ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, বারাসত: সদ্য কন্যাসন্তানের জন্ম দিয়েছেন প্রিয়াঙ্কা। তাঁর অকালজাত শিশুটি জীবন-মৃত্যুর মাঝে ঝুলছে। এই চরম প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও নিজের লক্ষ্য থেকে সরে যাননি উচ্চমধ্যমিক পরীক্ষার্থী গৃহবধূ। এসএনসিইউতে চিকিৎসাধীন সদ্যোজাত শিশুটির পাশে বসে রাতভর পড়াশোনা করেন। মঙ্গলবার বারাসত হাসপাতাল থেকে পরীক্ষা দিলেন কলা বিভাগের ছাত্রী প্রিয়াঙ্কা বিশ্বাস।
[পরিবারের মুখে খাবার তুলতে অপারগ, স্বেচ্ছামৃত্যুর আবেদন ৯১ কৃষকের]
আঠারোয় পা দিতেই মছলন্দপুরের বাসিন্দা প্রিয়াঙ্কা বিশ্বাসের বিয়ে হয়ে যায়। বারো ক্লাসে পড়াকালীনই সংসারের দায়িত্ব চাপে তাঁর মাথায়। গত বছর উচ্চমাধ্যমিক দেওয়ার কথা থাকলেও পারেননি। কিন্তু এ বছর আরও প্রতিকূল পরিস্থিতি। বারাসত হাসপাতাল সূত্রে খবর, প্রসব যন্ত্রণা নিয়ে হাসপাতালে আসেন প্রিয়াঙ্কা। ২২ মার্চ, বৃহস্পতিবার রাত দশটা বেজে পনেরো মিনিটে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন তিনি। বারাসত হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল জানিয়েছেন, শিশুটি প্রিম্যাচিওর্ড অবস্থায় প্রসব হয়। প্রসবের পরই তাকে এসএনসিউতে ভর্তি করা হয়। এসএনসিউতে শিশুটির সঙ্গে প্রিয়াঙ্কাকেও রাখা হয়। হাসপাতাল কর্মীদের থেকে জানা যায়, শিশুটির পাশে বসেই বই পড়তেন তিনি। সোমবার রাতে হাসপাতালের সুপার-সহ চিকিৎসকরা শিশুটিকে দেখতে গেলে তাঁদের কাছে পরীক্ষা দেওয়ার আর্জি জানান প্রিয়াঙ্কা। তাঁর এই দাবিতে হতবাক হয়ে যায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বারাসত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রাত আটটা নাগাদ অনুমতি মেলে। রাতভর এসএনসিইউতে বসেই পড়াশোনা করেন তিনি। সকালে হাসপাতালে পর্ষদের প্রতিনিধিরা তাঁর পরীক্ষা নিতে আসেন।
সুপার সুব্রতবাবু জানিয়েছেন, প্রিয়াঙ্কার পরীক্ষার জন্য আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করা হয়। মহিলা অবজারভেশন ওয়ার্ডে বসে পরীক্ষা দেন তিনি। প্রিয়াঙ্কা জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতির মধ্যে তিনি কোনওভাবেই ভাবতে পারনেনি তাঁর পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হবে। বারাসত হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। প্রিয়াঙ্কার কথা, আমি পরীক্ষা দেব জানার পর ডাক্তারবাবুরা অভয় দিয়ে বলেন, ‘তুমি পরীক্ষা ভালোভাবে দাও।’ তোমার শিশুর চিন্তা আমাদের উপর ছেড়ে দাও। চিকিৎসকদের এই আশ্বাসেই পরীক্ষায় বসার মানসিক জোর পেয়েছেন বলে দাবি প্রিয়াঙ্কার।
[বাজারে অঢেল পিঁয়াজ, উৎপাদন আরও বাড়ানোর উদ্যোগ রাজ্যের]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.