ছবি: প্রতীকী
দীপঙ্কর মণ্ডল: কতই বা বয়স হবে তাদের! পনেরো, ষোল বড়জোর সতেরো। এই বয়সেই যে কাজ তারা করেছে তাদের কোনও প্রশংসাই বোধহয় যথেষ্ট নয়। নাবালিকা হয়েও নাবালিকা বিয়ে রুখে দিতে পেরেছে কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাই স্কুলের ছয় ছাত্রী। আশেপাশে যেখানেই এরকম বিয়ের খোঁজ পেয়েছে দৌড়ে গিয়েছে তারা। বুঝিয়ে-সুঝিয়ে নিরস্ত করেছে অভিভাবকদের। সেই কাজেরই স্বীকৃতি মিলল। সাহসিনীদের সংবর্ধনা দিল আমেরিকান সেন্টার। তাদের নিয়ে তৈরি হচ্ছে বিশেষ তথ্যচিত্র।
[ ইস্তাহারে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি নয়, রাজনৈতিক দলগুলির কাছে আরজি মুখ্যমন্ত্রীর ]
তারা ‘স্বয়ংসিদ্ধা’। হ্যাঁ, ছাত্রীদের দলের নাম এটাই। রূপযান ঘরামি, রফিজা পাইক, সাফিয়া মোল্লা, অর্পিতা অধিকারী, মনুয়ারা শেখ ও পাপিজা গায়েন। কেউ পড়ে অষ্টম শ্রেণিতে, কেউবা দশম বা দ্বাদশ শ্রেণিতে। সকলেই কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাই স্কুলের ছাত্রী। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার মথুরাপুরের স্কুলটি দিন কয়েক আগেই শিরোনামে উঠে এসেছিল। স্কুলবাড়ির হলুদ রং নীল-সাদা করতে নারাজ ছিলেন প্রধান শিক্ষক। তা নিয়ে মৃদু বিতর্কও তৈরি হয়েছি,। তবে সে সব আজ অতীত। বরং এখন স্কুলের ছাত্রীদের সাফল্যই উঠে এসেছে বেশি করে। কী করেছে ছাত্রীরা? উপরের ছ’জনই স্বয়ংসিদ্ধা দলের সদস্যা। এক সময় নাবালিকা অবস্থায় তাদেরও বিয়ে ঠিক হয়েছিল। কিন্তু কোনওভাবে নিজেদের বিয়ে রুখতে পেরেছিল তারা। তারপরই পণ করে, কোথাও যেন কোনও নাবালিকার বিয়ে না হয়। শুধু ভাবনাতেই থেমে থাকেনি ছাত্রীরা। প্রধান শিক্ষক চন্দন কুমার মাইতির সহায়তায় গড়ে ওঠে এই দল। যেখান থেকেই এরকম খবর আসত দৌড়ে যেত সদস্যারা। মূলত মথুরাপুরের আশেপাশের গ্রামেই তারা কাজ করত। নাবালিকা বিয়ের খবর পেলে অভিভাবকদের গিয়ে বোঝাত, এতে কী ক্ষতি হতে পারে। নিজেরা বুঝিয়ে নিরস্ত করতে ভাল, নইলে ডাক পড়ত শিক্ষকদেরও। তাঁরাও বোঝাতে না পারলে প্রশাসনের সাহায্যও নেওয়া হয়েছে। তবে রোখা সম্ভব হয়েছে একাধিক নাবালিক বিবাহ। তা এই ছাত্রীদের পরিশ্রমেই। দিনকয়েক আগে স্থানীয় একটি মেয়েকে কাশ্মীরে পাচার করা হয়েছিল বলে অভিযোগ ওঠে। এই গ্রুপের সদস্যরাই উদ্যোগ নিয়ে কাশ্মীর যায় ও তাকে উদ্ধার করে। ছাত্রীরা নিজেদের হয়ে কাজ করলে যে দ্রুত সমাজে পরিবর্তন আসে ‘স্বয়ংসিদ্ধা’ বারবার তা প্রমাণ করছিল। তারই স্বীকৃতি মিলল শুক্রবার। আমেরিকান সেন্টারের তরফে স্বয়ংসিদ্ধার ছয় সদস্যাকে বিশেষ সংবর্ধনা দেওয়া হল। তাদের কাজকর্ম নিয়ে তৈরি হল একটি তথ্যচিত্রও।
পুরো কর্মকাণ্ডের নেপথ্যে যিনি আছেন তিনি প্রধান শিক্ষক চন্দন কুমার মাইতি। তাঁর উদ্যোগে-সাহায্যেই ছাত্রীরা এই কাজ দিনের পর দিন করতে পেরেছে। যেখানে সোশ্যাল মিডিয়া বিপ্লবেই সামাজিক দায়বদ্ধতার ইতি ঘটানো প্রায় রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানে নিজের ছাত্রীদের ব্যতিক্রমী শিক্ষা দিয়েছেন চন্দনবাবু। অবশ্য এর কোনও কৃতিত্ব নিতেই তিনি নারাজ। জানাচ্ছেন, ছাত্রীরাই এই কাজে এগিয়ে এসেছে। ওরা যা করেছে তা দৃষ্টান্তস্বরূপ।
[ টানা ৪ দিন বন্ধ ব্যাংক, শুক্রবারের মধ্যেই সেরে রাখুন কাজকর্ম ]
দিল্লিতে অনেকটা এরকমই কাজ করে শক্তিবাহিনী। মহারাষ্ট্রে আছে নাগিন বাহিনী। ধর্ষিতা হওয়ার পরই রুখে দাঁড়ান এক সাহসিনী। তৈরি করেন এই বাহিনী। পাশে গিয়ে দাঁড়ান ধর্ষিতাদের। স্বয়ংসিদ্ধা-র কাজে সেই আদল স্পষ্ট। নিজেরাই নাবালিকা বিবাহের শিকার হচ্ছিল। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে নাবালিকা বিবাহকেই সমাজ থেকে নির্মূল করার উদ্যোগ তাদের। আমেরিকান সেন্টারের এই সংবর্ধনা যেন তাই সাহসিনীদের কুর্নিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.