সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অনুপ্রবেশকারীদের কোনওভাবেই প্রশ্রয় নয়। সে ভারতে হোক, বা বিদেশে। অনুপ্রবেশকারী ভারতীয় হোন বা অন্য কোনও দেশের, বিতাড়নই তাঁদের ভবিতব্য। মার্কিন মুলুকে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সামনেও ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বুঝিয়ে দিলেন, ভারত যেভাবে অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে কড়া অবস্থান নিতে চায়, আমেরিকা যদি ঠিক একইভাবে কড়া অবস্থান নেয়, তাহলে আপত্তি নেই নয়াদিল্লির।
গত সপ্তাহে হাতে হাতকড়া পরিয়ে, পায়ে শেকল বেঁধে আমেরিকা থেকে ফেরানো হয়েছিল ১০৪ জন ভারতীয়কে। যা নিয়ে দেশজুড়ে সমালোচনা হয়েছে। সরকারকে কাঠগড়ায় তুলে বিরোধীরা বারবার বলেছে, ভারতীয়দের এ করুণ দুর্দশার ছবি সহনীয় নয়। আমেরিকা সফরে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সামনে এ নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ করুক ভারত, দাবি উঠছিল বিরোধী শিবিরের একাংশ থেকে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি করলেন ঠিক উলটোটা।
প্রধানমন্ত্রী সার্বজনীনভাবে অনুপ্রবেশ এবং ‘পাচার’ সমস্যা নিয়ে উদ্বেগপ্রকাশ করে বললেন, “ভারতের দরিদ্র যুবকদের ভুল বুঝিয়ে বিদেশে পাঠানো হচ্ছে। অতি সাধারণ পরিবারের সন্তানদের বড় বড় স্বপ্ন দেখিয়ে ফাঁদে ফেলা হচ্ছে। অনেককে পাচার করে দেওয়া হয়েছে। মানব পাচারের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে কাজ করতে হবে ভারত এবং আমেরিকাকে। পাচারচক্রকে নির্মূল করতে ‘যুদ্ধে’ নেমেছে ভারত।” প্রধানমন্ত্রীর আশা, অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে সর্বতোভাবে সাহায্য করবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
কিন্তু প্রশ্ন হল, ভারতীয়দের হাতে হাতকড়া, কোমরে দড়ি দেখার পরও তার প্রতিবাদ না করে সমর্থন কেন করলেন প্রধানমন্ত্রী? সেভাবে ভারতীয়দের দেশে ফেরানোর প্রস্তাবে রাজি হয়ে মোদি কি বিরোধীদের হাতেই অস্ত্র তুলে দিলেন না? ওয়াকিবহাল মহলের মতে, বিষয়টা একেবারেই তেমন নয়, বরং উলটো। আসলে নরেন্দ্র মোদি অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে ভারতের কড়া অবস্থান বিশ্বমঞ্চে প্রতিষ্ঠা করে এলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সামনে বুঝিয়ে দিলেন, ভারত কোনওভাবেই অনুপ্রবেশকারীদের সঙ্গে আপস করবে না।
আসলে মোদি বরাবর ভারত থেকে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের সরানোর কথা বলে এসেছে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশকারীদের দেশ থেকে বিতাড়নের কথা বলেছেন। যদিও মানবাধিকার প্রশ্নে বিরোধী শিবিরের একটা বড় অংশ এই অনুপ্রবেশকারীদের বিতাড়নের বিপক্ষে। তাঁদের বক্তব্য, মানবাধিকার এবং বিশ্বজনীন ভ্রাতৃত্ববোধ থেকে ভিটেমাটি, চালচুলোহীন অনুপ্রবেশকারীদের পাশে থাকা উচিত। তাতে যদি নিজেদের খানিকটা আপস করতে হয়, তাতেও ক্ষতি নেই। আমেরিকার মাটিতে ভারতীয় অনুপ্রবেশকারীদের নিয়ে কড়া অবস্থান না নিলে এই বিরোধীরাই নতুন অস্ত্র পেয়ে যেতেন। আগামী দিনে হয়তো ভারত থেকে অনুপ্রবেশকারীদের বিতাড়নের চেষ্টা হলে বিরোধিতা আরও তীব্র হত, সেক্ষেত্রে যুক্তি দেওয়া হত, আমেরিকা থেকে অনুপ্রেবশকারীদের ফেরানোর বিরোধিতা করেছিল ভারতও। সেই অস্ত্র বিরোধীদের থেকে কেড়ে নিলেন মোদি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.