ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান। জীবনধারণের মৌলিক প্রয়োজনের সংস্থানটুকু আগেই হয়েছে। এবার আর একটু এগিয়ে খাদ্য, শিক্ষা আর উন্নত সরকারি পরিষেবা। মূলত এই তিন মন্ত্র নিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনে লড়াইয়ের ময়দানে নামবে তৃণমূল কংগ্রেস। দলের শীর্ষ স্তরের প্রাথমিক নির্দেশ, গত ৭ বছরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার উন্নয়নের যে কাজ করেছে, লাগাতার তার প্রচার করে যেতে হবে। প্রচার চলবে শুধুমাত্র মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রীর নামে। সঙ্গে ঝড় তুলবে মমতার স্লোগান।
পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্যস্তরে কোনও ম্যানিফেস্টো বা ইস্তেহার বের করে না তৃণমূল। ২০১৩-তেও হয়নি। এবারও তেমন কিছু করার পরিকল্পনা এখনও নেই। স্থানীয় চাহিদা বা অ্যাজেন্ডার ভিত্তিতে নির্বাচনী ইস্তাহার হয় জেলাস্তরে। ২০১৩-য় প্রথমবার রাজ্য জুড়ে পঞ্চায়েতে জয়ের পর এই প্রথম নিজেদের প্রশাসনের কাজের নিরিখে ভোটে যাচ্ছে তৃণমূল। ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় এসেছে। তার দু’বছরের মাথায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিধানসভা ভোটের ফলের রেশ অনেকটাই কাজ করেছিল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। সঙ্গে জুড়েছিল দু’বছরের কাজের ফলাফলও। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট আলাদা। ২০১৩-য় জেতা ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতের সাফল্যই এবার মাপকাঠি। মানুষের জন্য নেওয়া রাজ্য সরকারের পরিষেবামূলক কাজ যার প্রধান অস্ত্র। সেই কাজের সঙ্গে তাল মিলিয়ে খাদ্য, শিক্ষা, বাসস্থান, রাস্তা-সহ সরকারি পরিষেবা কতটা মানুষের হাতে পৌঁছেছে, তা মিলিয়ে দেখেই ভোট দেবেন গ্রামের মানুষ।
কন্যাশ্রী, খাদ্যসাথী, সবুজসাথী, পুরশ্রীর মতো রাজ্য সরকারি প্রকল্প মমতার মস্তিষ্কপ্রসূত। সেই প্রকল্পের সুফল যাতে মানুষের হাতে দ্রুত পৌঁছয় তার ব্যবস্থাও করেছেন তিনি। সম্প্রতি দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, উন্নয়ন, উন্নয়ন আর উন্নয়ন। এই হল পঞ্চায়েতে জয়ের মূল মন্ত্র। সেই সুর টেনেই দলের রাজ্যস্তরের এক নেতা বলছেন, “খাদ্য, শিক্ষা, রাস্তা, সরকারি পরিষেবা মানুষের হাতে কতটা পৌঁছেছে, মানুষ তা হাতে-কলমে বুঝে নেবে। আর সেই নিরিখে বলতে পারি, তৃণমূল সরকার সবদিক থেকে এগিয়ে।” দলের শীর্ষ স্তরের নেতা তথা রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ এক মন্ত্রী বলেছেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার সবরকম পরিষেবা মানুষের জন্য তৈরি করে দিয়েছে। এখন স্থানীয় স্তরে পঞ্চায়েতের নেতারা কে কতটা সেসব মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পেরেছে, তা মানুষই বুঝে নেবে। সেই হিসাবেই ভাগ্য নির্ধারণ হবে পঞ্চায়েতের পদাধিকারীদের।” তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠক থেকে মমতা একাধিকবার বলে দিয়েছেন, সাফল্যের খতিয়ান ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে হবে। কন্যাশ্রী বিশ্বে সম্মান পেয়েছে। সবুজসাথী মেয়েদের পৌঁছে দিয়েছে স্কুলে। ২ টাকা কিলো চাল গরিবের মুখে সস্তায় চাল তুলে দিয়েছে। বিনা পয়সায় ওষুধ, বিনা পয়সায় চিকিৎসা পাচ্ছে মানুষ। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠছে। তালিকায় সাম্প্রতিকতম সংযোজন পুরশ্রী। দুঃস্থ সংসারে বিবাহযোগ্য মেয়েদের জন্য যা অত্যন্ত উপযোগী। তার সঙ্গে গ্রামীণ রাস্তা, কম পয়সায় বাড়ি, কৃষকদের জন্য একাধিক সুযোগ-সুবিধা, সব কিছুতেই নানাভাবে সুযোগ-সুবিধা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। কখনও তাঁর সরকার করেছে। কখনও তা করেছে তৃণমূল পরিচালিত জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি বা গ্রাম পঞ্চায়েত। সেই ‘করা’ কতটা মানুষের উপকারে এসেছে, এবারের পঞ্চায়েতে তার অ্যাসিড টেস্ট।
স্থানীয় প্রশাসন অর্থাৎ জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি হোক বা গ্রাম পঞ্চায়েত, এই তিনটি স্তরে স্থানীয়ভাবে কিছু লিফলেট তৈরি করা হয়। এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র তেমনই করার পরিকল্পনা রয়েছে। লিফলেট বা ছোট বইয়েই লেখা থাকবে সরকারের সাত বছরের উন্নয়নের কাজের কথা। সরকারের কাজের প্রচারে সেই বই আর মমতার স্লোগানকে হাতিয়ার করেই মানুষের কাছে ভোট চাইতে হবে। নেত্রী ইতিমধ্যে একাধিক স্লোগান দিয়ে ভোটে লড়াইয়ের সেই ঝড় তুলে দিয়েছেন। সেই ঝড়কে জিইয়ে রেখেই লাগাতার প্রচারে যাবেন দলের নেতা-কর্মীরা। দলের আরেক শীর্ষ নেতার কথায়, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেওয়া স্লোগানে ঝড় উঠবে গ্রাম বাংলায়। ‘২০১৯, বিজেপি ফিনিশ’ আর ‘তোদের টার্গেট বাংলা, আমাদের টার্গেট লাল কেল্লা’-র স্লোগানই কর্মীদের বড় ভরসা। সঙ্গে রয়েছে ৭ বছরের কাজ।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.