Advertisement
Advertisement

পরিণতি খারাপ হবে, ভিডিও বার্তায় হাসিনাকে হুমকি রোহিঙ্গা যুবকের

মালয়েশিয়া থেকে ভিডিও বার্তায় শেখ হাসিনাকে হুমকি দেয় আবদুল খালেক।

youth threaten Sheikh Hasina from Malaysia

ফাইল ফটো

Published by: Soumya Mukherjee
  • Posted:March 9, 2019 1:52 pm
  • Updated:March 9, 2019 1:52 pm

সুকুমার সরকার, ঢাকা: এবার আশ্রয়দাতাকেও হুমকি দিল এক রোহিঙ্গা যুবক। ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হুমকি দেওয়া ওই যুবকের নাম আবদুল খালেক। শুক্রবার কুতুপালং ক্যাম্পের ডা জাফর আলম ডিপু ওই যুবকের পরিচয় নিশ্চিত করে বলেন, আবদুল খালেকের বাবার নাম আবদুস সালাম। তিনি মায়ানমারের বলীবাজার ধুমবাই এলাকার হুয়াক্কাট্ট (চেয়ারম্যান) ছিলেন। খালেকের বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই। আট ভাইয়ের মধ্যে এক ভাই থাকে থাইল্যান্ডে আর ছয় ভাই থাকে উখিয়ার তিনটি ক্যাম্পে। ছয় ভাইয়ের মধ্যে থাইংখালি তাজনিমারখোলা ক্যাম্পে থাকে আলি আহমেদ ও আলি হোসেন, বালুখালি ১ নম্বর ক্যাম্পে থাকে মহম্মদ হোসেন ও জাহাঙ্গীর আলম এবং বালুখালি ২ নম্বর ক্যাম্পে থাকে ফয়সাল ও হাছান। আর আবদুল খালেক সপরিবারে দীর্ঘদিন ধরে মালয়েশিয়া বাস করছে।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হুমকি দিয়ে ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রকাশ করে ওই যুবক। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, একটি গাড়িতে বসে আবদুল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আরাকানি ভাষায় ‘পরিণতি খারাপ হবে’ বলে হুমকি দিচ্ছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের যত উঁচু দালানকোঠা আছে তা ধ্বংস করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেবে বলেও জানিয়েছে। অথচ ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে মানবতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে বিশ্বে প্রশংসিত হয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখন রোহিঙ্গাদের মর্যাদাপূর্ণ ও স্বেচ্ছা প্রত্যপর্ণ নিশ্চিত করা তাঁর দেশের জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ। এ জন্য আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ে গলদঘর্ম হতে হচ্ছে। কারণ রোহিঙ্গাদের আশ্রয়, খাবার, চিকিৎসা ও নিরাপত্তার জন্য ব্যয় করতে হচ্ছে বিপুল অর্থ। সেই সঙ্গে মোকাবিলা করতে হচ্ছে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জের। তবে দিন যত যাচ্ছে কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের একটি বড় অংশ নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ছে। ফলে বাড়ছে অপরাধ।

Advertisement

Rohingya

Advertisement

ছিনতাই, অপহরণ ও খুনের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গাদের একটি চক্র। তাদের উৎপাতে ধৈর্য হারাচ্ছে স্থানীয়রা। উচ্ছৃঙ্খল রোহিঙ্গাদের বেপরোয়া আচরণে স্থানীয়রা পড়েছে হুমকির মুখে। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ভণ্ডুল করতে ক্যাম্পের ভিতরে এই ‘সন্ত্রাসী চক্র’ তৈরি করেছে মায়ানমার সেনাবাহিনী। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও। গোপনে সক্রিয় ‘সন্ত্রাসী চক্র’ এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের। খালেদ গত বৃহস্পতিবার ওই ভিডিওতে হুমকি দিয়ে বলেছে, রোহিঙ্গাদের কোনও ক্ষতি করলে, জোর করে দেশে ফেরত পাঠালে বাংলাদেশ সরকারের সব দপ্তর এক রাতেই ধ্বংস করে দেওয়া হবে।

[আন্তর্জাতিক নারী দিবসের আকর্ষণ, সন্ধ্যা নদীতে মহিলাদের বাইচ প্রতিযোগিতা]

গত ২২ ফেব্রুয়ারি টেকনাফে র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ খতম হয় দুর্ধর্ষ রোহিঙ্গা ডাকাত নুরুল আলম (৩০)। টেকনাফের নয়াপাড়া রোহিঙ্গা শিবিরের আনসার ক্যাম্পে হামলা, অস্ত্র লুট ও কমান্ডার হত্যার মূল হোতাও ছিল এই নুরুল। সে না থাকলেও তার বাহিনীর দাপট মোটেও কমেনি। তারা পরের দিনই এই হত্যার বদলা হিসেবে রোহিঙ্গা পল্লী চিকিৎসক মহম্মদ হামিদকে খুন করে। এ ঘটনার মাত্র তিনদিন পর নয়াপাড়া ক্যাম্পে মহম্মদ জয়নাল (২২) নামে আরও একজনকে হত্যা করেছে একদল রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী। জয়নাল ছিল এই ক্যাম্পের নিরাপত্তা কর্মী। পুলিশের সোর্স সন্দেহে তাকেও হত্যা করা হয়েছে।

[বাতাসে বিষ! দূষণ তালিকায় দিল্লির পরই স্থান ঢাকার  ]

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন রোহিঙ্গা জানান, নয়াপাড়া ক্যাম্পের পিছনের পাহাড়ে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদের দুটি গ্রুপ আস্তানা গেড়েছে। দিনে পাহাড়ে আর রাতে ক্যাম্পে চষে বেড়ায় তারা। আবদুল হাকিম ও মহম্মদ হাসান এই দুই গ্রুপের নেতা। খুন, ধর্ষণ, ইয়াবার কারবার, মানব পাচার ও অপহরণ এমন কোনও অপরাধ নেই যা তারা করছে না। গত মাসে তাদের হাতে খুন হয়েছে ওই ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মহম্মদ ইলিয়াস। এর আগে একই ক্যাম্পে মহম্মদ ইয়াসের নামে এক রোহিঙ্গা তরুণকে গুলি করে মারা হয়। উখিয়ার কুতুপালং ক্যাম্পে ২৮ ফেব্রুয়ারির হামলায় জার্মানির দুই সাংবাদিক আহত হওয়ার ঘটনায় একদল রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী জড়িত ছিল। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে উঠে এসেছে, অর্থ ও মূল্যবান মালপত্র ছিনিয়ে নেওয়াই ছিল এই হামলার উদ্দেশ্য। তবে সাধারণ রোহিঙ্গাদের অনেকে জানান, তাঁরা আশ্রয় শিবিরে এমন জীবন কাটাতে চান না। স্বদেশে ফিরতে চান। কিন্তু, গজিয়ে ওঠা সন্ত্রাসীদের ভয়ে তাঁরা মুখ খুলতে পারেন না। এই সন্ত্রাসী চক্রটি প্রত্যাবাসনের বিরুদ্ধে। প্রত্যাবাসনের পক্ষে কথা বলায় বালুখালি ক্যাম্পের হেড মাঝি আরিফ উল্লাহকে গত বছর ১৮ জুন গলা কেটে হত্যা করা হয়। পরে এই রোহিঙ্গা নেতার পরিবারের সদস্যরা ভয়ে টেকনাফের লেদায় পালিয়ে যান। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের একটি অংশকে প্রত্যাবাসনের বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে মায়ানমার সেনাবাহিনী গোপনে কাজ করছে। ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের মধ্যে একটি দালাল গ্রুপ তৈরি করে বিপুল অর্থ ব্যয় করছে।

কক্সবাজার জেলা পুলিশের এক পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে, গত ১০ মাসে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী চক্রের হাতে ২৩টি খুন হয়েছে। আর ক্যাম্প থেকে উদ্ধার হয়েছে ২৩টি অস্ত্র ও বিপুল পরিমাণ মাদক। এ ব্যাপারে উখিয়ায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আন্দোলনের নেতা মাহমুদুল হক চৌধুরি বলেন, রোহিঙ্গারা এখন দেশের জন্য বিষফোঁড়া। তাদের কারণে এখন চরম বিপদে রয়েছে প্রায় ২ লক্ষ স্থানীয় মানুষ। দিন দিন রোহিঙ্গারা সহিংস হয়ে উঠছে। কক্সবাজারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবুল কালাম বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে আসলে কত সময় লাগবে, তা নিয়ে সবাই উদ্বেগে রয়েছে। কক্সবাজার পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ ইকবাল হোসেন বলেন, যতই দিন যাচ্ছে, রোহিঙ্গাদের আচার-আচরণে ততই পরিবর্তন আসছে। তারা বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে যাচ্ছে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ