সুকুমার সরকার, ঢাকা: সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে পালিয়ে এসে গত কয়েক মাস ধরে বান্দারবানের ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে শূন্য রেখায় অবস্থান নিয়ে থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্যে একটি পরিবার নিজ জন্মভূমি রাখাইনে মায়ানমার সরকারের আশ্রয় কেন্দ্রে ফিরে গিয়েছে। পাঁচজনের ওই পরিবারটি শনিবার রাতে রাখাইনের তংপিওলেতেয়া অভ্যর্থনা ক্যাম্পে পৌঁছায়। তবে তাদের এই প্রত্যাবর্তন বাংলাদেশ-মায়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তির আওতায় নয় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মহম্মদ আবুল কালাম। তিনি জানান, প্রায় সাত হাজার রোহিঙ্গা ঘুমধুম ইউনিয়নে তুমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখায় অবস্থান করছে। তাঁরা বাংলাদেশ সরকারের নিবন্ধনের আওতায় আসেননি। নো-ম্যানস ল্যান্ডে যারা আছে তারা প্রত্যাবাসন চুক্তির অধীনে নয়, কারণ তাঁরা শূন্যরেখায় মায়ানমারের অংশে রয়েছে। তবে কক্সবাজারের ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার আগে শূন্যরেখায় যারা আছে, তাদেরও ফিরিয়ে নেওয়ার দাবি রয়েছে বাংলাদেশের।
নো-ম্যানস ল্যান্ডে অবস্থান থেকে আখতার আলম ফিরে গিয়েছেন। তিনি এক সময় মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের তুমব্রুর স্থানীয় চেয়ারম্যান ছিলেন। কয়েক মাস আগে তিনি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পালিয়ে এসে শূন্যরেখায় অন্য রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আশ্রয় নিয়েছিলেন। শূন্যরেখায় থাকা একজন রোহিঙ্গা সদস্য জানান, আখতার স্বেচ্ছায় ফেরত গিয়েছে। মায়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সহায়তায় তাঁরা শনিবার রাতে ঢেকিবনিয়া সীমান্ত পয়েন্ট হয়ে রাখাইনে যান। সেখানে গিয়ে তারা এনভিসি (ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড) সংগ্রহ করেছেন। গতবছর ২৫ আগস্ট রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযান শুরুর পর সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে প্রায় সাত লক্ষ রোহিঙ্গা। তাদের কক্সবাজারের কয়েকটি কেন্দ্রে আশ্রয় দিয়ে রাষ্ট্রসংঘ-সহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তায় জরুরি পরিষেবা দিয়ে আসছে বাংলাদেশ সরকার। ওই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে মায়ানমার। সেই লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে ক্যাম্পে থাকা রোহিঙ্গাদের নিবন্ধনের মাধ্যমে একটি তালিকা তৈরি করেছে। কিন্তু দুই দেশের প্রস্তুতি শেষ না হওয়ায় চুক্তির আওতায় এখনও প্রত্যাবাসন শুরু হয়নি। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মধ্যে যাঁরা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন, তাঁদের বাইরে আরও কয়েক হাজার মানুষ ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে শূন্যরেখায় অবস্থান করে আছেন কয়েক মাস ধরে।
মায়ানমার সেনাবাহিনী এবং সরকারের অনেকেই রোহিঙ্গাদের আখ্যায়িত করে ‘বাঙালি’ হিসেবে। যদিও যুগ যুগ ধরে তারা রাখাইনের ওই এলাকায় বসবাস করে আসছেন। রাষ্ট্রসংঘ বলছে, কক্সবাজারে ক্যাম্পে থাকা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেওয়ার আগে তাদের নাগরিকত্বের বিষয়টির ফয়সালা করতে হবে। পাশাপাশি তারা যাতে স্বেচ্ছায়, নিরাপদে এবং সম্মানের সঙ্গে নিজেদের দেশে ফিরে যেতে পারেন এবং এই প্রত্যাবাসন যাতে আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুসরণ করে হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে সবপক্ষকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.