Advertisement
Advertisement

ধৈর্য ধরে চিনের মোকাবিলা, মাসুদ ইস্যুতে নয়া কৌশল ভারতের

জইশ প্রধানের বিরুদ্ধে ফের অভিযানের ইঙ্গিত সেনাপ্রধানের৷

India will Show Patience in Dealing With China on Blocking Masood Azhar

ফাইল ফটো

Published by: Tanujit Das
  • Posted:March 17, 2019 10:56 am
  • Updated:March 17, 2019 10:56 am

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জইশ-ই-মহম্মদ প্রধান মাসুদ আজহারকে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী তকমা দেওয়ার প্রস্তাবে রাষ্ট্রসংঘে চিনের বাধাদানে ভারত ধৈর্য দেখালেও, সন্ত্রাসবাদ নিয়ে নিজের অবস্থানের সঙ্গে ভারত কোনও সমঝোতা করবে না। ফ্রান্স ও ব্রিটেনকে সঙ্গে নিয়ে আমেরিকার নতুন করে রাষ্ট্রসংঘের সামনে সুপারিশে শুক্রবার চিন চিরাচরিতভাবে বাধা দেওয়ার পর শনিবার সরকারের একটি সূত্র এমনটা জানিয়েছে। অর্থাৎ, মাসুদ ইস্যুতে চিনের ভূমিকায় ধৈর্য ধরে ‘ধীরে চলো’ নীতি নিয়ে চলারই পক্ষপাতী ভারত। চিনের এই ভূমিকায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে আমেরিকা, ব্রিটেন ও ফ্রান্সও। তবে মাসুদকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি ঘোষণা করতে আর চিনের সম্মতির জন্য অপেক্ষা করতে রাজি নয় পশ্চিমি কূটনৈতিক মহল। বরং বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্য আলোচনা চায় তারা। সেই মতো প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে।

[ডেডলাইন ২০৩০, বিশ্ববাসীকে প্লাস্টিক বর্জনের আহ্বান রাষ্ট্রসংঘের ]

Advertisement

ভারত-এর পাশাপাশি পাকিস্তানের উপর চাপ বাড়াতে কূটনৈতিক ও সামরিক শক্তি ব্যবহারের দিকেও গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলের নিষিদ্ধ তালিকা এবং নয়াদিল্লির ‘মোস্ট ওয়ান্টেড লিস্টে’ থাকা দাউদ ইব্রাহিম ও সইদ সালাউদ্দিনকে দ্রুত ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এদিনই সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত বলেছেন, মাসুদ আজহারের বিরুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পরিকল্পনা তৈরি হয়ে গিয়েছে। তবে সেই পরিকল্পনা প্রকাশ্যে আনা যাবে না। কিন্তু তিনি এটা স্পষ্ট করেছেন যে সেনার কার্যকলাপকে কোনওভাবেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত করা উচিত নয়। এদিন উত্তরপ্রদেশের লখনউতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত। সেখানেই মাসুদকে নিয়ে মন্তব্য করেন তিনি। ফলে এবার প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি ভারত আবার কোনও এয়ার স্ট্রাইক করবে? যে স্ট্রাইকেই খতম হবে মাসুদ আজহার! এদিকে, যে মাসুদ আজহারকে নিয়ে এত কাণ্ড, সেই জইশ-প্রধান নিজেদের ‘প্রোপাগান্ডা’ পত্রিকায় দাবি করেছে যে, বালাকোটে ভারতীয় বায়ুসেনার বোমাবর্ষণে তাদের কোনও ক্ষতি হয়নি। তারা সবাই জীবিত ও সম্পূর্ণ সুস্থ আছে।

Advertisement

[ক্রাইস্টচার্চের আক্রান্ত মুসলিমদের পাশে দাঁড়াল শিখ সম্প্রদায়]

এনিয়ে গত এক দশকে মোট চারবার মাসুদ আজহারের নামটি রাষ্ট্রসংঘের বিশ্ব সন্ত্রাসবাদী তালিকায় রাখার ব্যাপারে বাধা দিল বেজিং। শুধু তাই নয়, মাসুদ আজহারের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ব্যাপারেও রাষ্ট্রসংঘের কাছে তাদের আপত্তি জানিয়েছে চিন। ভারতের একটি সূত্র জানিয়েছে, এই বিষয়টি নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে চিনের কিছু ‘বোঝাপড়া’ রয়েছে। ভারত এই ব্যাপারটিতে সাবধানি হলেও আত্মবিশ্বাসী যে, মাসুদ আজহারকে ওই বিশ্ব সন্ত্রাসবাদী তালিকাতেই ফেলা হবে। রাষ্ট্রপসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ১৫টি সদস্য দেশের মধ্যে ১৪টি দেশই এই ইস্যুতে ভারতকে তাদের সমর্থন জানিয়েছিল। কিন্তু চিনের বাধার ফলে মাসুদ আজহার নিয়ে রাষ্ট্রসংঘের সিদ্ধান্ত পিছিয়ে গেল আরও ছ’মাস। রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সমস্ত সদস্য দেশের কাছেই মাসুদ আজহার সম্বন্ধে বিবিধ জরুরি তথ্য সরবরাহ করবে ভারত, যাতে তার বিরুদ্ধে কঠোরতম সিদ্ধান্তটি ঠিকভাবে নেওয়া যায়। মাসুদ আজহার নিয়ে চিনের ভূমিকায় ভারতীয় বিদেশমন্ত্রকের পক্ষ থেকে ঘটনাটিকে ‘হতাশাজনক‘ বলে অভিহিত করা হয়েছে।

[ভারতের বিরুদ্ধে তালিবানকে অস্ত্র করতে চাইছে আইএসআই!  ]

১৪ ফেব্রুয়ারি জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার পর নতুন করে মাসুদ আজহারকে বিশ্ব সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা করতে রাষ্ট্রসংঘে প্রস্তাব দেয় আমেরিকা, ফ্রান্স এবং ব্রিটেন। এবার চিন পদ্ধতিগত ত্রুটি তুলে প্রস্তাবটিকে আটকে দিয়েছে। একটি কূটনৈতিক সূত্র বলছে, সরাসরি প্রস্তাব আটকে দিলে হাজারটা প্রশ্ন উঠত। তাই ঘুরপথে প্রস্তাব আটকেছে চিন। ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে এমনটাই করেছিল তারা। চাইলে ন’মাস পর্যন্ত প্রস্তাবটি আটকে রাখা যাবে। এতে হাতে কিছুটা সময়ও পাওয়া যাবে, আবার প্রস্তাবটি বাতিলও করে দেওয়া যাবে শেষমেশ। তবে এবার আর চিনকে সেই সুযোগ দিতে চায় না ওই তিন দেশ। কূটনৈতিক মহল মনে করছে, বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রসংঘে প্রকাশ্য আলোচনাসভা বসলে, প্রকাশ্যে ভোটদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে, চিনের অভিসন্ধি বুঝতে আর কারও বাকি থাকবে না। তা সত্ত্বেও নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকলে জবাবদিহি করতে হবে তাদের। বাকি সদস্য দেশগুলি যখন মাসুদের মতো জঙ্গিকে নিষিদ্ধ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে, একমাত্র তারাই কেন ওই জঙ্গিকে সমর্থন করছে, সাধারণ মানুষকে তার জবাব দিতেই হবে চিনকে।

সম্প্রতি বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ পাকিস্তানের প্রতি বার্তা দিয়েছিলেন, “পাক প্রধানমন্ত্রী যদি উদার হন, তা হলে পুলওয়ামা কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত মাসুদ আজহারকে আমাদের হাতে তুলে দিন।” সন্ত্রাসে মদত ও আলোচনা-দুই প্রক্রিয়া একসঙ্গে যে চলতে পারে না, তা স্পষ্ট করেছে নয়াদিল্লি। সেই অবস্থানে অনড় থেকে এবার ফের পাকিস্তানের উপর চাপ বাড়াল ভারত। প্রতিবেশী দেশের কাছে শনিবার নতুন দাবি করল মোদি সরকার, “আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী দাউদ ইব্রাহিম ও সইদ সালাউদ্দিনকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হোক।” দুই ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ পাকিস্তানে লুকিয়ে থাকার প্রমাণও ইসলামাবাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ভারতের উপর বিশ্বাস না থাকলে, সেই প্রমাণ আন্তর্জাতিক মহলে যাচাই করিয়ে নেওয়ার কথাও জানানো হয়েছে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ