সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গাজাকে কেন্দ্র করে ইরান-ইজরায়েল সংঘাত এবার সরাসরি যুদ্ধের রূপ নিয়েছে। শুক্রবার ভোরে কয়েক ডজন ইজরায়েলি বিমান গোটা ইরানজুড়ে একাধিক সামরিক ও পারমাণবিক ঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম ইরানের প্রধান ইউরেনিয়াম প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র নাতাঞ্জ। ইজরায়েলের তরফে জানানো হয়েছে, ইরানের পরমাণু বোমা তৈরি রোখার উদ্দেশেই ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ শুরু করেছে তারা। তবে রিপোর্ট বলছে, ইজরায়েল চেষ্টা করলেও ইরানের পরমাণু গবেষণা কেন্দ্র ধ্বংস করা তাদের পক্ষে বেশ কঠিন।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, পাহাড়কে ঢাল করে তৈরি হয়েছে ইরানের এইসব ইউরেনিয়াম প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র। যা ধ্বংস করার মতো মারণাস্ত্র ইজরায়েলের কাছে নেই। যদি একান্তই ইজরায়েল চায় এগুলি ধ্বংস করতে সেক্ষেত্রে মার্কিন অস্ত্রভাণ্ডারের সাহায্য নিতে হবে তাদের। এক নজরে দেখা নেওয়া যাক ইরানের এই পরমাণু গবেষণা কেন্দ্রগুলির নিরাপত্তা বলয়।
নাতাঞ্জ: ইস্ফাহানে অবস্থিত এই গবেষণা কেন্দ্রকে ইরানের সবচেয়ে বড় ইউরেনিয়াম প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র বলে মনে করা হয়। মাটির নিচে রীতিমতো বাঙ্কার তৈরি করে তার ভেতরে চলে গবেষণা। এর চারপাশে কয়েক মিটারের কংক্রিটের ও পাথরের দেওয়াল এই কেন্দ্রকে নিরাপত্তা দেয়। এর আগে বহুবার এখানে সাইবার অ্যাটার্ক হয়েছে ঠিকই তবে প্রাকৃতিকভাবে এর নিরাপত্তাবলয় যে কোনও বড় হামলা থেকে এই কেন্দ্রকে রক্ষা করে।
ফোরদো: নাতাঞ্জের পর পারমাণবিক গবেষণাকেন্দ্র হিসেবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণস্থান তেহরানের দক্ষিণে কোম শহরে অবস্থিত ফোরদো। ২০০৯ সালে পাহাড় খুঁড়ে এটি নির্মাণ করা হয়। যে কোনওরকম ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে এই কেন্দ্রকে সুরক্ষা দেয় জগদ্দল পাহাড়। প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এই স্থাপনার আকার ও পরিকাঠামোকে ‘শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচির পক্ষে বেমানান’ বলে উল্লেখ করেন। এছাড়া ইসফাহানে ইউরেনিয়ামের প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র রয়েছে। খোন্দাবে রয়েছে হেভি ওয়াটার রিঅ্যাক্টর। যেখানে সুবিধামতো প্লুটোনিয়াম উৎপাদন করার সম্ভাবনা রয়েছে। যা পরমাণু বোমা তৈরির আর একটি পথ। তেহরানে রয়েছে গবেষণা চুল্লি। এবং বুশেহর হল ইরানের একমাত্র কার্যকর বেসামরিক পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। যা রাশিয়ার সাহায্যে তৈরি করেছে ইরান।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, ফোরদো পাহাড়ের ৬০ থেকে ৯০ মিটার গভীরে অবস্থিত। নাতাঞ্জে অন্তত ১০০ মিটার গভীরে অবস্থিত। ফলে এইসব পরমাণু কেন্দ্র ধ্বংস করা ইজরায়েলের কম্ম নয়। এখানে মারণ আঘাত হানতে গেলে প্রয়োজন ভারী বাঙ্কার-বাস্টার বোমার। যা কংক্রিট বা পাথরের আবরণ ভেদ করে নিচে আঘাত হানতে পারে। তবে সেই অস্ত্র ইজরায়েলের কাছে নেই। রয়েছে আমেরিকার হাতে।
উল্লেখ্য, ইরানের পরমাণু অস্ত্র তৈরির পরিকল্পনায় প্রতিবার বাধা দিয়ে গিয়েছে ইজরায়েল। দাবি করা হয়, কখনও সাইবার অ্যাটাক তো কখনও ইরানের বিজ্ঞানীদের অজ্ঞাত হামলায় মৃত্যুর ঘটনায় বারবার উঠে এসেছে ইজরায়েলের নাম। তবে ইরানের বুকে সরাসরি হামলা ইজরায়েলের জন্য যথেষ্ট কঠিন কারণ, ইরান থেকে ইজরায়েলের দূরত্ব প্রায় ১০০০ কিমি। সেক্ষেত্রে একার পক্ষে লড়াই চালিয়ে ইরানের পরমাণু কেন্দ্র ধ্বংস ইজরায়েলের জন্য কঠিন। এদিকে হামলার পর ইরানও নিজেদের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। ফলে গোপনে অতর্কিত হামলা চালানো যথেষ্ট কঠিন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.