Advertisement
Advertisement

প্রধানমন্ত্রীত্ব ছাড়ছেন ক্যামেরন, ভাঙনের মুখে গ্রেট ব্রিটেন!

ব্রিটেন ইইউ-তে থাকবে না, অথচ স্কটল্যান্ড ব্রিটেনের সঙ্গে থাকবে- এরকম কী করে হতে পারে?

Britain votes to leave EU, unleashing global turmoil
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:June 24, 2016 3:15 pm
  • Updated:June 24, 2016 3:15 pm

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ব্রেক্সিট-এর দায় মাথা পেতে নিয়ে পদত্যাগ করবেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে যুক্তরাজ্যের মানুষের রায়কে সম্মান জানিয়ে শুক্রবার তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন৷ অক্টোবর পর্যন্ত দফতর সামলানোর পর তিনি পদত্যাগ করবেন৷ প্রসঙ্গত, প্রথম থেকেই ব্রেক্সিট-এর বিরুদ্ধে প্রচার চালিয়েছিলেন ক্যামেরন৷

শুক্রবার তিনি বলেন, “টালমাটাল স্রোতের মধ্যে ব্রিটেনের উন্নয়নের তরীকে বাঁচাতে আগামী তিনমাস ক্যাপ্টেনের পদে থাকব৷ কিন্তু আমার মনে হয়, আমি এই জাহাজের উপযুক্ত ক্যাপ্টেন নই৷” আগামী সোমবার ক্যাবিনেট মন্ত্রীরা বৈঠকে বসবেন, যার নেতৃত্ব দেবেন ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ডের গভর্নর৷ আসন্ন অক্টোবরে কনজারভেটিভ পার্টির কনফারেন্সে নয়া প্রধানমন্ত্রী বেছে নেওয়া হবে, জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী৷

Advertisement

এতদিন স্বাধীনতা দিবস বলে কিছু ছিল না ব্রিটেনের৷ ১৭০৭ সালের ১ মে ইংল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ড একসঙ্গে মিলে যখন পার্লামেন্ট গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় তখন তৈরি হয় ওয়ান কিংডম বা ইউনাইটেড কিংডম বা গ্রেট ব্রিটেন৷ এতদিন তাই ১ মে তারিখটিকেই ব্রিটেনের স্বাধীনতা দিবস হিসাবে পালন করা হত৷ কিন্তু, ৪৩ বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঘেরাটোপ থেকে মুক্তি পেয়ে আপাতত ২৪ জুনকে দেশের নতুন স্বাধীনতা দিবস হিসাবে পালন করতে চাইছে ব্রেক্সিট-পন্থীরা৷

Advertisement

বলা হচ্ছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ইস্তক এত বড় ধাক্কা ব্রিটেনের গায়ে লাগেনি৷ ব্রেক্সিট-এর পক্ষে রায় দিয়েছেন যুক্তরাজ্যের ৫২ শতাংশ মানুষ৷ যার জেরে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার ঢেউ এসে লেগেছে৷ ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দার পর আন্তর্জাতিক বাজারে এমন ধাক্কা লাগেনি৷ পাউন্ডের দাম এমন তলানিতে এসে ঠেকেছে, যা ইতিহাসে সর্বনিম্ন| বিদেশসচিব ফিলিপ হ্যামন্ড জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে ব্রিটেনের সবচেয়ে বেশি দরকার স্থিতিশীলতা৷ ব্যাঙ্ক অফ ইংল্যান্ড জানিয়েছে, ব্রিটেনে আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে তারা সবরকম চেষ্টা চালাবে৷ ব্রেক্সিট-এর বিপক্ষে যাঁরা মত দিয়েছিলেন তাঁরা উদ্বিগ্ন ব্রিটেনের অর্থনৈতিক ভবিষ্যত্‍ নিয়ে৷ অনেকেই মনে করছেন, ব্রিটেনে প্রস্তুত জিনিসপত্র ভবিষ্যতে ইউরোপের বাজারে সমস্যায় পড়বে৷ আবার একটি দল বলছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ফান্ডে যে প্রতি বছর কোটি কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে হত ব্রিটেনকে তা বেঁচে যাবে৷ সুবিধা হবে ব্রিটেনের৷

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইইউ-র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও বিতর্কিত পদক্ষেপ হল ইউরোপীয় দেশগুলির মধ্যে অবাধ ঘোরাফেরা৷ একজন ইইউ নাগরিক ইউরোপের যে কোনও দেশে বসবাস ও চাকরি করতে পারেন৷ এই মুহূর্তে ইইউ দেশগুলিতে ১২ লক্ষ ব্রিটিশ নাগরিক বসবাস করেন৷ অন্যদিকে, ৩০ লক্ষ মানুষ ব্রিটেনে বসবাস করেন যাঁরা জন্মসূত্রে ব্রিটিশ নন৷ এখন ইইউ থেকে ব্রিটেন বেরিয়ে গেলে অবাধ বিচরণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে পারে ব্রিটিশরা৷ কিন্তু এখন যা পরিস্থিতি, ইইউ-কে ব্রিটেন আবেদন জানাতে পারে, জোট ছেড়ে বেরিয়ে গেলেও যেন ইউরোপের মধ্যে অবাধ বিচরণের সুযোগ থেকে নাগরিকদের বঞ্চিত না করা হয়৷ ব্রেক্সিট-এর পক্ষে ভোট দেন অধিকাংশ ব্রিটিশ৷ ১৬,৮৭,৬৬,৮০ ভোট পড়েছে ব্রেক্সিট-এর পক্ষে৷ ১৫৭৩২৭৬১ ভোট পড়েছে বিপক্ষে৷ যদিও বিপক্ষের ভোটও নেহাত্‍ কম নয়৷ গণণা বলছে স্কটল্যান্ড এবং উত্তর আয়ারল্যান্ড ভোট দিয়েছে ব্রেক্সিটের বিরুদ্ধে৷ এদিন ব্রিটেনবাসীর রায় জানার পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টাস্ক জানিয়েছেন, “ইউনিয়নের ঐক্য ২৭টি দেশের মধ্যে বেঁধে রাখতে বপরিকর আমরা৷

কিন্তু তিনি যতই দাবি করুন না কেন, এই মুহূর্তে ব্রিটেনের অস্তিত্ব সঙ্কটে! ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের একাংশের দাবি, ইইউ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার পর ইংল্যান্ড, ওয়েলস, স্কটল্যান্ড ও উত্তর আয়ার্ল্যান্ডকে নিয়ে গঠিত ‘ইউনাইটেড কিংডম’ অটুট নাও থাকতে পারে৷ কারণ, ইইউ-তে থেকে যাওয়ার পক্ষে স্কটল্যান্ডের ৬২% মানুষ রায় দিয়েছেন৷ যে স্কটল্যান্ডের ৪৪% মানুষ ২০১৪ সালে ব্রিটেন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে রায় দিয়েছিল৷ স্কটিশ ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টার্জিওন বলেছেন, “স্কটল্যান্ডের ভবিষ্যত ইইউ-তে থাকলে তবেই নিরাপদ৷” এখন ব্রিটেন ইইউ-তে থাকবে না, অথচ স্কটল্যান্ড ব্রিটেনের সঙ্গে থাকবে- এরকম কী করে হতে পারে? আপাতত এই প্রশ্নের উত্তরই হাতড়ে বেড়াচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা৷

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ