সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তপ্ত রানিগঞ্জে যাচ্ছে কলকাতা পুলিশের বাহিনী। ৩ আইপিএস-এর নেতৃত্বে বাহিনী পাঠানো হচ্ছে অশান্ত এলাকায়। সিদ্ধিনাথ গুপ্তা, জাভেদ শামিম এবং কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার বিনীত গোয়েলের নেতৃত্বে বাহিনী পাঠানো হচ্ছে বলে সূত্রের খবর। রানিগঞ্জে অশান্তি মোকাবিলায় রাজ্য ও কলকাতা পুলিশেই ভরসা নবান্নর। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক থেকে বুধবারই এই ইস্যুতে রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়। পরিস্থিতি আয়ত্তে আনতে কেন্দ্রীয় বাহিনী পাঠানোর সুপারিশ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। তবে বাহিনীর প্রয়োজন নেই বলে কেন্দ্রকে জানিয়েছে নবান্ন। অন্যদিকে, গোষ্ঠী সংঘর্ষে আহত পুলিশ আধিকারিক অরিন্দম দত্ত চৌধুরিকে হাসপাতালে দেখতে যেতে চেয়েছিলেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। কিন্তু নিরাপত্তার কথা ভেবে রাজ্যপালকে রানিগঞ্জে না যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এদিনই রাজভবন থেকে প্রেস বিবৃতির মাধ্যমে তা জানান হয়েছে।
রাম নবমীর মিছিলে দুষ্কৃতী হামলাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রানিগঞ্জ। বিশেষ একটি এলাকায় রাম নবমীর মিছিল চলে এলেই ঝামেলা বাধে। চলে ব্যাপক বোমাবাজি। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ এলে আক্রমণের মুখে পড়েন পুলিশ কর্মীরাও। বোমার আঘাতে মারাত্মক জখম হন ডিসি সদর অরিন্দম দত্ত চৌধুরি। এদিকে পুরো ঘটনায় পুলিশকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়। তাঁর দাবি, পুলিশি নিষ্ক্রিয়তাতেই এতবড় ঘটনা ঘটেছে রানিগঞ্জে। মঙ্গলবার বিজেপির রাজ্য দপ্তরে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করে জানান, “পুলিশ দেরিতে সক্রিয় হয়েছে। ঘটনা প্রথমে ঘটতে দেওয়া হয়েছে। দু-ঘণ্টা ঝামেলা হতে দিয়েছে পুলিশ। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ার পর পুলিশ সক্রিয় হয়।” তাঁর দাবি ঘটনার গতিপ্রকৃতি দেখে পুরোটাই পূর্ব পরিকল্পিত বলে মনে হয়েছে তাঁর। পুরো ঘটনার কথা রাজ্যপাল ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককেও জানান তিনি। বাবুলের কাছে ঘটনা শুনেই এ ব্যাপারে খোঁজ নেন প্রধানমন্ত্রী। রানিগঞ্জের পরিস্থিতি এখন কেমন, তা জানতে চান। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহও আলাদা করে কথা বলেন সাংসদের সঙ্গে। এরপরই রাজ্যের কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠায় কেন্দ্র। নিরাপত্তার খাতিরে প্রয়োজনে আধাসেনা মজুত করা হতে পারে বলেও ইঙ্গিত কেন্দ্রের। রাজ্য চাইলে তবেই তা দেওয়া হবে। নিরাপত্তা রক্ষার্থে সবরকম সাহায্য করতে কেন্দ্র প্রস্তুত বলেও জানানো হয়েছে। কিন্তু বাহিনীর প্রয়োজন নেই বলে জানিয়ে দেয় নবান্ন। এদিকে, নবান্নে রানিগঞ্জের পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যের মুখ্যসচিব মলয় দে এবং স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্যর সঙ্গে পুলিশকর্তাদের বৈঠক হয় বলে জানা গিয়েছে। তারপরেই রাজ্য পুলিশের দুই এডিজি সিদ্ধিনাথ গুপ্তা ও জাভেদ শামিমের পাশাপাশি কলকাতা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার বিনীত গোয়েলের নেতৃত্বে ৯০ জনের একটি বাহিনী পাঠানো হয়েছে। শান্তি রক্ষায় কোলিয়ারি এলাকা-সহ সর্বত্র থানায় থানায় সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বুধবারও থমথমে রানিগঞ্জের পরিবেশ। এলাকায় টহল দিয়েছে বিশাল পুলিশবাহিনী।
পাশাপাশি, রানিগঞ্জ, আসানসোল-সহ রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দেখার জন্য কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল পাঠাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে অনুরোধ জানাল বঙ্গ বিজেপি। দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা বুধবার রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেন। রাহুলবাবু সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল পাঠানোর জন্য রাজনাথ সিং ও রাজ্যপালকে বলেছি। শীঘ্রই হয়তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিনিধিদল আসবে।’ সব রিপোর্ট রাজ্য বিজেপির তরফে অমিত শাহ ও প্রধানমন্ত্রীকেও জানান হয়েছে। কাল রাজ্যপালকে রানিগঞ্জ যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে বিজেপির তরফে। রাহুলবাবু বলেন, সেখানে গিয়ে সাধারণ মানুষ ও আহত পুলিশ অফিসারের পাশে দাঁড়ানো দরকার রাজ্যপালের। রাহুল সিনহা বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যত বাহিনী দরকার কেন্দ্র দিতে প্রস্তুত। কিন্তু রাজ্য বলছে দরকার নেই। আমরা রাজ্যপালকে বলেছি পুলিশ না দেওয়া হলেও আপনি কাল রানিগঞ্জ যান।’ কিন্তু পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে নিরাপত্তার স্বার্থে রাজ্যপালকে রানিগঞ্জে না যাওয়ার আবেদন করা হয়েছে নবান্নর তরফে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.