সুকুমার সরকার, ঢাকা: সু কি-র নির্দেশেই রোহিঙ্গা গণহত্যায় মেতে ওঠে মায়ানমারের সেনা, এমনটাই অনুমান রাষ্ট্রসংঘের। মায়ানমারে গত ২৫ আগস্ট পরবর্তী সহিংসতার জেরে রাখাইন রাজ্যের মোট ৩৫৪টি রোহিঙ্গা গ্রাম ভস্মীভূত করে দিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। এরপরই লাখ লাখ রোহিঙ্গা মায়ানমার থেকে পালিয়ে আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশে এসেছে। স্যাটেলাইটে তোলা ছবি বিশ্লেষণের পর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, রাখাইন রাজ্যে গত অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে আরও ৪০টি গ্রামের বহু ঘরবাড়ি ধ্বংস করা হয়।
একটি বিবৃতিতে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, মায়ানমারে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সেনাবাহিনীর বর্বর নির্যাতনে অনুমোদন ছিল দেশটির ডি-ফ্যাক্টো নেত্রী আং সান সু কি’র। এমনটিই ধারণা করছেন, রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার জেইদ রাদ আল হুসেন। তিনি আরও বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের একসময় বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম- বিবিসির সঙ্গে আলাপকালে তিনি আরও বলেন, যে মাত্রায় এবং যেভাবে সেখানে সামরিক অভিযান চালানো হয়েছে, তা অবশ্যই দেশের উঁচু পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই অভিযানে কয়েক হাজার মানুষ মারা গিয়েছে এবং লাখ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। এজন্য মায়ানমারের নেতাদের একসময়ে গণহত্যার অভিযোগের মুখোমুখি হতে হবে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলছে, স্যাটেলাইট ছবিগুলো প্রমাণ করছে যে, এই ধ্বংসযজ্ঞ এমন সময়েও চালানো হয়েছে, যখন রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে মায়ানমার। ২৩ নভেম্বর ওই সমঝোতা হয়।
মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গত ২৫ আগস্ট থেকে গণহত্যা শুরু হওয়ার পর প্রথম মাসেই অন্তত ৬ হাজার ৭০০ জন রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছিল। বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছে চিকিৎসকদের আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সেবা সংস্থা ডক্টর্স উইদাউট বর্ডার (এমএসএফ)। সংস্থাটি জানিয়েছে, কম করে হলেও অন্তত ৬,৭০০ রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে। এরমধ্যে ৭৩০টি পাঁচ বছরেরও কম বয়সী শিশু। এমএসএফের এক সমীক্ষায় এ তথ্য পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। গত ২৫ আগস্ট ভোরে রাখাইনে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। মায়ানমারের সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত গ্রামগুলো লক্ষ্য করে অভিযান শুরু হয়। এ অভিযানকালে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা, নির্যাতন ও ধর্ষণ করা হয়। ভয়াবহ এ সহিংসতা থেকে প্রাণ বাঁচাতে এ পর্যন্ত আট লক্ষেরও বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। রাষ্ট্রসংঘ রোহিঙ্গাদের ওপর পরিচালিত গণহত্যাকে পাঠ্যপুস্তকে লিখে রাখার জাতিগত নিধনের আদর্শরূপ বলে আখ্যা দিয়েছে। রাষ্ট্রসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মায়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগ করেছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.