়ো। কিন্তু না, রোহিতের একই জেদ স্কুলে যাবেই। কিন্তু কীভাবে সম্ভব? যে হাঁটতে পারে না, তার স্কুলের যাওয়ার ভাবনা অলীক কল্পনা ছাড়া আর কী! অবশেষে মুশকিল আসান সেই মা-ই। রেবাদেবী ঠিক করলেন কোলে করেই ছেলেকে স্কুলে নিয়ে যাবেন। ব্যস, সেই শুরু। প্রথম শ্রেণি থেকে আজ অবধি রোহিতের মায়ের কোলে চেপেই স্কুলে যাওয়া-আসা।

Advertisement

[  বাজারে অঢেল পিঁয়াজ, উৎপাদন আরও বাড়ানোর উদ্যোগ রাজ্যের ]

রাধাবাজারের তুরপাড়ার বাড়ি থেকে নবদ্বীপ বকুলতলা উচ্চবিদ্যালয় প্রায় দু’কিলোমিটার দূরত্ব। এতগুলি বছর ধরে এতটা পথ ছেলেকে কোলে চাপিয়েই স্কুলে নিয়ে গিয়েছেন রেবাদেবী। বিকল্প ব্যবস্থা হয়তো হতে পারত। হয়নি। কারণ, রোহিতের পরিবারের সেই আর্থিক সচ্ছলতা নেই। রোহিতের বাবা বাণেশ্বর রায় বাড়িতেই ছোট মুদি দোকান চালান। পরিবারে অভাব নিত্যসঙ্গী। যদিও পড়াশোনা করে মানুষ হওয়ার অদম্য ইচ্ছের কাছে সব কিছু তুচ্ছ হয়ে গিয়েছে। মাধ্যমিকেও একইভাবে মায়ের কোলে চেপে পরীক্ষা দিয়ে দুটি বিষয়ে লেটার নিয়ে পাস করেছিল রোহিত। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাও যাতে ভালো হয় তার জন্য এগিয়ে এসেছেন নবদ্বীপ বকুলতলা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও। স্কুলের শিক্ষক রাজেশ সাহা জানান, ভূগোল, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস ও সংস্কৃত নিয়ে পড়েছে রোহিত। ওর পরীক্ষার প্রস্তুতি আশা করছি ভালোই হয়েছে। আমরাও চাই, ভাল ফল করুক রোহিত। ছ’জন গৃহশিক্ষক বিনা পারিশ্রমিকে বাড়িতে গিয়ে রোহিতকে পড়িয়ে এসেছেন।

[  কীর্তন ও পালাগানের প্রসারে পৈতৃক বাড়ি দান রাজ্যের মন্ত্রীর ]

নবদ্বীপ হিন্দু স্কুলে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার আসন পড়েছে রোহিতের। যথারীতি ছেলেকে কোলে চাপিয়ে পরীক্ষা শুরুর নির্ধারিত সময়ের আগেই পৌঁছেছেন রেবাদেবী। জানালেন, আশা করছি পরীক্ষা ভালই হবে। ভাল রেজাল্ট করে আরও পড়াশোনা করে মানুষ হতে চায় রোহিত। ওর স্বপ্ন ভাল চাকরি করে বাবা-মায়ের কষ্টের ভার লাঘব করার।  রোহিতের মা-বাবাও তাকিয়ে সেই দিনের দিকে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ