Advertisement
Advertisement

Breaking News

রাজস্থান

বিজেপির কাঁটা বসুন্ধরা, রাজস্থানের প্রচারযুদ্ধে এগিয়ে গেহলট-শচীনরাই

বিজেপির শক্ত ঘাঁটিতে সিঁধ কাটতে প্রস্তুত কংগ্রেস।

Vasundhara Raje biggest hurdle for BJP in Rajasthan
Published by: Subhajit Mandal
  • Posted:April 24, 2019 1:37 pm
  • Updated:April 24, 2019 4:05 pm

কৃষ্ণকুমার দাস,উদয়পুর: আরাবল্লি পাহাড়ে ঘেরা মেবার বংশের রানাদের হাতে তৈরি ‘সিটি অফ লেক’ রাজস্থানের উদয়পুর ঘিরে এবার লোকসভা ভোটে নতুন ব্যতিক্রমী সমীকরণ তৈরি হওয়ায় চাপে কংগ্রেস ও বিজেপি দু’পক্ষই। অনেকটা ১৫৭৬ সালে মেবারের রানাপ্রতাপের সেই বিখ্যাত হলদিঘাটের যুদ্ধের ধাঁচে দীর্ঘদিনের গেরুয়া ঘাঁটি ভেঙে এবার তেরঙার দাপট লক্ষ্য করছি শহরের প্রাসাদের অন্তঃপুরেও। পিছোলা বা ফতেসাগর লেকের পাড়ে কান পাতলে ঘুঙুরের শব্দ শোনা না গেলেও জোরাল গলার ভোটের স্লোগান ভেসে আসছে। সিটি প্যালেস, লেক প্যালেস থেকে শুরু করে জগমন্দির, লক্ষ্মীবিলাস, সর্বত্র ক্ষত্রিয়-জাঠ-চামার সব সম্প্রদায়ের মুখে আলোচ্য বিষয় একটাই ‘ইসবার কাঠে-কপাটে ফাইট’।

[আরও পড়ুন: দিল্লির প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে ধনী গম্ভীর, জানেন কত সম্পত্তি?]

রাজপথে, রাস্তার মোড়ে বিশাল বিশাল হোর্ডিংয়ে কংগ্রেস সভাপতির ছবি। পাল্টা প্রধানমন্ত্রীর ‘ফির একবার’ একটু যেন পিছিয়ে পড়েছে। আসলে চারমাস আগের ভোটে কৃষকদের ভোটে ক্ষমতায় আসা কংগ্রেস রাজস্থান থেকেই পদ্মশিবিরকে পিছনে ফেলতে চাইছে। কিন্তু গতবার রাজস্থানের সমস্ত আসন, ২৫-০ ফল করে জেতা বিজেপি কিছুতেই একটি আসনও হারাতে চাইছে না। লড়াই যে জোর জমেছে, সিটি নিয়ে কাড়াকাড়ি অশান্তির পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে–তার প্রমাণ প্রতিবেশী গুজরাতে। সেখানে ২৬ আসনে এক দফায় ভোট হল। কিন্তু কংগ্রেস শাসিত রাজস্থানে ২৫টি আসন হলেও দু’দফায় ভোট হচ্ছে। খাস উদয়পুর যোধপুর, বারমের, রাজসমন্দ, আজমেঢ়, ঝালোয়ার, কোটা, বনশওয়াড়ার মতো ১৩টি আসনে ২৯ এপ্রিল ভোট হবে। বাকি ১২টিতে হবে ৬ মে।

Advertisement

মাত্র চারমাস আগে ক্ষমতায় আসা কংগ্রেস ‘মধুচন্দ্রিমা’ দশা কাটানোর আগেই ফের ভোটের মুখোমুখি। মুখ্যমন্ত্রী পদে বসার দু’দিনের মধ্যে রাহুল গান্ধী চাপ দিয়ে অশোক গেহলট-কে দিয়ে কৃষিঋণ মকুবের ঘোষণা করিয়েছেন। কিন্তু বিজেপি বলছে, “ওটা শুধু ‘ঘোষণা’-ই। এখনও পলিসি ঠিক করতে পারেনি। কেউ একটাকাও মকুবের সুবিধা পায়নি।” তবে কংগ্রেসের একটাই অস্ত্র- বিজেপির বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়া। কংগ্রেসের উদয়পুরের প্রার্থী রঘুবীর সিং মিনা প্রকাশ্যেই বলছেন, “বসুন্ধরা আমাদের লক্ষ্মী, উনি যতদিন বিজেপির হয়ে ভোট করবেন, ততদিন আমরা আরও বেশি আসনে জিতব।” একথা ঘুরিয়ে স্বীকার করছেন উদয়পুর বিজেপির যুবমোর্চা ও এবিভিপির নেতারা। বিধানসভা ভোটে দল হারার জন্য ক্ষুব্ধ-হতাশ বিজেপি কর্মীরা বলছেন, “শুধুমাত্র বসুন্ধরার চরম দুর্ব্যবহার পার্টিকে হারিয়ে দিল। মন্ত্রী-বিধায়ক-নেতা সবার সঙ্গেই উনি চাকর-বাকরের মতো ব্যবহার করেন।”

Advertisement

[আরও পড়ুন: ‘গোহত্যা করেছে বিজেপি’, টিকিট না পেয়ে বিতর্কিত মন্তব্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর]

অবশ্য নাম প্রকাশ করা যাবে না এমন শর্তে রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ পদাধিকারী উদয়পুরে নিজের অফিসে বসে বললেন, “পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গেও তিনি রাজকীয় স্টাইলে চরম দুর্ব্যবহার করতেন। সন্ধের পর বড় কোনও ঘটনা ঘটলে তিনি ফোন তুলতেন না।” বসুন্ধরা দায়িত্বে থাকলে আগামী বিধানসভা ভোটে দল শূন্যে পৌঁছে যাবে বলেও বিজেপির ক্ষুব্ধ নেতাদের দাবি।
বিজেপি যে কতটা চাপে আছে তার প্রমাণ, উদয়পুর ডিভিশন। বিধানসভা ভোটে এখানকার ২৮টি আসনের মধ্যে ২৪টি বিজেপিই পেয়েছে। সৌজন্যে আরএসএস। কিন্তু এবার হাওয়া একটু আলাদা। তবু সভায় এসে মোদি বালাকোট, পাকিস্তান ও সেনা জওয়ানদের বিষয়কে হাতিয়ার করেছেন। কারণ, এখানকার ভরতপুর, বারমের, ঝালোয়ার, সিকর, চুরু এবং অবশ্যই উদয়পুর এলাকার রাজপুত-ক্ষত্রিয়রা দলে দলে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। প্রতি ঘরেই ফৌজি রয়েছে। এমনকী, রাজসমন্দ কেন্দ্রের দু’জন ফৌজি পুলওয়ামায় মারা গিয়েছেন। সেই দুই দেহ নিয়ে বিজেপি বিশাল র‌্যালি করেছে। মরিয়া হয়ে মোদি রাজস্থানের প্রতিটি জনসভাতেই এবার পাকিস্তানকে কড়া দাওয়াই দেওয়ার পাশাপাশি সেনাকে কংগ্রেস অপমান করছে বলেও দাবি করলেন।

উদয়পুরে সোমবার সন্ধেয় সভা করে তো স্পষ্ট বলে দিলেন, “যতদিন আমি বেঁচে আছি, সন্ত্রাসবাদীদের বাঁচতে দেব না।” স্বদেশপ্রেমের এমন প্যাকেজে উজ্জীবিত বিজেপি বলছে, ১৫-১৬টি আসন পাবই। উল্টোদিকে কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট বলে দিয়েছেন, ২৫টির মধ্যে কংগ্রেস ২০টি আসনে নিশ্চিত। বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি হলেও মরুরাজ্যে ভোটের উত্তাপের পারদ ১০০ ছুঁই ছুঁই। রাজপুত রাজ্যের ২৫টি সংসদীয় আসনের কে কোনটিতে নিশ্চিত জিতবেন– তা জোর গলায় দাবি করতে পারছে না কংগ্রেস বা বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব। প্রকাশ্যে দু’পক্ষই ২০টির বেশি আসনের দাবি করলেও আড়ালে গিয়ে বলছেন, লু উপেক্ষা করে কর্মীদের মাঠে নামিয়ে বিপক্ষকে গোল দিতে গেলে এমন বলতে হয়। লড়াই যে কতটা সেয়ানে-সেয়ানে, তা বোঝা যায় মোদি-রাহুলের ভাষণের জবাব ও পাল্টা জবাবের জনসভায়।

[আরও পড়ুন: ‘হিন্দুরা কখনও জঙ্গি হতে পারে না’, দাবি অমিত শাহ’র]

দীর্ঘদিনের ট্র্যাডিশনাল সিটেও জোর লড়াই সামাল দিতে সোমবার বিকেলে উদয়পুরে ছুটে আসতে হয়েছিল স্বয়ং নরেন্দ্র মোদিকে। পাল্টা দিতে পরদিনই মঙ্গলবার পাশের শহর দুঙ্গারপুরে এসে আদিবাসীদের নিয়ে বিশাল জমায়েত করে শক্তির প্রমাণ দিয়ে গেলেন খোদ রাহুল গান্ধী। আসলে পোখরান, কোটা–পরমাণু শক্তি পরীক্ষার দুই কেন্দ্র এই রাজ্যে। পাকিস্তান সীমান্তও এই রাজ্যে। এশিয়ার সবচেয়ে বড় রুপো, মার্বেল, জিপসাম থেকে শুরু করে খনিজ সম্পদ মরুরাজ্যের গর্ভগৃহে। প্রাসাদ থেকে শুরু করে সৌন্দর্য, রাজপুতদের শৌর্য-বীর্যের কাহিনি ছাপিয়ে আপাতত নজর, ২৫ আসনের ক’টি কংগ্রেস পুনরুদ্ধার করতে পারে। না কি মোদির স্বদেশপ্রেমের আবেগে মানুষ ভুলে যাবে বসুন্ধরা রাজে সিন্ধিয়ার দুর্ব্যবহার-অপশাসন? প্রথম দফায় নিজের রায় ২৯ এপ্রিল জানিয়ে দিতে প্রস্তুত হচ্ছে আধা মরুরাজ্য।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ