রাহুল চক্রবর্তী: বিল পাস হয়েছে। কার্যকরও হচ্ছে। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে ভিন্ন মত বিধায়কদের। ব্যক্তিগতভাবে হাতে গোনা দু-একজন বিধায়ক প্রার্থী হতে ইচ্ছুক। তবে বেশিরভাগ বিধায়কেরই মত ‘না’। বিধায়করা আদৌ পঞ্চায়েত নির্বাচনে দাঁড়াবেন কি না, তা নিয়ে আলোচনা হয়নি কোনও রাজনৈতিক দলে। সবটাই নির্ভর করছে কেমন আসন, তার উপর ভিত্তি করে।
কাউন্সিলর থেকে পুরসভার চেয়ারম্যান-মেয়র হয়েছেন। আবার সে পদে থেকেই বিধায়ক-মন্ত্রী হয়েছেন অনেকে। অর্থাৎ, পুরসভার ভোটে জিতেও বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া যায়। জিতলে বিধায়ক ও পুরপ্রতিনিধি-দু’টি পদই রাখা যায়। কিন্তু পঞ্চায়েতে জিতলে বিধায়ক হওয়ার কোনও আইন ছিল না আগের নির্বাচনগুলিতে। ২০১৭ সালে রাজ্য সরকারের পঞ্চায়েত দপ্তর একটি সংশোধনী বিল আনে বিধানসভায়। বিলটি পাসও হয়। সেখানে স্পষ্টভাবে উল্লেখিত রয়েছে, বিধায়ক পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন। জিতলে তাঁকে কোনও পদই ছাড়তে হবে না। বিধায়ক ও পঞ্চায়েত স্তরের জনপ্রতিনিধির দু’টি পদই রাখা যাবে।
সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। এই নির্বাচন থেকে বিধানসভায় পাস হওয়া সংশোধনী বিল কার্যকর হচ্ছে। গত বছরের অক্টোবর মাসের ১৭ তারিখে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী স্বাক্ষর করে দিয়েছেন। রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় বলেন, “বিধানসভায় বিল পাস হয়েছে। রাজ্যপাল সম্মতি দিয়েছেন। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে তা কার্যকর হচ্ছে। কোনও বিধায়ক এই নির্বাচনে প্রার্থী হতে চাইলে, তিনি দাঁড়াতে পারবেন।” কিন্তু কোনও বিধায়ক কি পঞ্চায়েত স্তরের নির্বাচনে প্রার্থী হবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকে বলছেন, জেলা পরিষদের সভাধিপতি কিংবা সহকারী সভাধিপতি পদে কোনও বিধায়ক প্রার্থী হতে পারেন। নতুবা পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান বা সভাপতি পদে। যেহেতু পদমর্যাদার দিক থেকে বিধায়ককে আলাদা গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয় ফলে নির্দিষ্ট আসনেই তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন এটা স্বাভাবিক।
কিন্তু কোন কোন বিধায়ক পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী হতে ইচ্ছুক? প্রশ্ন ওঠায় খোঁজখবর নিয়ে দেখা গিয়েছে, উত্তর ২৪ পরগনার বাদুড়িয়ার বিধায়ক রহিমা মণ্ডল জেলা পরিষদের আসনে প্রার্থী হতে ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন। আগে তিনি জেলা পরিষদের সভাধিপতি ছিলেন। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাদুড়িয়া কেন্দ্রের বিধায়ক নির্বাচিত হওয়ার পর তাঁকে ওই পদ ছাড়তে হয়। কিন্তু বর্তমানে সংশোধনী বিল পাস হওয়ায় ফের জেলা পরিষদের আসনে প্রার্থী হতে তিনি ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “জেলা পরিষদ চালানোর পূর্ব অভিজ্ঞতা আছে আমার। ফলে দল প্রার্থী করলে আমার দাঁড়াতে কোনও অসুবিধা নেই।” যদিও রাজ্যের সর্বাধিক ৩৩টি বিধানসভা যুক্ত উত্তর ২৪ পরগনার জেলা তৃণমূলের সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “এই জেলায় কোনও বিধায়ক পঞ্চায়েতে দাঁড়াবেন, আপাতত এরকম সম্ভাবনা নেই।” বামেদের কোনও বিধায়কও পঞ্চায়েতে দাঁড়াচ্ছেন না বলেই খবর। বামফ্রন্টের পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “যদি বিধায়ককে পঞ্চায়েতে প্রার্থী করার প্রয়োজন হয়, তাহলে দাঁড়াবেন। এখনও পর্যন্ত এ নিয়ে কোনও সম্ভাবনা নেই।” প্রায় একই সুরে কংগ্রেস বিধায়ক অসিত মিত্র বলেন, “এখনও পর্যন্ত কংগ্রেসের কোনও বিধায়ক পঞ্চায়েতে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেননি।” ফলে আদৌ কোনও বিধায়ক পঞ্চায়েতে লড়বেন কি না, তার উত্তর জানা যাবে রাজনৈতিক দলের প্রার্থী তালিকা দেখেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.