সুকুমার সরকার, ঢাকা: গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে অবশেষে বিএনপি চেয়ারপারসন ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখেই রবিবার জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা করেছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট। কেননা দল টিকিয়ে রাখতে তাদের সামনে এছাড়া আর কোন পথ খোলা ছিল না। রাজনীতির মাঠ থেকে নাম মুছে যাবার আশঙ্কা থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই ২৩ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের ঘোষণা করেছে প্রাক্তন শাসকদল তথা বেগম খালেদা জিয়ার বিএনপি। কেননা ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি আত্মাভিমান দেখিয়ে নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার স্বামী জেনারেল জিয়ার হাতে গড়া দল বিএনপি যে সর্বনাশ করেছিল তার আর পুনরাবৃত্তি করতে মোটেই নারাজ। সংসদের বাইরে থেকে দলটি দেশের মানুষের কাছ থেকে দূরেই সরে থাকতে বাধ্য হয়। যে কারণে অসংখ্যবার সরকার বিরোধী আন্দোলন ডেকেও ব্যর্থ হয়। উচ্চ আসনের নেতারা আয়েশে দিন কাটালেও মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা হাত গুটিয়ে বসে থেকে হতাশায় দিন কাটায়। ভুল-ভ্রান্ত দেখে কর্মীদের একটি বড় অংশ দল ছেড়ে চলে যায়। দেশের মানুষের মনোভাব বুঝতে পেরে আজ, রবিবার দুপুরে গণফোরাম-সহ কয়েকটি দলের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা করে। তবে এক মাস তফসিল পিছিয়ে দেওয়ার দাবিও জানিয়েছে তারা।
[খেলা চালিয়ে যাও, বিশ্বকাপের আগে শাকিবকে পরামর্শ হাসিনার]
রবিবার ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদিক সম্মেলন ডেকে নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগির। বিএনপির নির্বাচনী সঙ্গী ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন নির্বাচনে যাওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেন। সঙ্গে ছিলেন জোটের অন্য শীর্ষ নেতারাও। গত কয়েকদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল, বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচনে যাবে এই রাজনৈতিক জোট। অবশেষে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এল। যদিও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে সরকারকে সাত দফা দাবি দিয়েছিল বিএনপি-গণফোরাম-জেএসডি-কৃষক শ্রমিক জনতা লিগ-নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ে গঠিত নতুন রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সরকারের সঙ্গে দাবিগুলো নিয়ে দুই দফা আলোচনাও করেছিল। কিন্তু বিরোধী এই জোটের দাবিগুলো ও কিছু প্রস্তাবনা নাকচ করে দেয় সরকার। এদিকে আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন (ইসি) চাইলে তফসিল পিছোতে পারে। এটা ইসির বিষয়। পিছোলেও দলীয়ভাবে আপত্তি জানাবে না আওয়ামি লিগ। তবে এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গেও আলাপ-আলোচনার প্রয়োজন আছে।’
রবিবার ধানমণ্ডিতে আওয়ামি লিগের সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, নির্বাচন পিছানোর বিষয়টা ইসির। তারা পিছোবেন কি না সেটা তাদের বিষয়। শিডিউলের বিষয়টা সম্পূর্ণভাবে ইসির এখতিয়ার। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা-না-করা নিয়ে বাংলাদেশের বিরোধীদল বিএনপির নেতারা শনিবার নিজেদের মধ্যে এবং তাদের শরিকদলগুলোর সঙ্গে কয়েকটি বৈঠক করে। জোটের সমন্বয়ক ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ রবিবার দুপুর সোয়া ১টায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ২৩ ডিসেম্বরের একদিন পর বড়দিন-সহ অন্যান্য কারণে তফসিল একমাস পিছানোর দাবি করছি। এসময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান-সহ ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
[রাজনৈতিক সংঘর্ষে উত্তাল ঢাকা, মৃত ২]
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কৃষক শ্রমিক জনতা লিগের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খোন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরি, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মহম্মদ মনসুর, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত রায়চৌধুরি, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, জেএসডি সহ-সভাপতি তানিয়া রব ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক রতন প্রমুখ।